সিরিয়ায় রাশিয়ার যুদ্ধাপরাধের প্রমাণ পেয়েছে জাতিসঙ্ঘ
- নয়া দিগন্ত অনলাইন
- ০৫ মার্চ ২০২০, ০৯:২৯
সিরিয়া ভূখণ্ডে প্রায় দশকব্যাপী চলতে থাকা সঙ্ঘাতে রাশিয়া কর্তৃক যুদ্ধাপরাধ সংঘটনের প্রমাণ পেয়েছে বলে দাবি করেছে জাতিসঙ্ঘ। প্রতিপক্ষ সামরিক বাহিনীর উপস্থিতিহীন অঞ্চলে রাশিয়ার বিরুদ্ধে নির্বিচারে হামলা চালানোর প্রমাণ রয়েছে বলে জানা গেছে। এর মধ্য দিয়ে দেশটির বিরুদ্ধে প্রথমবারের মতো সরাসরি কোনো যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ আনা হলো।
সিরিয়ার দীর্ঘদিনের শাসক বাশার আল-আসাদকে ক্ষমতাচ্যুত করার উদ্দেশ্যে দেশটির বিদ্রোহীরা লড়াই শুরু করলে সিরিয়া সরকারের সমর্থনে যুদ্ধে যোগ দেয় রাশিয়া। ২০১১ সাল থেকে এখন পর্যন্ত চলতে থাকা সংঘর্ষের বিভিন্ন ঘটনায় যুদ্ধাপরাধ সংঘটিত হয়েছে মর্মে প্রতিবেদন প্রকাশ করল জাতিসঙ্ঘ। জাতিসঙ্ঘের তত্ত্বাবধানে সিরিয়ার যুদ্ধবিধ্বস্ত অঞ্চলের যুদ্ধাপরাধ তদন্তে ‘স্বাধীন আন্তর্জাতিক তদন্ত কমিশন’ গঠিত হয়। এ তদন্ত কমিশনই রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধে জড়িত থাকার তথ্য-প্রমাণ হাজির করল। সর্বশেষ প্রকাশিত এ তদন্ত রিপোর্টে ২০১৯ সালের জুলাই থেকে চলতি বছরের জানুয়ারি পর্যন্ত সংঘটিত ঘটনাগুলো বিবেচনায় নেয়া হয়েছে। বিশেষ করে সিরিয়া সরকার সমর্থিত বাহিনী কর্তৃক বেসামরিক অঞ্চলে হামলার ঘটনাগুলো খতিয়ে দেখেছে এ কমিশন। এ রিপোর্টে সাত লাখ মানুষকে বাস্তুচ্যুত করাসহ চিকিৎসাকেন্দ্রকে হামলার লক্ষ্যবস্তু করার প্রমাণ পাওয়া গেছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
জাতিসঙ্ঘ কর্তৃক গঠিত এ কমিশনের তদন্তে রাশিয়া কর্তৃক সংঘটিত দু’টি ঘটনার দিকে বেশি নজর দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে ইদলিব শহরের ৩৩ কিলোমিটার দক্ষিণে ঘনবসতিপূর্ণ মা’আরাত নুমান শহরে বোমা হামলার ঘটনাটি প্রতিবেদনে প্রথম উল্লেখ করা হয়। গত বছরের জুলাইয়ে সংঘটিত রাশিয়ার বিমান হামলায় ছয় শিশুসহ ৪৩ জন বেসামরিক নাগরিক প্রাণ হারায় এবং ১০৯ জন আহত হয় বলে তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। তদন্ত রিপোর্টে বলা হয়, বিমান হামলার পর উদ্ধারকারী দল সেখানে পৌঁছলে, একই লক্ষ্যবস্তুতে আবার হামলা চালানো হয়।
তদন্ত রিপোর্টে বর্ণিত দ্বিতীয় ঘটনাটিও গত বছরে ১৬ আগস্ট সংঘটিত হয় বলে উল্লেখ করা হয়েছে। ইদলিবের দক্ষিণাঞ্চলে সংঘটিত এ হামলায় আট নারী ও ছয় শিশুসহ ২০ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়; আহত হয় আরো ৪০ জন।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী সাক্ষী, ভিডিওচিত্র, তথ্য-উপাত্তের পাশাপাশি ফ্লাইট অবস্থান, ফ্লাইট চলাচলে বাধা প্রদানের তথ্যের ভিত্তিতে ঘটনাগুলো তদন্ত করা হয়েছে। এর মাধ্যমে সংঘটিত ঘটনাগুলোয় রাশিয়ার সংশ্লিষ্টতার শক্তিশালী প্রমাণ থাকার বিষয়টি রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে। রিপোর্টে আরো বলা হয়েছে, উল্লেখিত দু’টি ক্ষেত্রেই রাশিয়া প্রতিপক্ষের সুনির্দিষ্ট কোনো সামরিক লক্ষ্যবস্তুতে সরাসরি হামলা চালায়নি, বরং বেসামরিক এলাকায় নির্বিচারে হামলা চালিয়েছে।
এ দিকে রাশিয়া এ রিপোর্ট প্রত্যাখ্যান করেছে। সিরিয়ায় গণহত্যার অভিযোগকে অস্বীকার করে মস্কো বলেছে, দামেস্কোর সহায়তায় সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর লক্ষ্যবস্তুতেই শুধু আক্রমণ চালানো হয়।
উল্লেখ্য, ব্রাজিলিয়ান আইনজ্ঞ পল সার্জিও পিনহেরিও, জাতিসঙ্ঘে নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা কারেন কনিং আবুজায়েদ এবং মিসরীয় মানবাধিকার বিশেষজ্ঞ হানি মেগালির সমন্বয়ে এ তদন্ত পরিচালিত হয়েছিল। ২০১১ সালে সিরিয়ায় সঙ্ঘাত শুরু হলে এ তিন ব্যক্তির সমন্বয়ে প্যানেলটি গঠিত হয়। ওই সময় সিরিয়া সঙ্ঘাতে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনার ধারাবাহিক রিপোর্ট প্রদান করতেই এ প্যানেল গঠিত হয়েছিল। সূত্র : গার্ডিয়ান।