২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ৯ পৌষ ১৪৩১, ২১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

সাত টাকার ডিম চুলা ঘুরে ২০ টাকা

সাত টাকার ডিম চুলা ঘুরে ২০ টাকা - ছবি : নয়া দিগন্ত

শীতে বেড়েছে ডিমের কদর। পথে ঘাটে রাস্তার মোড়ে কিংবা পাড়া মহল্লার দোকানেও দেদারছে বিক্রি হচ্ছে সিদ্ধ ডিম। তবে মজার ব্যাপার হচ্ছে, একটি হাসের ডিমের দাম যেখানে মাত্র ৭ টাকা সেই ডিম চুলা ঘুরে এসেই ক্রেতার পকেট থেকে আদায় করে নিচ্ছে ১৮ থেকে ২০ টাকা। পরিবেশনের ধরণ অনুযায়ী কোনো কোনো দোকানে আবার একটি সিদ্ধ ডিমের দাম কমবেশি হয়।

মুরগীর সিদ্ধ ডিমের দামের ক্ষেত্রেও দেখা গেছে একই চিত্র। সাধারণভাবে মুরগীর সাদা ডিমের দাম হালি প্রতি ২৪ থেকে ২৬ টাকা আর লাল ডিমের দাম প্রতি হালি ২৮ থেকে ৩০ টাকা। কিন্তু সিদ্ধ ডিমের ক্ষেত্রে মুরগীর ডিমও বিক্রি হচ্ছে প্রতি পিস ১২ টাকা থেকে ১৪ টাকা। শীতের কারণে সিদ্ধ ডিমের চাহিদাও বেড়েছে অনেক বেশি। ডিমের এই দাম বাড়ার এ চিত্র এখন রাজধানী ঢাকা শহরসহ দেশের সর্বত্র।

গত তিন দিন ধরে দেশজুরে তীব্র শৈত্যপ্রবাহ শুরু হওয়ার পর বেড়েছে সিদ্ধ ডিমের চাহিদা। বেড়েছে বিক্রিও। পল্টন মোড়ের কাছে উত্তর পাশে প্রিতম ভবনের নিচে সিদ্ধ ডিম বিক্রি করেন নেত্রকোনার ইউনুছ। শীতের তীব্রতা বাড়ার আগে প্রতিদিন সকালে এবং বিকেলে গড়ে তিনি ১২০ থেকে দেড়শ সিদ্ধ ডিম বিক্রি করতেন। এখন প্রতিদিন মুরগী আর হাস মিলিয়ে ডিম বিক্রি করছেন ১০ কেস। অর্থাৎ দৈনিক আড়াইশ থেকে তিনশ ডিম তিনি বিক্রি করছেন।

নয়া দিগন্তের এই প্রতিবেদককে ইউনুছ জানান, জামালপুর এবং নিজের বাড়ি নেত্রকোনা থেকে হাসের ডিম লোক মারফত নিজেই সংগ্রহ করেন। আর মুরগীর ডিম স্থানীয় কারওয়ানবাজারের এক পাইকার প্রতিদিন সকালে দিয়ে যায়। হাসের ডিম তিনি প্রতি হালি সংগ্রহ করেন পাইকারি ৩০ টাকা। আর মুরগীর লাল ডিম কেনা পড়ে হালি ২৫ টাকা। পথে ঘাটের নানা জায়গার করচাপাতি বাদ দিলেও প্রতি মাসেই তার বেশ ভাল অংকের টাকা মুনাফা হয়। এখন বেশি শীতের কারণে বিক্রিও বেশি হচ্ছে বলে জানান এই ডিম বিক্রেতা।

উত্তররার আব্দুল্লাহপুরে সিদ্ধ ডিম বিক্রি করেন সুমন। বাড়ি গাজীপুরে। সুমন হাসের ডিম সংগ্রহ করেন গাজীপুরের কালিগঞ্জ বাজার ও আশপাশের গ্রাম থেকে। আর মুরগীর ডিম কিনেন টঙ্গীর পাইকারি বাজার থেকে। হাসের ডিম তিনি কিনেন হালি ৩৫ থেকে ৩৮ টাকায় আর মুরগীর ডিম সংগ্রহ করেন হালি ২৬ টাকা। হাড়িতে ডিম সিদ্ধ করে খোসা তুলে তাতে সামান্য লবন মিশিয়ে সুন্দর একটি বাতিতে পরিবেশন করে ক্রেতার সামনে। হাসের ডিম বিক্রি করেন ১৮ টাকা আর মুরগীর ডিম ১২ টাকা। সুমন নিজেও প্রতিদিন প্রায় দেড়শ ডিম বিক্রি করেন।

সুমনের দোকানে জলন্ত চুলার তাপ নিচ্ছেন আর সিদ্ধ ডিম খাছেন হোসেন মিয়া। পেশায় রিকশা চালক। প্রতিদিন সকালে আর বিকেলে তিনি একটি করে হাসের সিদ্ধ ডিম খান। এতে তার শরীরের তাপমাত্র যেমন একটু বাড়ে তেমননি শক্তি পান বলে দাবি করেন হোসেন মিয়া।

এভাবে অনেক ক্রেতাই জানালেন বেশি শীতে সিদ্ধ ডিম খেলে শরীরের তাপমাত্রা বাড়ে। দাম নিয়েও কথা বলেন কেউ কেউ। তারা বলেন, মুরগী এবং হাসের ডিমের কাঁচা ডিমের দামের মধ্যেই অনেক পার্থক্য। তবে সিদ্ধ ডিমের দাম নিয়ে তাদের মধ্যে কোনো প্রতিক্রিয়া নেই। অনেক দোকানী তার সামনে সিদ্ধ ডিমের দামও লিখে রেখেছেন। কাজেই ডিমের দরদাম নিয়েও কোনো বাকবিতন্ডা নেই।

শুধু সিদ্ধ ডিমের দামের ক্ষেত্রেই এই বাড়তি অর্থ নেয়া হচেছ না। কয়েকজন ক্রেতা অভিযোগ করেন, হোটেল রেস্তোরাতেও সারাছরই ডিমের বেশি দাম নেয়া হচ্ছে। সকালে নাস্তার পরোটার সাথে যদি ডিম দেয়া হয় (মামলেট অথবা পোজ) সেটির দামও ২০ টাকার কম নেয়া হয়না। এছাড়া দুপুর কিংবা রাতের ম্যানুতে যদি ডিমের সাথে খানিকটা ঝোল বা একপিস সবজি দেয়া হয় তাহলে তার দাম নেয়া হয় ২৫ টাকা। অর্থাৎ কাঁচা ডিমের দাম যতই হোক না কেনো ডিম যদি চুলাতে একবার উঠতে পারে তাহলে তার দাম বেড়ে যায় কয়েকগুণ। এভাবেই অসিদ্ধ বা কাঁচা ডিম চুলা ঘুরে এলেই তার দাম বেড়ে যাচ্ছে।


আরো সংবাদ



premium cement