নতুন পারমাণবিক চুক্তির প্রস্তাব ইরানের প্রত্যাখ্যান
- নয়া দিগন্ত অনলাইন
- ১৬ জানুয়ারি ২০২০, ০৯:৫৩
পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে চলমান বিরোধ নিষ্পত্তির উদ্দেশ্যে নতুন ‘ট্রাম্প চুক্তি’র প্রস্তাব নাকচ করেছেন ইরানের প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সমবসময় প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করেন অভিযোগ করে তিনি এই নতুন প্রস্তাবকে অস্বাভাবিক বলে আখ্যায়িত করেন। তেমনি ছয় বিশ্ব শক্তির সাথে স্বাক্ষরিত বিদ্যমান পারমাণবিক চুক্তি এখনো মরে যায়নি বলে মন্তব্য করেছেন ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মদ জাওয়াদ জারিফ। একই সাথে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নতুন কোনো চুক্তি স্থায়ী হবে কি না সেটি নিয়েও সন্দিহান তিনি।
ইরান যাতে পারমাণবিক অস্ত্র বানাতে না পারে সেই লক্ষ্যে বিদ্যমান চুক্তির বদলে ‘নতুন ট্রাম্প চুক্তি’ স্বাক্ষর করতে মঙ্গলবার বিশ্ব নেতাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর প্রস্তাবে সায় দিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এক টুইটে বলেছেন, ‘ট্রাম্প চুক্তি’ স্বাক্ষরে বরিস জনসনের প্রস্তাবে সম্মত তিনি।
প্রেসিডেন্ট রুহানি বলেন, লন্ডনের এই প্রধানমন্ত্রী কী চিন্তা করেন আমি জানি না। তিনি বলছেন, পরমাণু চুক্তি বাদ দিন আর ট্রাম্পের চুক্তি বাস্তবায়ন করুন। আপনারা যদি ভুল পদক্ষেপ নেন, তাহলে আপনাদেরই ক্ষতি হবে। সঠিক পথটি নিন। সঠিক পথ হলো পারমাণবিক চুক্তিতে ফিরে যাওয়া।
এ দিকে ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লিতে আন্তর্জাতিক এক নিরাপত্তা সম্মেলনে অংশ নিয়েছেন ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জাওয়াদ জারিফ। গতকাল বুধবার সম্মেলনের ফাঁকে রয়টার্সকে দেয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র (বিদ্যমান চুক্তির) অঙ্গীকার বাস্তবায়ন করেনি... এখন তারা চুক্তি প্রত্যাখ্যান করেছে...যুক্তরাষ্ট্রের সাথে আমাদের চুক্তি ছিল এবং যুক্তরাষ্ট্র সেটি ভেঙেছে। ট্রাম্পের সাথে যদি আবার চুক্তি হয়, তাহলে সেটি কতদিন টিকবে?’
ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচির লাগাম টানার লক্ষ্যে ২০১৫ সালে স্বাক্ষরিত ওই চুক্তি থেকে ২০১৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রের বেরিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। চুক্তি থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পর ইরানের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা পুনর্বহাল করেন তিনি।
কূটনীতিতে আগ্রহী হলেও যুক্তরাষ্ট্রের সাথে বোঝাপড়ায় যাবে না ইরান মন্তব্য করে জারিফ বলেন, বিদ্যমান চুক্তিটি সেরা চুক্তিগুলোর একটি। ব্রিটেন, ফ্রান্স, জার্মানি একদিন আগে ইরানের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিকভাবে পারমাণবিক চুক্তির শর্ত লঙ্ঘনের অভিযোগ আনার পর মোহাম্মদ জাওয়াদ জারিফ এসব কথা বললেন। মঙ্গলবার পারমাণবিক চুক্তি নিয়ে বিরোধ নিষ্পত্তি শুরু করতে জার্মানি, ফ্রান্স ও ব্রিটেন যৌথভাবে এক বিবৃতি প্রকাশ করে। কূটনীতির দরজা খোলার রেখে ওই তিন বিশ্ব শক্তি বলছে, ইরানের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের সর্বোচ্চ চাপ প্রয়োগের নীতির সাথেও যুক্ত হবে না তারা।
২০১৫ সালে স্বাক্ষরিত পারমাণবিক চুক্তির শর্ত ইরান মানবে না বলে গত ৬ জানুয়ারি ঘোষণা দেয়। যে কারণে দেশটি পারমাণবিক অস্ত্র এবং পারমাণবিক চুল্লি তৈরিতে ইউরেনিয়ামের ব্যবহার করতে পারে বলে আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। তবে পারমাণবিক সমৃদ্ধকরণের সীমা না মানার ঘোষণার সাথে জাতিসঙ্ঘের পর্যবেক্ষকদের সহযোগিতা অব্যাহত রাখার অঙ্গীকার করেছে ইরান।
জার্মানি, ফ্রান্স ও ব্রিটেনের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, সাম্প্রতিক ঘটনাবলিতে এটা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে যে, পুরো অঞ্চলকে হুমকির মুখে ফেলে চলমান উত্তেজনায় আমরা পারমাণবিক বিস্তারের সঙ্কট যুক্ত করতে পারি না।
জার্মানির পররাষ্ট্রমন্ত্রী হেইকো মাস বলেছেন, আমাদের উদ্দেশ্য পরিষ্কার : আমরা এই চুক্তির সংরক্ষণ এবং চুক্তিতে একটি কূটনৈতিক সমাধান চাই। আমরা চুক্তির সব পক্ষকে সাথে নিয়ে বিষয়টির সমাধান করব। এখন আলোচনার যে প্রক্রিয়া শুরু হচ্ছে আমরা তাতে ইরানকে গঠনমূলকভাবে অংশগ্রহণের আহ্বান জানাচ্ছি।
তেহরান চুক্তির শর্ত সীমিত করায় এখন ইরান, রাশিয়া, চীন, ফ্রান্স, জার্মানি ও ব্রিটেন ভিয়েনায় রাজনৈতিক স্তরের এক বৈঠকে মিলিত হবে। সেখানে আনুষ্ঠানিকভাবে বিরোধ নিষ্পত্তির চেষ্টা হবে। ১৫ দিনের মধ্যে এই বিরোধের নিষ্পত্তি না হলে ইউরোপীয় ইউনিয়নের নিষেধাজ্ঞার কবলে পড়তে পারে ইরান।
জাওয়াদ জারিফ বলেছেন, ইউরোপীয় ইউনিয়নের তিন দেশের পাঠানো চিঠির জবাব দেবে ইরান। তবে এই চুক্তির ভবিষ্যৎ এখনো মরে যায়নি; এটি ইইউর ওপর নির্ভর করছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি। ইরানের সামরিক বাহিনীর কমান্ডার জেনারেল কাসেম সোলাইমানিকে মার্কিন বাহিনীর হত্যাকাণ্ড এবং প্রতিশোধে ইরাকে মার্কিন সামরিক ঘাঁটিতে তেহরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলা ঘিরে এ দুই দেশের মাঝে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে। জারিফ বলেন, ক্ষেপণাস্ত্র হামলার রাতে মধ্যস্থতাকারী সুইজারল্যান্ডসের মাধ্যমে ওয়াশিংটনের কাছে একটি বার্তা দিয়েছে ইরান। সোলেইমানি হত্যাকাণ্ডের জবাবে আত্মরক্ষার অংশ হিসেবে ওই হামলা চালানো হয়েছে।
ইরানের এই পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, কমান্ডার সোলেইমানি হত্যা ইসলামিক স্টেটের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে প্রচণ্ড ধাক্কা। ওই অঞ্চলে এ গোষ্ঠীকে পরাজিত করার জন্য অনেকেই সোলাইমানিকে হিরো হিসেবে দেখতেন। সূত্র : রয়টার্স ও গার্ডিয়ান।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা