অনিরাপদ হয়ে উঠেছে রাতের ঢাকা
- আবু সালেহ আকন
- ০৯ জানুয়ারি ২০২০, ০৯:৫৯
বঙ্গভবন এলাকা পার হয়ে মহানগর নাট্যমঞ্চের পাশ দিয়ে গুলিস্তান যাচ্ছিলেন মেহেদী। তখন সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা। হাতে ছিল দোকানের মালামাল। ফুটপাথে পর্যাপ্ত আলো নেই। যেটুকু আলো তাতে ১০ গজ দূরে কে দাঁড়ানো তা বোঝার উপায় নেই। নাট্যমঞ্চের প্রধান গেটের কাছাকাছি যেতেই এক ঝটকায় মেহেদীকে পাশে নিয়ে যায়। এরপর কেড়ে নিয়ে যায় তার হাতের মালামাল।
ওই এলাকার কয়েকজন জানালেন, সন্ধ্যার পরে প্রায়ই মহানগর নাট্যমঞ্চের আশপাশ এলাকায় এমন ঘটনা ঘটছে। অনেক সময় সেখানে নারীরা হেনস্তা হচ্ছেন। কারো হাত অথবা শরীরের কাপড় ধরে টান দেয়ার ঘটনা প্রায়ই ঘটছে। ভুক্তভোগীরা বলেছেন, রাজধানীতে সন্ধ্যার পরে এমন অনেক ঘটনাই ঘটছে যা সাধারণ মানুষের অজানা। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা জানলেও কোনো অভিযোগ না থাকায় তাদেরকেও চুপ থাকতে হয়।
গত বৃহস্পতিবারের ঘটনা। রাত ৮টার দিকে মতিঝিল শাপলা চত্বর হয়ে আরামবাগের দিকে যাচ্ছিলেন শাহেদ নামে এক যুবক। রাস্তার বাঁদিক ধরে তিনি হেঁটে যাচ্ছিলেন। যেদিকটায় তেমন আলো নেই। তবে লোক চলাচল ছিল অনেক। কালভার্টের কাছে রাস্তা খোঁড়ার কারণে ওই স্থানটি দিয়ে স্বাচ্ছন্দ্যে মানুষ চলতে পারছে না। ঠিক কালভার্ট বরাবর কয়েক যুবক দাঁড়িয়ে। শাহেদের হাতের ব্যাগটি ছোঁ মেরে নিয়ে চলে যায়। পথচারীদের অনেকে বলেছেন, এই স্থান দিয়ে সন্ধ্যার পরে পথ চলতে গা ছমছম করে ওঠে। বিশেষ করে কালভার্ট রোড থেকে আরামবাগ পুলিশ বক্স পর্যন্ত রাস্তাটুকু পার হতে পথচারীদেরকে আতঙ্কের মধ্যে থাকতে হয়; যদিও নটরডেম কলেজের পাশে পুলিশের চেকপোস্ট রয়েছে। সাধারণ পথচারীদের কাছে পুলিশের এই চেকপোস্টটি আতঙ্কের। কারণে অকারণে পুলিশ এখানে সাধারণ পথচারীদের গতিরোধ করে নানা প্রশ্ন করে। দেহ তল্লাশি করে।
রাজধানীতে এমন অনেক এলাকা রয়েছে যেসব স্থান দিয়ে সন্ধ্যার পর মানুষ চলতে ভয় পায়। তারপরও মানুষকে ওই সব স্থান দিয়ে চলতে হয়। এমন অনেক এলাকা আছে, যে এলাকায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর টহলদল থাকার কথা থাকলেও সন্ধ্যার পরে তাদের কোনো দেখা মেলে না। রাজধানীর কোনো কোনো এলাকায় দীর্ঘ সড়কও রয়েছে; যে সড়কে সন্ধ্যার পরে মানুষ ভয় পায়। ডেমরার স্টাফ কোয়ার্টার এলাকার বায়জীদ জানান, সন্ধ্যার পরে যাত্রাবাড়ী থেকে ডেমরা রোড হয়ে স্টাফ কোয়ার্টার যেতে মানুষকে চরম ভয়ের মধ্যে থাকতে হয়। সড়কটি দিয়ে অসংখ্য যানবাহন চলাচল করলেও দুই পাশের ঝোপঝাড় আর পুকুর-ডোবা দেখলে মানুষের গা শিউরে ওঠে।
ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের ছাত্রীটি কুর্মিটোলার যে স্থানে ধর্ষণের শিকার হয়েছেন ওই স্থানটিও রাজধানীর একটি ব্ল্যাক স্পট হিসেবেই মানুষের কাছে পরিচিত। কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের আশপাশের নীরব স্থানগুলোতে দুর্বৃত্তদের অবাধ বিচরণ বলে কয়েকজন জানিয়েছেন। ওই এলাকায় একটি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন; এমন এক নারীকর্মী নয়া দিগন্তকে জানিয়েছেন, অফিস থেকে বের হয়ে কয়েকদিন বিব্রতকর পরিস্থিতির মধ্যে পড়তে হয়েছে। আলো-আঁধারির মধ্যে দু’দিন হাত ধরে টান দিয়েছে। একদিন তিনি ভয়ে দৌড় দিয়েছেন। আর তিন দুর্বৃত্ত তাকে পেছনে পেছনে ধাওয়া করেছে। ওই নারীকর্মীর ভাষ্যমতে ঠিক ওই স্থানটিতেই ধর্ষণের শিকার হয়েছেন ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের ছাত্রীটি।
গত রোববার রাতে বান্ধবীর বাসায় যাওয়ার পথে কুর্মিটোলা এলাকায় ধর্ষণের শিকার হন ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের দ্বিতীয় বর্ষের এক ছাত্রী। বাস থেকে নেমে হেঁটে যাওয়ার সময় এক দুর্বৃত্ত ওই ছাত্রীকে মুখ-গলা টিপে পাশের ঝোপের মধ্যে নিয়ে যায়। এরপর তাকে মারধর ও ধর্ষণ করে। রাত ১০টার দিকে মেয়েটির জ্ঞান ফিরলে তিনি বান্ধবীর বাসায় যান। সেখান থেকে তাকে নিয়ে যাওয়া হয় ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। এই পথ হয়ে চলাচল করেন, এমন কয়েকজন বলেছেন, পথটি আসলেই বিপজ্জনক। যে কেউ এই পথে বিপদের শিকার হতে পারেন।
রাজধানীর এমন অনেক এলাকাই রয়েছে, যেখানে সন্ধ্যার পর মানুষের জন্য অনেক বিপদ অপেক্ষা করে। মানবাধিকারকর্মী রেজা বলেছেন, এসব স্থানে কে কখন বিপদের সম্মুখীন হবেন তা বলা মুশকিল। যার কপাল যখন খারাপ হবে, তখনই তিনি শিকারে পরিণত হবেন।
ঢাকা মহানগর পুলিশের মিডিয়া সেলের ডিসি মাসুদুর রহমান বলেছেন, মানুষের নিরাপত্তা দিতে পুলিশের চেষ্টার কোনো কমতি নেই। এরপরও যেসব বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটছে তার জড়িতরা গ্রেফতার হচ্ছে এবং যারা এখনো গ্রেফতার হয়নি তাদেরকে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।