এক গম্বুজবিশিষ্ট বিশাল জোড় বাংলা মসজিদ
- নয়া দিগন্ত ডেস্ক
- ২৬ মে ২০১৯, ০০:০০, আপডেট: ২৬ মে ২০১৯, ০১:১৮
ঝিনাইদহ জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার বারোবাজার হলো দেশের সবচেয়ে প্রসিদ্ধ এবং বিখ্যাত প্রতœস্থানগুলোর একটি।
দীর্ঘ দিন ধরে ওই এলাকার রাস্তার পাশে একটা উঁচু ঢিবি ছিল। স্থানীয় লোকজন বহুদিন ধরে দেখে আসছে এই ঢিবি। বারোবাজারের আর সব প্রতœস্থানগুলোর মতো এই মসজিদটিও মাটির নিচে চাপা পড়েছিল। স্থানীয় লোকজন এই ডিবিকে জোড় বাংলা ঢিবি বলে জানত। প্রশ্ন হলো, মসজিদ যখন আবিষ্কৃত হয়নি তখন জোড় বাংলা নাম কোথা থেকে এলো?
আসলে জোড় বাংলা মসজিদের নামকরণের সঠিক ইতিহাস জানা যায় না। তবে স্থানীয় লোকজনের মধ্যে দুই রকমের কিংবদন্তি প্রচলিত আছে। কিছু মানুষ বলে থাকে এই স্থানে বহু বছর আগে এক জোড়া কুঁড়েঘর ছিল। তাই এই নাম অনুসারেই স্থানীয় ঢিবির নামকরণ করা হয় জোড় বাংলা ঢিবি।
আবার কারো কারো মতে এখানে জোড়া দীঘি ছিল। তাই এর নামকরণ করা হয় জোড় বাংলা ঢিবি। ১৯৯২-৯৩ সালে প্রতœতত্ত্ব অধিদফতর বারোবাজারের অন্যান্য প্রতœতাত্ত্বিক নিদর্শন আবিষ্কার করার মতো এখানেও খননকাজ চালায় এবং আবিষ্কৃত হয় এক গম্বুজবিশিষ্ট একটি সুদৃশ্য মসজিদ। যেহেতু এই ঢিবির নাম ছিল জোড় বাংলা ঢিবি, তাই মসজিদের নাম হয় জোড় বাংলা মসজিদ।
প্রতœতাত্ত্বিকদের ধারণা হিজরি ৮০০ সনে আলাউদ্দিন হুসাইন শাহের ছেলে শাহ সুলতান মাহমুদ এই মসজিদটি নির্মাণ করেন। তবে এ ব্যাপারে সঠিক কোনো ইতিহাস জানা যায় না। তা ছাড়া মসজিদের পাশেই রয়েছে বেশ কয়েকটি কবর। এই কবরে কাদের সমাহিত করা হয়েছিল, তারও কোনো সঠিক ইতিহাস নেই।
জোড় বাংলা মসজিদের ঠিক উত্তর পাশে অন্ধপুকুর নামে একটি পুকুর রয়েছে। মসজিদ এবং পুকুরের মধ্যে স্থানীয় লোকজন চলাচলের জন্য তৈরি করা হয়েছে পাকা রাস্তা। মুসল্লিদের অজু-গোসলের জন্য এই পুকুর নির্মাণ করা হয়েছিল। অবশ্য যখন মসজিদ নির্মাণ করা হয়েছিল এবং পুকুর খনন করা হয়েছিল তখন মাঝখানের এই রাস্তাটা ছিল না।
বারোবাজারের অন্যান্য মসজিদের মতো জোড় বাংলা মসজিদটিও দেখতে অসাধারণ। প্রায় ৫০০ বছরের পুরনো এই মসজিদটি ছোট ছোট পাতলা ইটের গাঁথুনিতে নির্মিত। সম্পূর্ণ মসজিদটি দাঁড়িয়ে আছে ১১ ফুট উঁচু একটি প্লাটফর্মের ওপর। মসজিদ এবং পুকুরের মধ্য দিয়ে বয়ে চলা রাস্তায় দাঁড়ালে শুরুতেই যে প্রবেশদ্বার চোখে পড়ে, তার ঠিক উত্তর-পূর্ব কোণে মসজিদটি অবস্থিত।
এই প্রবেশপথ থেকে পুকুর পর্যন্ত বাঁধানো সিঁড়ি ছিল। যদিও বর্তমানে সেই সিঁড়ির কোনো অস্তিত্ব নেই। প্রতœতত্ত্ব অধিদফতর মসজিদটি নতুন করে সংস্কার করেছে। ভেঙে যাওয়া মসজিদটি পুনর্নির্মাণের পর যেন তার পূর্বের জৌলুশ ফিরে পেয়েছে।
গোটা বারোবাজারজুড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা মসজিদগুলোর প্রায় সব ক’টি বর্গাকৃতির। গোড়ার মসজিদ এবং গলাকাটা মসজিদের মতো জোড় বাংলা মসজিদও বর্গাকৃতির। এক গম্বুজবিশিষ্ট এই মসজিদটির ঠিক পূর্ব পাশে রয়েছে তিনটি খিলানযুক্ত প্রবেশপথ। মসজিদের পশ্চিম দিকের দেয়ালে পোড়ামাটি নির্মিত অলঙ্করণের অর্ধবৃত্তাকার তিনটি মেহরাব আছে।
বর্গাকৃতির মসজিদের চার কোনায় রয়েছে আট কোণবিশিষ্ট চারটি কারুকাজ করা সুদৃশ্য মিনার। টাওয়ারের মতো মিনারগুলো মসজিদের সৌন্দর্য বাড়িয়েছে বহুগুণ। প্রতœতাত্ত্বিকরা গবেষণা করে দেখেছেন, এই মসজিদটির ইটের গাঁথুনির জন্য চুন ও বালু ব্যবহার করা হয়েছিল।
মসজিদের ভেতরে কেন্দ্রীয় মেহরাবসহ পশ্চিম দেয়ালে ফুল ও লতা-পাতার কারুকাজ মুসল্লিদের চোখে এই মসজিদকে আরো দৃষ্টিনন্দন করে তোলে। বর্তমানে এই মসজিদে নিয়মিত নামাজ আদায় করা হয়। বারোবাজারের অনন্য এই মুসলিম স্থাপত্য সুলতানি আমলে বাংলার মুসলমানদের রুচিশীলতার পরিচয় বহন করে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা