২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ন ১৪৩১, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

ধর্ষিতাদের গ্রহণ করা হবে, সন্তান নয়

- ছবি : সংগৃহীত

উত্তর ইরাকের সংখ্যালঘু ইয়াজিদি সম্প্রদায়ের নেতারা বলেছেন, উগ্রবাদী গোষ্ঠি আইএসের হাতে ধর্ষিত নারীদের তারা গ্রহণ করবেন; কিন্তু ধর্ষণের ফলে জন্ম নেয়া শিশুদের গ্রহণ করা হবে না।

গত শনিবার এক বিবৃতিতে গোষ্ঠিটির ধর্মীয় কাউন্সিলের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, পূর্ববর্তী ঘোষণায় বলা হয়েছিল আইএসের হাত থেকে ‘বেঁচে যাওয়া সকলকে’ গ্রহণ করা হবে, তার মধ্যে আইএস সদস্যদের সন্তান অন্তর্ভূক্ত নয়। শুধুমাত্র ইয়াজিদি বাবা ও মায়ের সন্তানরাই এই সম্প্রদায়ের মাঝে ফিরতে পারবে।

অনেক দিন ধরেই সম্প্রদায়টির মধ্যে আইএসের ধর্ষণের শিকার নারীদের জন্মদেয়া সন্তান নিয়ে বিতর্ক আছে। উত্তর ইরাকে পাঁচ লাখ ইয়াজিদি সম্প্রদায়ের মানুষের বাস। তারা একটি পৃথক জাতিগত ও ধর্মীয় গোষ্ঠি। সিরিয়া ও তুরস্কেও অল্প সংখ্যক ইয়াজিদ বাস করেন।

নতুন এই ঘোষণার ফলে, অন্য ধর্মের পুরুষের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ ইয়াজিদি নারীদের সন্তানরাও তাদের সম্প্রদায় ভূক্ত হতে পারবে না।

২০১৪ সালে মধ্যপ্রাচ্যে উগ্রবাদী গোষ্ঠি আইএসের উত্থানের পর তাদের হাতে হত্যা, নির্যাতন, ধর্ষণসহ নানা নিপীড়নের শিকার হয় ইয়াজিদিরা। অনেক ইয়াজিদি নারীদের দাস হিসেবে নিয়ে যায় আইএস যোদ্ধারা। ২০১৫ সালে তাদের ধর্মীয় নেতা বাবা শেখ এক ঘোষণায় বলেছিলেন, আইএসের হাত থেকে বেঁচে যাওয়া সকলকে স্বাগত জানানো হবে।

এমনকি গত সপ্তাহেও সর্বোচ্চ ধর্মীয় পরিষদের প্রধান হাজেম তাহসিন এক যুগান্তকারী ঘোষণায় বলেছিলেন, আইএসের হাত থেকে বেঁচে যাওয়া সকলকে গ্রহণ করা হবে। যে অপরাধ তাদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে করা হয়েছে সে জন্য কাউকে শাস্তি পেতে হবে না।

ওই ঘোষণার পর আইএসের নির্যাতনের ফলে জন্ম নেয়া সন্তাদের ভবিষ্যত অনিশ্চয়তার হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার আশাবাদ তৈরি হয়েছিল; কিন্তু শনিবারের সর্বশেষ ঘোষণায় দাবি করা হয়েছে, আগের বিবৃতিকে বিকৃত করে উপস্থাপন করা হয়েছে মিডিয়ায়। তাই আইএসের ধর্ষণের ফলে জন্ম নেয়া শিশুদের ভাগ্য আবারো অনিশ্চয়তায় পড়ে গেল।

ইয়াজিদি কর্মকর্তা আলি খেদির রোবাবর বলেছেন, তারা সন্তানসহ কিংবা যারা গর্ভবর্তী আছেন তাদের ফিরে আসতে উৎসাহিত করছেন। তবে সেই সন্তানকে মেনে নেয়ার জন্য পরিবারকে চাপ দেয়া যাবে না।

মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচ এই সিদ্ধান্তের নিন্দা জানিয়েছে। তারা এই সিদ্ধান্তকে লজ্জাজনক হিসেবে আখ্যায়িত করেছে। সংগঠনের ইরাক ও কাতার বিষয়ক সিনিয়র গবেষক বিলকিস উইলি টুইটারে এই ঘটনাকে লজ্জাজনক হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। তিনি লিখেছেন, আইএসের হাতে অপহৃত নারীরা বলেছেন, সেখানে ধর্ষণের ফলে জন্ম নেয়া সন্তানকে এতিম খানা বা আইএস যোদ্ধাদের পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দেয়া তাদের জন্য কতটা কষ্টকর হবে। গর্ভের সন্তানকে ফেলে নিজ সম্প্রদায়ের কাছে ফেরার ইচ্ছে নেই তাদেরর।

প্রসঙ্গত যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন সামরিক অভিযানে উগ্রবাদী গোষ্ঠি আইএস পরাজিত হওয়ার পর নির্যাতিত ইয়াজিদিরা আবার নিজ নিজ এলাকায় ফিরতে শুরু করেছে। আইএস পুরোপুরি নির্মূল না হলেও তাদের দখলকৃত এলাকাগুলো উদ্ধার করা হয়েছে। সূত্র: আলজাজিরা


আরো সংবাদ



premium cement