নিউ এইজ সম্পাদক নূরুল কবিরের ফেসবুক আইডি উধাও
- নয়া দিগন্ত অনলাইন
- ১৮ অক্টোবর ২০১৯, ১৮:০৬, আপডেট: ১৮ অক্টোবর ২০১৯, ১৮:৩২
বাংলাদেশের ইংরেজি দৈনিক নিউ এইজ-এর সম্পাদক নূরুল কবির তার ফেসবুক আইডি ব্যবহার করতে পারছেন না। গত ৫ অক্টোবর থেকে তিনি ফেসবুকে আসতে পারছেন না বলে তার বন্ধু আজফার হোসেন জানিয়েছেন।
শুক্রবারও ফেসবুকে সার্চ করে নূরুল কবিরের ফেসবুক আইডি খুঁজে পাওয়া যায়নি। তার ফেসবুক আইডি ফিরিয়ে দেয়ার দাবি জানিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পাোস্ট দিয়েছেন অনেকে, এজন্য সরকারকেও দায়ী করেছেন কেউ কেউ।
গত ১৬ অক্টোবর রাত ১১টা ৩৩ মিনিটে আজফার ফেসবুকে লিখেছেন, ‘‘বাংলাদেশের শীর্ষস্থানীয় সাংবাদিক এবং দৈনিক নিউ এইজ-এর সম্পাদক ও আমার দীর্ঘ সময়ের বন্ধু নূরুল কবীর (Nurul Kabir)-এর কাছ থেকে এই মাত্র জানলাম যে, সংশ্লিষ্ট সরকারি কর্তৃপক্ষ তার ফেসবুক অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দিয়েছে। গত ৫ই অক্টোবর থেকে আজ পর্যন্ত সে ফেসবুকে আসতে পারে নাই। সাংবাদিক হিসাবে নূরুল কবীরের সততা, কর্তব্যপরায়ণতা আর গণতন্ত্রের প্রতি অঙ্গীকার ঐতিহাসিকভাবে প্রমাণিত। নূরুল কবীরকে তার ফেসবুক অ্যাকাউন্ট ফিরিয়ে দেয়ার জন্য আমি জোর দাবি জানাচ্ছি। এও জেনেছি, কমপক্ষে আরও ১০০ জন এই দাবি তুললে হয়ত সে ফেসবুক অ্যাকাউন্টটা ফিরে পাবে। আপনাদের কাছে বিনীতভাবে অনুরোধ জানাই স্ট্যাটাস দিয়ে অনুরূপ দাবি তোলার জন্য। আপনাদের প্রতি রইল ভালোবাসা আর কৃতজ্ঞতা।’’
গত ২৯ জুন এক অনুষ্ঠানে ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার জানান, চলতি বছরের শেষ দিকে এসে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক ও ভিডিও শেয়ারিং প্ল্যাটফর্ম ইউটিউব নিয়ন্ত্রণে সক্ষম হবে বাংলাদেশ।
ওই দিন তিনি বলেছিলেন, ‘‘রাষ্ট্রের এখন সবচেয়ে বড় ক্ষমতা হচ্ছে রাষ্ট্র ইচ্ছে করলে যে কোনো ওয়েবসাইটকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে, এটি বড় অর্জন। তবে সামাজিক মাধ্যমে যখন স্ট্যাটাস দেওয়া হয় বা ভিডিও প্রচার করা হয়, সেগুলোর ব্যাপারে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব হয় না। আশা করছি শিগগিরই এ ক্ষেত্রে হস্তক্ষেপ করতে সক্ষমতা অর্জন হবে। আগামী সেপ্টেম্বরের পর এ ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করা যাবে। তখন ইচ্ছেমতো ফেসবুক বা ইউটিউবে কিছু প্রচার করা যাবে না।’’
সাংবাদিক নূরুল কবিরের ফেসবুক আইডি কীভাবে উধাও হয়ে গেল সে বিষয়ে সুস্পষ্ট কোনাো তথ্য জানা যায়নি। এ বিষয়ে নূরুল কবিরের সঙ্গে মোবাইলে কয়েক দফা যোগাযোগ করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
ইস্টার্ন ইউনিভার্সিটির আইন বিষয়ের শিক্ষক এবং ডিজিটাল নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ রেজাউর রহমান লেনিন বলেন, বাংলাদেশে রাজনৈতিক কর্মী, সম্পাদক, আইনজীবী, ব্লগার এবং মানবাধিকার কর্মীদের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে ঝামেলা হচ্ছে।
পাসওয়ার্ড না জানলেও অন্য তথ্য দিয়ে ফেসবুকের পাসওয়ার্ড হাতিয়ে নেয়া সম্ভব জানিয়ে তিনি বলেন, আইডির সিকিউরিটি কম থাকার কারণে এটা হচ্ছে বলে মনে করছি না। কারণ কিছু আইডিতে নিয়ন্ত্রণ নেয়ার জন্য হ্যাকাররা রিপোর্ট করেছেন, চেষ্টা করছেন।
...নিপীড়ন-নির্যাতন হচ্ছে, সরকার অনলাইন ও অফলাইনে মত প্রকাশের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে অনেকাংশেই ব্যর্থ হচ্ছেন। এজন্য অনেক মানুষ মনে করতে পারেন (ফেকবুক আইডি হ্যাকের পেছনে) সরকারের প্রচ্ছন্ন ভূমিকা হ্যাকারদের প্রতি আছে।
‘‘ফেসবুকের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব আছে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে ফেসবুক সেই দায়িত্ব পালনে সচেষ্ট থাকলেও কিছু কিছু ক্ষেত্রে পালন করার ক্ষমতা এখনো তৈরি হয়নি বা নেই। বাংলাদেশ সরকার যে তার নাগরিকদের মত প্রকাশের স্বাধীনতা হরণ করছে সেই বিষয়গুলো সম্পর্কে ফেসবুককে আসেল নজর রাখা ও বোঝাপড়া গুরুত্বপূর্ণ এবং সে অনুযায়ী বাংলাদেশে যারা ভিন্নমতাবলম্বী ব্লাগার বা মানবাধিকতা কর্মী রয়েছেন তাদের ফেসবুকে মত প্রকাশের স্বাধীনতা যেন কোনে রকমে ব্যাহত না হয় সে বিষয়ে তাদের সচেষ্ট থাকতে হবে। ফেসবুকে কারো মত প্রকাশের স্বাধীনতা হরণ হলে ফেসবুকের দায়িত্ব হবে সেটা ফিরিয়ে দেয়ার চেষ্টা করা।’’
ফেসবুক আইডি নিরাপদ রাখতে স্টেপ ভেরিফিকেশন ব্যবস্থা রাখার পরামর্শ দিয়ে লেনিন বলেন, বিপদে পড়লে বা নিয়ন্ত্রণ হারালে যথাযথ ফেসবুক কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে। ডয়েচে ভেলে।