গাজীপুরে অস্ত্রোপচারের পর প্রসূতির মৃত্যু : ৭ লাখ টাকায় আপসের চেষ্টা
- গাজীপুর সংবাদদাতা
- ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ০০:০০
গাজীপুর সিজারিয়ান অপারেশনের পর এক প্রসূতির মৃত্যুর অভিযোগ পাওয়া গেছে। ঘটনার পর চিকিৎসকসহ হাসপাতালের লোকজন গা ঢাকা দিয়েছে। তবে একটি প্রভাবশালী মহল বিষয়টি ধামাচাপা দিতে দেন-দরবার এবং মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে আপস-রফার চেষ্টা করছে।
নিহতের নাম জাহানারা আক্তার সুমি (২৫)। সে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের কাজীবাড়ি এলাকার জরিপ হোসেনের স্ত্রী এবং গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার লোহাগাছিয়া গ্রামের জয়নাল আবেদিনের মেয়ে।
নিহত প্রসূতির বাবা জয়নাল আবেদিন ও স্বজনেরা জানান, এক সন্তানের জননী সুমি দ্বিতীয়বার গর্ভবতী হয়ে গাজীপুর শহরে ডা: ফারহানা করিম সেতুর কাছে চিকিৎসা নিতেন। গত মঙ্গলবার বিকেলে প্রসবব্যথা দেখা দিলে স্বজনেরা সুমিকে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের জয়দেবপুরে মানিক ভবনে কেয়ার অ্যান্ড কিউর হাসপাতালে নিয়ে যান। পরে ওই রাতে সুমিকে অপারেশন করেন চিকিৎসক সেতু। অপারেশনের আগে ডা: সেতুর স্বামী অ্যানেসথেসিয়া চিকিৎসক মো: জিল্লুর রহমান সুমিকে অচেতন করে। পরে অপারেশন করে সুমির গর্ভ থেকে নবজাতককে জীবিত অবস্থায় বের করে আনলেও সুমির আর জ্ঞান-চেতনা ফিরে আসেনি। এমতাবস্থায় সুমির শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটতে থাকলে হাসপাতাল থেকে জানানো হয়, এ হাসপাতালে আইসিইউ নেই, তাই রোগীকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকার উত্তরায় বাংলাদেশ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠাতে হবে। এর জন্য টাকার প্রয়োজন হবে। সুমির বাবা টাকা আনতে ওই হাসপাতাল থেকে বাসায় গেলে সুমিকে তারা মুমূর্ষু অবস্থায় অ্যাম্বুলেন্সে করে ঢাকার উত্তরার বাংলাদেশ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠিয়ে দেয়। পরে রাত ১২টায় বাংলাদেশ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হলে চিকিৎসক সুমিকে মৃত ঘোষণা করেন।
কেয়ার অ্যান্ড কিউর হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো: আজিজুল হাকিম জানান, এ হাসপাতালে আইসিইউ বা সিসিইউ নেই। উন্নত পোস্ট অপারেটিভ ব্যবস্থাও নেই। তাই প্রসূতিকে ঢাকায় পাঠানো হয়েছিল।
নিহতের মা মিনারা খাতুনের দাবি, হাসপাতালের চিকিৎসক এবং কেয়ার অ্যান্ড কিউর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের অবহেলা এবং ভুল চিকিৎসায় তার প্রসূতি মেয়ের মৃত্যু হয়েছে। এর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন।
নিহতের মামা আব্দুস সাত্তার জানান, ঢাকায় সুমিকে পাঠানোর পর থেকে হাসপাতালের কর্মকর্তা ও চিকিৎসকরা গা ঢাকা দিয়েছেন।
হাসপাতালে তার স্বজনেরা গিয়ে ফটকে তালা ঝুলতে দেখেন। পরে ডাকাডাকি করলে ভেতর থেকে একজন আয়া বের হয়ে জানান, হাসপাতালে কেই নেই। পরদিন একটি প্রভাবশালী মহল ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বিষয়টি রফা করতে সাত লাখ টাকা দেয়ার জন্য দেন-দরবার করছেন। তবে হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আজিজুল হক বিষয়টি টাকায় দফা-রফার কথা অস্বীকার করেছেন।
এ ব্যাপারে অ্যানেসথেসিয়া চিকিৎসক মো: জিল্লুর রহমান জানান, অপারেশনের পর সুমির প্রেসার ফল করে। পরে আর তার উন্নতি হচ্ছিল না বলে তাকে ঢাকায় পাঠানোর পরামর্শ দেয়া হয়। তিনি ঢাকা মেডিক্যাল কলেজে অ্যানেসথেসিওলজিস্ট হিসেবে কর্মরত আছেন। তার স্ত্রী ডা: সেতু ঢাকা কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের গাইনি কনসালট্যান্ট। তারা দু’জনেই ঢাকা থেকে গাজীপুরে ওই হাসপাতালে চিকিৎসা করতে যান। তবে সেতুর মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তার মোবাইল ফোনটি বন্ধ পাওয়া গেছে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা