২৩ নভেম্বর ২০২৪, ৮ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

চীন ফেরত ৩৬১ জনকে রাখা হবে হজ ক্যাম্পে

চীন ফেরত ৩৬১ জনকে রাখা হয়েছে হজ ক্যাম্পে - ফাইল ছবি

নতুন করোনাভাইরাস সংক্রমণের কারণে চীনের উহান নগরীতে আটকেপড়া ৩৬১ জন বাংলাদেশিকে একটি বিশেষ ফ্লাইটে ঢাকায় ফিরিয়ে আনা হচ্ছে।

শুক্রবার মধ্যরাতের দিকে কোনো এক সময় ঢাকা ফেরার পর তাদের সবাইকে আশকোনো হজ ক্যাম্পে ১৪ দিন পর্যবেক্ষণে রাখা হবে। নিরাপত্তার দায়িত্বে পুলিশের সাথে সেনা সদস্যরাও থাকবেন।

পর্যবেক্ষণের এই সময় তাদের সঙ্গে দেখা করার জন্য স্বজনরা যেন ব্যাকুল না হয়ে পড়েন সেজন্য তাদের ধৈর্য ধরার আহ্বান জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক স্বপন।

তিনি বলছেন, চীন থেকে যারা ঢাকা আসছেন, তাদের খবর সময় সময়ে জানানো হবে। হজ ক্যাম্পে যেন কোনো ধরনের বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির সৃষ্টি না হয়।

উহানে আটকেপড়া বাংলাদেশিদের ফিরিয়ে আনার প্রস্তুতি জানাতে শুক্রবার সকালে ঢাকার শাহজালার আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে এক সংবাদ সম্মেলনে আসেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক, পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী এনামুর রহমান সেখানে উপস্থিত ছিলেন।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী জানান, আশকোনায় পর্যবেক্ষণে যাদের সুস্থ পাওয়া যাবে, তাদের বাড়ি যেতে দেওয়া হবে। আর কেউ অসুস্থ হলে হাসপাতালে নিয়ে যথাযথ চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হবে।

শুক্রবার বিকালে চীনের উদ্দেশ্যে বিমানের একটি বিশেষ ফ্লাইট ছেড়ে যাবে। তবে ঠিক কখন ওই ফ্লাইট ঢাকায় ফিরে আসবে তা নিশ্চিত করে বলতে পারেননি তিনি।

জাহিদ মালেক বলেন, ‘(চীন থেকে যারা ফিরছেন তাদের সঙ্গে) যারা দেখা করার জন্য ব্যাকুল হবেন, আমরা তাদের আহ্বান করব- তারা যেন দেখার জন্য ব্যাকুল না হন, জোরাজুড়ি না করেন। আমরা তাদের টাইম টু টাইম খবর দেব। সে খবর দেয়ার ব্যবস্থাও আমরা করেছি।’

তিনি বলেন, ‘আমাদের ছেলেমেয়েদের আনার জন্য আমরা সম্পূর্ণ প্রস্তুত, তারা দেশের সন্তান, তাদেরকে দেখাশোনা করার দায়িত্ব আমাদের। এটাও আমাদের দায়িত্ব যদি কেউ সংক্রমিত হয় তা যেন ছড়িয়ে না পড়ে, আমাদের দেশ যাতে নিরাপদে থাকে, সেজন্য সমস্ত ব্যবস্থা নিয়েছি।’

পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী অত্যন্ত সংবেদনশীল। ছাত্রছাত্রীদের দুগর্তির কথা শুনে আমাদের নির্দেশ দিয়েছেন তাদের স্বদেশে নিয়ে আসার জন্য। চীন সরকার বলেছিল ১৪ দিন আগে তাদের রিলিজ করবে না। গতকাল আমাদের জানিয়েছে একটা পকেট পেয়েছে যখন আমাদের দেয়া যাবে। সাথে সাথে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন আপনারা নিয়ে আসেন।’

চীন থেকে দেশে ফিরতে ১৯টি পরিবার, ১৮ শিশু এবং দুই বছরের কম বয়সী দুই শিশুসহ ৩৬১ জন নিবন্ধন করেছেন বলে জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী।

তিনি বলেন, ‘খুব সেনসিটিভলি এদের হ্যান্ডেল করব, কোয়ারেন্টাইনে রাখব। এই সময় পরিবারের কেউ যেন দেখা করার চেষ্টা না করেন। এরা কেউ অসুস্থ না, কিন্তু আমরা জানি না… ভ্যাকসিন তৈরি হয়নি।’

মধ্য চীনের উহান শহরে ২০১৯ সালের ৩১ ডিসেম্বর করোনাভাইরাসের প্রথম সংক্রমণ শনাক্ত করা হয়। এ ভাইরাস মূলত শ্বাসতন্ত্রে সংক্রমণ ঘটায়ম এর লক্ষণগুলো হয় অনেকটা নিউমোনিয়ার মত।

নভেল করোনাভাইরাস এর কোনো টিকা বা ভ্যাকসিন এখনো তৈরি হয়নি। ফলে এমন কোনো চিকিৎসা এখনও মানুষের জানা নেই, যা এ রোগ ঠেকাতে পারে। আপাতত একমাত্র উপায় হল, যারা ইতোমধ্যেই আক্রান্ত হয়েছেন বা এ ভাইরাস বহন করছেন- তাদের সংস্পর্শ এড়িয়ে চলা এবং কিছু স্বাস্থ্য বিধি ও পরিচ্ছন্নতার নিয়ম মেনে চলা।

গত এক মাসে কেবল চীনেই দশ হাজার মানুষ এ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে, মৃত্যু হয়েছে ২১৩ জনের।

চীনের বাইরে আরও ১৮ দেশে প্রায় একশ মানুষ নতুন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ায় এবং কয়েক জায়গায় মানুষ থেকে মানুষে ছড়ানোর খবর আসায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা নতুন করোনাভাইরাসের এ প্রাদুর্ভাবকে ‘বৈশ্বিক জরুরি অবস্থা’ ঘোষণা করেছে।

চীনের যে প্রদেশ থেকে এই ভাইরাস ছড়ানো শুরু হয়েছে, সেই হুবেইয়ের বেশিরভাগ এলাকা অবরুদ্ধ করে রাখা হয়েছে গত দশ দিন ধরে। অন্যান্য অঞ্চলের সাথে যোগাযোগ বন্ধ রাখায় প্রায় ৬ কোটি মানুষকে সেখানে আংশিক বা পুরোপুরি অবরুদ্ধ দশার মধ্যে দিন কাটাতে হচ্ছে।

যুক্তরাষ্ট্র, জাপান, অস্ট্রোলিয়া, দক্ষিণ কোরিয়া, সিঙ্গাপুর ও নিউ জিল্যান্ড ইতোমধ্যে তাদের নাগরিকদের উহান ও চীন থেকে সরিয়ে নিতে শুরু করেছে। তবে দেশে ফেরানোর পর তাদের বিশেষ ব্যবস্থায় পর্যবেক্ষণে রাখা হচ্ছে।

উহানে আটকে পড়া কয়েকজন শিক্ষার্থী বৃহস্পতিবার বলেন, সংক্রমণ ও মৃতের সংখ্যা বাড়তে থাকায় তাদের মধ্যে আতঙ্ক বাড়ছে। অবরুদ্ধ দশার মধ্যে ভুগতে হচ্ছে খাদ্য সঙ্কটে। এই অবস্থায় দ্রুততম সময়ের মধ্যে দেশে ফিরতে চান তারা। সেক্ষেত্রে পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও পর্যবেক্ষণের পুরো ধাপ পেরোতেও তারা রাজি।

বেইজিংয়ে বাংলাদেশ দূতাবাসের একজন কর্মকর্তা জানান, উহান ও এর আশেপাশের কয়েকটি এলাকায় অবস্থানরত বাংলাদেশিদের সরিয়ে নিতে তারা প্রস্তুতি নিচ্ছেন। যে কোনো জরুরি প্রয়োজনে যোগাযোগের জন্য বেইজিংয়ে বাংলাদেশ দূতাবাস একটি হটলাইন চালু করা হয়েছে। সপ্তাহে সাত দিন +86 178-0111-6005 নম্বরে ফোন করে চব্বিশ ঘণ্টা সহায়তা পাওয়া যাবে।

এখন পর্যন্ত বাংলাদেশি কেউ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার খবর পাওয়া যায়নি বলেও বলেন জানান ওই কর্মকর্তা।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন বলেন, উহানের সঙ্গে বাংলাদেশের সরাসরি ফ্লাইট নেই, আছে কুংমিংয়ের সঙ্গে। সেখানে যেহেতু পরিস্থিতি এরকম খারাপ না, সেহেতু ফ্লাইট বন্ধ করা হয়নি। তবে এই সময় চীনে না যেতে সবাইকে অনুরোধ করা হচ্ছে।


আরো সংবাদ



premium cement