২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ন ১৪৩১, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

হেমন্তের বাতাসে কমলার সুঘ্রাণ

হেমন্তের বাতাসে কমলার সুঘ্রাণ - ছবি : নয়া দিগন্ত

ছোট-বড় টিলার ঢালে হাজার হাজার কমলাগাছ। সারি সারি এসব কমলা গাছের পাতার ফাঁকে উঁকি দিচ্ছে সবুজ আর সোনালী কমলা। দেখে মন জুড়িয়ে যাবে। মৌলভীবাজারের জুড়ী উপজেলার গোয়ালবাড়ী ইউনিয়নের বিভিন্ন কমলাবাগানে এবার বাম্পার ফলন হওয়ায় খুশি চাষিরা।

হেমন্তের শুভ্র বাতাসে ছড়াচ্ছে কমলা লেবুর সুস্বাদু ঘ্রাণ। শীতের কাছাকাছি সময়ে কমলার ভরা মৌসুম। তাই চাষিরা সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত গাছের পরিচর্যায় ব্যস্থ সময় পার করছেন বাগানে মালিক ও শ্রমিকরা।

জুড়ি উপজেলার গোয়ালবাড়ি ইউনিয়নে রূপাছড়া,লালছড়া,হায়াছড়া,শুকনাছড়া,কচুরগুলসহ বিভিন্ন পাহাড়ি এলাকায় দীর্ঘদিন থেকে এসব কমলা চাষ হয়ে আসছে। সিলেটের পাশাপাশি দেশজুড়ে এর সুনামও রয়েছে বেশ। চাষিরা জানান, জুড়ীতে দুই ধরনের কমলার চাষ বেশি হয়। এর মধ্যে নাগপুরী ও খাসি। তবে খাসি কমলার চাষ এখানে বেশি। নাগপুরী কমলাগুলো আকারে বড় আর খাসি গুলো তুলনামূলক ছোট।

সরেজমিন বেশ কয়েকটি কমলা বাগান ঘুরে দেখা যায়, চাষিরা কমলা বিক্রির জন্য পাকা ফল সংগ্রহ করছেন। পরে বাড়িতে নিয়ে এসে উঠানে বিভিন্ন আকার অনুসারে বাছাইয়ের কাজে ব্যন্ত সময় পার করছেন তারা। এসব কমলা- ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেটসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় পাঠানোর জন্য পাকা, আধা পাকা, ছোট ও বড় গুলো আলাদা আলাদা করে বাশের তৈরী খাচায় গুছিয়ে রাখছেন।

মৌলভীবাজার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, জেলায় ১৭৮ হেক্টর জমিতে ১৪৬টি কমলা বাগানে রয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি চাষ হয় জুড়ী উপজেলায় ৯২ হেক্টর জমিতে, বড়লেখায় ৬০ হেক্টর, কুলাউড়ায় ২০ হেক্টর জমিতে এই কমলা চাষ। এর মধ্যে কমলা চাষি রয়েছেন ১৪৬ জন। গত বছর প্রতি হেক্টরে কমলার উৎপাদন ছিল চার থেকে সাড়ে চার টন। এ বছর প্রতি হেক্টরে উৎপাদন ৬ মেট্টিক টন।

কথা হয় উপজেলার গোয়ালবাড়ি ইউনিয়নের লালছড়া এলাকার কমলা বাগানের মালিক জয়নুল ইসলামের সাথে। তার বাগানে কমলা গাছ রয়েছে ১২০০ টি। তিনি জানান, এবছর কমলার ফলন ভালো হয়েছে। তবে পোকামাকড়ের আক্রমণে কিছু কমলা নষ্ট হচ্ছে। তিনি বলেন, এ পর্যন্ত প্রায় ২ লাখ টাকার কমলা বিক্রি করেছি। আশা করছি আরও ৪ থেকে ৫ লাখ টাকার কমলা বিক্রি করবো। তিনি কমলা চাষে গত কয়েকবছর থেকে পুরোপুরি মন দিয়েছেন। তিনি গত ২/৩ বছর থেকে কমলা বিক্রি করে অনেকটা স্বাবলম্বি হয়েছেন বলে জানিয়েছেন।

এছাড়াও কমলা চাষি জাছির আহমদ সহ অনেক চাষিরা পাশ্ববর্তী ভারতীয় কমলা আমদানি বন্ধের দাবি জানিয়ে তারা বলেন,ভারতীয় কমলার জন্য আমরা সঠিক দাম পাইনা। পুরোপুরিভাবে যদি কমলা আসা বন্ধ করা যেতো তাহলে আমরা লাভবান হতাম। ভারতীয় কমলা দামে কম ও কিছুটা মিষ্টি হওয়ায় গ্রাহকদের চাহিদা বেশি। দেশিও কমলার ঐতিহ্য ধরে রাখতে ভারতীয় কমলা আসা বন্ধ করতে কর্তৃপক্ষকে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। তাহলে আমাদের চাষকৃত কমলা দিয়েই দেশের চাহিদা মেটানো সম্ভব।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর মৌলভীবাজার কার্যালয়ের উপ-পরিচালক কাজী লুৎফুল বারী জানান, কমলা চাষিরা আমাদের পরামর্শ অনুযায়ী কমলা বাগানের পরিচর্যা করেছেন। পোকামাকড় ও রোগবালাই নিয়ন্ত্রণ করায় এবং কৃষি অফিসের দিক নির্দেশনা সঠিকভাবে তারা পালন করায় এবারে জুড়ী অঞ্চলে কমলার ফলন ভালো হয়েছে।

ভারতীয় কমলা প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন,মৌলভীবাজারের কমলা যখন সংগ্রহ শুরু হয় এর আগেই ভারতীয় কমলা বাজারে চলে আসে। তাদের দেশে কমলার চাষ একটু আগাম শুরু হয়। তবে আমরা ভবিষ্যতে আরো আগে থেকে এ অঞ্চলের কমলা চাষের পরিচর্যা শুরু করতে পারি।

সরকার নতুন করে লেবু জাতীয় ফসলের সম্প্রসারণ প্রকল্পে (২০১৯-২০২৪ ) বছর মেয়াদি একটি প্রকল্প চালুর উদ্যোগ নিয়েছে। সেখানে চাষিদের মাধ্যমে বারি কমলা নামে-১,২ ও ৩ দিয়ে নতুন বাগান শুরু করার পরিকল্পনা রয়েছে।


আরো সংবাদ



premium cement