২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

সাপের দংশনে সাপুড়েও ছুটে যান ঢাকা মেডিক্যালে

-

নিজেরা খ্যাতিমান সাপুড়ে পরিবার। বাড়ি গাজীপুরে। দেশজুড়েই সুনাম তাদের। সাপের বিষ নামাতে যশ-খ্যাতিরও কমতি নেই। কিন্তু সাপের বিষাক্ত ছোবলে দংশিত হয়ে নিজেরাই চিকিৎসা নিয়েছেন হাসপাতালে। সময়মতো হাসপাতালে নিয়ে আসায় সুস্থ হয়ে বাড়িও ফিরেছেন তারা। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল সূত্র জানা যায় এ তথ্য।

হাসপাতাল সূত্র জানায়, গত ২৪ আগস্ট গাজীপুরের একটি সাপুড়ে পরিবারের স্বামী-স্ত্রী দুইজনই সাপের কামড়ে আহত হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। স্বামী কালা মিয়া আর স্ত্রী পারুল। একটি বিষাক্ত সাপের দাঁত তুলতে গিয়ে সেই সাপের দংশনেই আহত হন দুইজন। পরে জীবন বাঁচাতে চিকিৎসা নিতে তারা এসেছিলেন ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। কয়েক দিন চিকিৎসাসেবা শেষে সুস্থ হয়ে বাড়িতে ফিরেছেন এই সাপুড়ে দম্পতি।

গাজীপুরের খোকন পেশার সাপুড়ে। সাপে কাটা রোগীকে তিনি মন্ত্র আর কৌশল দিয়ে বিষ নামিয়ে নিমিষেই ভালো করে দিতে পারেন বলে দাবি করেন। কিন্তু গত বছরের ২৭ মে সাপ ধরতে গিয়ে সেই সাপেরই দংশনে আহত হন এই সাপুড়ে। পরে জীবন বাঁচাতে চলে আসেন ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়ে পরিবারের কাছে ফিরেছেন তিনি।
ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা: মো: রোবেদ আমিনের তত্ত্বাবধানে সাপে কাটা রোগীদের জন্য আলাদা একটি ইউনিট গড়ে তোলা হয়েছে। সারা দেশ থেকে যত সাপে কাটা রোগী এই হাসপাতালে আসেন তাদের এই ইউনিটের মাধ্যমেই চিকিৎসাসেবা দেয়া হয়। এই ইউনিটের কো-অর্ডিনেটরের দায়িত্ব পালন করছেন এই বিভাগেরই সহকারী রেজিস্ট্রার ডা: মোক্তাদির ভূইয়া।

গতকাল বুধবার দুপুরে মোক্তাদির ভূইয়া নয়া দিগন্তকে জানান, মানুষের মধ্যে এখনো সাপে কাটার চিকিৎসা নিয়ে অনেক ভুল ধারণা রয়েছে। তারা মনে করেন, সাপে কাটলে ওঝা বা সাপুড়ে দ্বারা ঝাড়ফুঁক করলেই রোগী ভালো হবে। কিন্তু গত এক বছরে আমরা দেখেছি, সাপুড়েরা নিজেরাই সাপের কামড়ে আহত হয়ে হাসপাতালে এসে চিকিৎসা নিয়েছেন।

স্ব-উদ্যোগে প্রস্তুতকৃত একটি গবেষণাপত্রের উদ্ধৃতি দিয়ে এই চিকিৎসক আরো জানান, গত বছরের এপ্রিল মাস থেকে চলতি বছরের আগস্ট মাস পর্যন্ত সময়কালে ডা: মো: রোবেদ আমিন স্যারের তত্ত্বাবধানে একটি গবেষণা করে দেখেছি, এই এক বছরে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে মোট ২৫ জন সাপে কাটা রোগী চিকিৎসা নিয়েছেন। এর মধ্যে তিনজনই ছিলেন ওঝা বা সাপুড়ে। তারা নিজেরা স্বীকার করেছেন, দেশের বিভিন্ন এলাকায় তারা সাপে কাটা রোগীর চিকিৎসা করেছেন। কিন্তু নিজেরা যখন বিষাক্ত সাপের দংশনে আহত হয়েছেন তারা কিন্তু এক মিনিটও দেরি বা বিলম্ব করেননি। সময়মতো হাসপাতালে এসেছেন। সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন।

গবেষণাপত্রে আরো দেখা গেছে, এক বছরে ২৫ জন সাপে কাটা রোগীর মধ্যে মারা গেছেন চারজন। তাদের সময়মতো হাসপাতালে আনতে পারেননি তাদের স্বজনরা। এ ছাড়া বয়সের অনুপাতে এই ২৫ জন রোগীর মধ্যে দেখা গেছে, সাপে কাটা রোগীদের মধ্যে শতকরা ৩৯ ভাগ ছিলেন ৪০ বছরের বেশি বয়সের আর ৬১ ভাগ রোগী ছিলেন যাদের বয়স ছিল ২০ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে। এ ছাড়া ২৫ জন রোগীর মধ্যে গৃহবধূ ছিলেন সাতজন, বৃদ্ধ তিনজন, সাপুড়ে তিনজন, ছাত্র পাঁচজন, কৃষক ছয়জন ও ব্যবসায়ী একজন।


আরো সংবাদ



premium cement