একুশ শতকের কয়েকটি ভয়াবহ মহামারি
- নয়া দিগন্ত অনলাইন
- ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ১৭:৫৫, আপডেট: ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ১৮:১৪
বিভিন্ন সময় বিশ্বের বিভিন্ন দেশে মহামারি হয়েছে। ছোট-বড় এসব মহামারির ঘটনায় অসংখ্য মানুষের প্রাণ গেছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা তথ্যমতে ২০১১ থেকে ২০১৭ সালের মধ্যে ১ হাজার ৩০৭টি মহামারি ঘটেছে। এর মধ্যে বেশ কয়েকটি বিপজ্জনক মহামারির কারণে ব্যাপক প্রাণ হানি গটেছে। এ ধরণের কয়েকটি মহামারি সম্পর্কে জানুন।
সার্স
করোনা ভাইরাস সংক্রমণের আগে একুশ শতকের সবচেয়ে ভয়াবহ মহামারী ছিল সিভিয়ার অ্যাকিউট রেসপিরেটরি সিন্ড্রোম। ২০০৩ সালে চীনে এই ভাইরাস দেখা যায়। প্রাণীদের নিয়ে কাজ করা বিভিন্ন ল্যাব থেকে ছড়িয়েছিল এই ভাইরাস। মোট ২৬টি দেশে ছড়ানো এই সংক্রমণে আক্রান্ত হন প্রায় ৮ হাজার জন। মূলত চীনে ছড়ানো এই ভাইরাস আবার ফিরে আসতে পারে বলে বিজ্ঞানীরা মনে করেন। সেক্ষেত্রে নতুন করে চীনে যাওয়া বিষয়ে নিষেধাজ্ঞা জারি করতে পারে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা হু।
চিকুনগুনিয়া
যে এডিস প্রজাতির মশা থেকে ডেঙ্গ ছড়ায়, সেই একই মশার কামড়ে হতে পারে চিকুনগুনিয়। মূলত শহরাঞ্চলে দেখা যাওয়া এই সংক্রমণ প্রথম ধরা পড়ে ১৯৫২ সাল। কিন্তু ২০০৭ সালে নতুন করে গাবনে তা ভয়াবহ আকার ধারন করে। এরপর থেকে, আফ্রিকার পাশাপাশি ভারত, থাইল্যান্ড, মিয়ানমারসহ সারা বিশ্বে ধরা পড়ে। শুধু ২০১৬ সালেই চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্ত হন সাড়ে তিন লাখ মানুষ। ২০১১ থেকে ২০১৭ সালের মধ্যে এই রোগে প্রাণ হারান ১৩৭জন।
ইয়েলো ফিভার
বছরে অন্তত ৪০টি কলেরার ঘটনা ধরা পড়ছে গত দশ বছরে। কলেরা বা ইয়েলো ফিভারের মতো পুরোনো রোগ ঘুরেফিরে আসছে কারণ আক্রান্ত দেশগুলিতে পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। ২০০৯ সালে একুশ শতকের প্রথম ইনফ্লুয়েনজা ভাইরাস (এইচ১এন১) মহামারী ধরা পড়ে। ২০১১ থেকে ২০১৭ সালের মধ্যে কলেরার কারণে মারা গেছেন ৩০৮জন, ইয়েলো ফিভারে ৫৭জন ও ইনফ্লুয়েনজায় ৫১জন।
মেনিনজাইটিস
২০১১ থেকে ২০১৭ সালের মধ্যে মেনিনজাইটিস রোগে মারা যান ১৩৭জন। এর কারণ হিসাবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে অপর্যাপ্ত টিকার কথা। শুধু তাই নয়, পরিচিত সংক্রমণ কয়েক দশক পরপরই নতুনভাবে ফিরে আসতে পারে, যা উন্নত পরীক্ষা ব্যবস্থা না থাকলে ধরা খুব কঠিন।
মিডল ইস্ট রেসপিরেটরি সিন্ড্রোম (মের্স)
২০১৩ সালের জুলাই মাসে পারব আমিরাতে প্রথমবারের মতো ধরা পড়ে মিডল ইস্ট রেসপিরেটরি সিন্ড্রোম বা মের্স। তারপর থেকে সেই দেশে মোট ১২জন মারা গেলেও তা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়তে সময় নেয়নি। এখন পর্যন্ত, দুই হাজার ৫০৬টি কেস ধরা পড়েছে এবং মারা গেছেন ৮৬২টিজন, জানাচ্ছে হু। মের্স ঠেকাতে অন্যান্য পরামর্শের পাশাপাশি হু এর অন্যতম পরামর্শ হচ্ছে উটের দুধ বা মূত্র পান না করা।
ইবোলা
২০১৪ সালে পশ্চিম আফ্রিকার গিনি, লাইবেরিয়া ও সিয়েরা লিওনিতে নতুন করে ছড়ায় ইবোলা ভাইরাস। এর আগে ১৯৭৬ সালে এই সংক্রমণ লক্ষ্য করা হলেও সেইবার তা একটি অঞ্চলের মধ্যেই সীমিত ছিল। কিন্তু একুশ শতকে এই সংক্রমণ আটকানো যায়নি। এই তিনটি দেশ ছাড়াও তিনটি মহাদেশের আরো ছয়টি দেশে পৌঁছে যায় ইবোলা, যা বিশ্বজুড়ে আলোড়ন তোলে। এই সংক্রমণ ছড়ানোর প্রথম দুই মাস তা ধরা না পড়ায় দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে।
জিকা ভাইরাস
২০১৫ সালে ব্রাজিলে এডিস প্রজাতির মশা থেকে ছড়ায় এই বিশেষ ধরনের ভাইরাস। সদ্যোজাত শিশুদের মস্তিষ্কে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি করে এই সংক্রমণ। ব্রাজিল ছাড়া আরো ৭০টি দেশে ছড়িয়ে পড়ে এই মহামারি। মারা যান ১৩৭ জন।
প্লেগ
একুশ শতকেও ফিরে এসেছে প্লেগ রোগ। ২০১৭ সালে আফ্রিকার মাদাগাস্কারে প্লেগে আক্রান্ত হন দুই হাজার ৪১৭জন। প্রাণ হারান ২০৯জন। শুধু তাই নয়, মাদাগাস্কারে যাওয়া বা সেখান থেকে আসা যাত্রীদের ক্ষেত্রেও জারি হয় বিশেষ সতর্কতা। মোট নয়টি দেশে প্লেগ মোকাবিলায় বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হয়।
কোভিড-১৯
চলতি বছরের ডিসেম্বরে চীনের উহার প্রদেশে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ে। এ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ২২ ফেব্রুঅরি শনিবার পর্যন্ত ২ হাজার ৩৬০ জনের মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া চীন থেকে ছড়িয়ে পড়া এই ভাইরাসে বিশ্বব্যাপী আক্রান্ত হয়েছেন ৭৭ হাজারেরও বেশি মানুষ। করোনাভাইরাস থেকে সৃষ্ট রোগকে কোভিড-১৯ নামে উল্লেখ করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। (সূত্র: ডয়সে ভেলে)