প্লাষ্টিক বোতলে ফুলদানি, গৃহ সাজানোর উপকরণ
- শাহেদ মতিউর রহমান
- ১৫ ডিসেম্বর ২০১৯, ১৭:০০, আপডেট: ১৫ ডিসেম্বর ২০১৯, ১৭:০৫
প্রথমে দেখলে মনেই হবে না এগুলো ফেলনা জিনিস প্লাস্টিকের বোতল। আমরা যেগুলোকে প্রতিদিন ফেলনা বলে নিয়মিত গৃহের বাইরে ফেলে দিচ্ছি সেই প্লাস্টিকের বোতল দিয়েই তৈরি করা হয়েছে ফুলদানি আর গৃহ সাজানোর নানা উপকরণ। আর এগুলো দেখতেই আসছে অনেকে, জেনেও নিচ্ছেন তৈরি করার প্রক্রিয়া বা পদ্ধতি। উৎসাহ নিয়ে নিজেরাই এই ফেলনা বস্তু দিয়ে নতুন কিছু তৈরি করার চিন্তাও করছে আগতরা।
আজ রোববার থেকে রাজধানীর মহাখালির টিএন্ডটি মাঠে শুরু হয়েছে ছয় দিনব্যাপী প্লাস্টিক বোতলের প্রদর্শনী। আমাদের প্রতিদিনের ফেলনা প্লাস্টিকের বোতল দিয়ে কিভাবে গৃহ সাজানোর সরঞ্ঝাম বা শো-পিস তৈরি করা যায় তার একটি বাস্তব ধারণা দিতেই এই প্রদর্শনীর আয়োজন করেছে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘বিডি ক্লিন’। আজ রোববার সকালে এই প্রদর্শনীর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেছেন ঢাকা উত্তর সিটির (ডিএনসিসি’র) মেয়র আতিকুল ইসলাম। প্রদর্শনীতে ত্রিশ লাখ প্লাস্টিকের বোতলের এই বিশাল প্রদর্শনী চলবে ২০ ডিসেম্বর বিকেল পর্যন্ত।
আয়োজক সংগঠন ‘বিডি ক্লিন’ এর কর্মকর্তারা জানান, জনমনে পরিচ্ছন্নতার উদাহরণ প্রতিষ্ঠাসহ প্লাস্টিক সামগ্রী ব্যবহারে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে ডিএনসিসির পৃষ্ঠপোষকতায় আমরা ‘বিডি ক্লিন’ নামের এই স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন সারাদেশ থেকে কুড়িয়ে সংগ্রহ করা প্রায় ৩০ লক্ষ ব্যবহৃত প্লাস্টিক বোতলের এ প্রদর্শনীর আয়োজন করেছি। ৩০ লক্ষ শহীদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে এবং পরিবেশের জন্য মারাত্মক দূষণকারী প্লাস্টিক বোতল দিয়ে সাজানো জনসচেতনতামূলক এ প্রদর্শনীতে আছে প্লাস্টিকের বোতল দিয়ে তৈরি ১৯ ফুট বাই ৭১ ফুট একটি নৌকা, প্লাস্টিকের বোতলের ঢাকনা দিয়ে তৈরি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতকৃতি, বাংলাদেশের মানচিত্র, জাতীয় স্মৃতিসৌধ, রয়েল বেঙ্গল টাইগারের প্রতিকৃতিসহ পরিত্যক্ত প্লাস্টিক বোতলের তৈরি নানান রকমের গৃহ সাজানোর সামগ্রী।
উদ্বোধন অনুষ্ঠানে মেয়র বলেন, প্লাস্টিক পণ্য ডিকম্পোস্ট হতে প্রায় ৪৫০ বছর লাগে। প্লাস্টিক মাটির উর্বরতা নষ্ট করে, গ্র্রিন হাউজ ইফেক্ট তৈরি করে, সামদ্রিক জীবন ও জীববৈচিত্র্য ধ্বংস করে। বিশ্বে প্রায় ৯ দশমিক ৬ বিলিয়ন টন প্লাস্টিক রয়েছে, এর মাত্র ১০ শতাংশ রিসাইকেল করা হবে। অবশিষ্ট ৯০ শতাংশ প্লাস্টিক আমাদের পরিবেশে থেকে যাবে। এটি আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য উদ্বেগজনক। ৩০ লক্ষ শহীদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর জন্য এ ব্যতিক্রমী প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়েছে বলে মেয়র জানান।
প্লাস্টিকের বোতল দোকানে ফেরত দিয়ে ভোক্তাকে কিছু অর্থ ফেরত দিয়ে প্লাস্টিক বোতলের রিসাইকেল করা যাতে পারে বলেও তিনি মন্তব্য করেন মেয়র আতিকুল ইসলাম। ব্যবসায়ীদের এ বিষয়ে এগিয়ে আসার আহবান জানিয়ে মেয়র বলেন, ব্যবসা করবেন, অথচ সমাজকে কিছু দিবেন না এটা হতে পারে না। বিজয় দিবসের প্রাক্কালে মেয়র সবাইকে এ শহর পরিষ্কার রাখা এবং যত্রতত্র ময়লা-আবর্জনা না ফেলার আহবান জানান।
অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে ডিএনসিসির সচিব রবীন্দ্র শ্রী বড়ুয়া, প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা কমডোর মঞ্জুর হোসেন, ওয়ার্ড কাউন্সিলর মোঃ নাসির, যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী বিজ্ঞানী ড. মঈন সরকার প্রমূখ উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে প্রদর্শনীতে ঘুরতে এসে নিজের ধারনাই যেন পাল্টে গেছে রিয়াজুল ইসলামের। গুলশানে থাকেন তিনি। আগে চাকুরী করতেন। এখন অবসরে চলে গেছেন। প্লাষ্টিকের ফেলনা বোতল দিয়ে কিভাবে এত সুন্দর জিনিস তৈরি করা যায় এটা অনেকেই ধারনাও করেত পারতেন না। তিনি জানান এখন থেকে বাসায় গিয়ে তিনি তার পুত্রবধু আর মেয়েদেরকেও উৎসাহিত করবেন এভাবে সুন্দর সুন্দর জিনিস বানানোন জন্য। প্লাস্টিকের ফেলনা জিনিস এখন থেকে ফেলে না দিয়ে এগুলো দিয়েই বাসা বাড়ির জন্য আকর্ষনীয় শো পিজ বানানোর জন্য অন্যদেরকেও উৎসাহ দেবেন রিয়াজুল সাহেব।
প্রদর্শনী ঘুরে দেখা গেল এখানে প্লাস্টিকের বোতল দিয়ে ফুলদানি, পাখি, ফুলের গাছের চারা, বাগানে পানির দেয়ার ঝাড়, বারান্দায় ঝুলিয়ে রাখার মতো আরো নানা ধরেনর শো পিস তৈরি করার উপায় ও পদ্ধতি দেখানো হচ্ছে। প্রদর্শীতে যারা আসছেন তারাও বেশ উৎসাহ পাচ্ছেন এবং নিজেরা কিছু তৈরি করার ধারণা নিয়ে যাচ্ছেন। সকাল থেকে সন্ধা পর্যন্ত চলবে এই প্রদর্শনী। প্রদর্শনী চলবে আগামী ২০ ডিসেম্বর শুক্রবার পর্যন্ত। প্রদর্শনী আগত সকল দর্শনার্থীদের জন্যই উন্মুক্ত।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা