সুন্দরবন এখন ধ্বংসের সম্মুখীন : সুলতানা কামাল
- নিজস্ব প্রতিবেদক
- ১৯ মার্চ ২০১৯, ০০:০০
সুন্দরবন রক্ষা জাতীয় কমিটির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল বলেছেন, আমাদের জাতীয় সম্পদ সুন্দরবন এখন ধ্বংসের হুমকিতে পড়েছে। সুন্দরবনের পাশে রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্প বাতিলের দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, বর্তমান সরকার কোনোরকম নীতি-নৈতিকতার তোয়াক্কা না করে ক্ষমতার অপব্যবহার করে প্রকল্পটি চালিয়ে যাচ্ছে। এটা তাদের একটা জেদ। আর সেই জেদের কাছে পরাভূত হতে যাচ্ছে সুন্দরবনের ঐতিহ্য ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, জীববৈচিত্র্য এবং এ সংক্রান্ত পরিবেশবাদী সংগঠনগুলোর দাবি।
সুন্দরবন রক্ষা জাতীয় কমিটির উদ্যোগে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি (ডিআরইউ)’ সাগর-রুনি মিলনায়তন ‘ইউনেস্কোর ২০১৭ সালের সিদ্ধান্তের প্রেক্ষাপটে সুন্দরবনের বর্তমান অবস্থা’ শীর্ষক এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন। এতে বক্তব্য রাখেন উদ্ভিদ বিজ্ঞানী অধ্যাপক মো: আব্দুল আজিজ, ভূতত্ত্ববিদ অধ্যাপক বদরুল ইমাম। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন, বাপা’র সাধারণ সম্পাদক ও সুন্দরবন রক্ষা জাতীয় কমিটির সদস্য সচিব ডা: মো: আব্দুল মতিন। অ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল তার লিখিত বক্তব্যে বলেন, আমাদের জাতীয় সম্পদ সুন্দরবন নানাবিধ সমস্যার মধ্যে রয়েছে। এসবের মধ্যে নদী বিনষ্টকরণ ও জলবায়ু পরিবর্তন, জলোচ্ছ্বাস, চিংড়ি চাষ ও স্থায়ী জলাবদ্ধতা, পশু শিকার, গাছকাটা, প্রাণী বিলুপ্তি, নৌপথ অব্যবস্থাপনা, অপরিকল্পিত পোল্ডার ও মাছ শিকার, জনপদের অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা সঙ্কট। এর মধ্যে নতুন করে সৃষ্টি হয়েছে ‘ধ্বংসাত্মক উন্নয়ন ও বন দখল’ সমস্যা। সুন্দরবনের পাশ ঘেঁষে নির্মিত হচ্ছে ১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতাসম্পন্ন রামপাল তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্র। ভারত, বাংলাদেশ এবং জাতিসঙ্ঘের পরিবেশ সংশ্লিষ্ট সব আইন, নীতি ও ঘোষণাকে উপেক্ষা করে বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রদান ও আর্থিক হিসাবের বিচারে অনেক ক্ষতির দায় মাথায় নিয়ে দেশের কোটি কোটি মানুষের প্রতিবাদ উপেক্ষা করে বাংলাদেশ ও ভারতীয় সরকার এই বিশাল আকারের বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনে দৃঢ় মনোভাব ব্যক্ত করে কাজ চলমান রেখেছেন। অথচ বৈজ্ঞানিকভাবে এটি পরিষ্কারভাবে প্রমাণিত যে, রামপাল প্রকল্প সুন্দরবনকে ধ্বংস করবে। রামপালের কয়লা থেকে নির্গত মারাত্মক দূষণ পদার্থ বনের মাটি, পানি ও বাতাসকে মারাত্মকভাবে দূষিত করবে। পশুপাখি-মাছ-ডলফিন মারা যাবে কিংবা তাদের বিচরণ কমে যাবে।
সংবাদ সম্মেলন থেকে তিনি জানান, ইউনেস্কো বিশ^ ঐতিহ্য কমিটির সভা এ বছরই (২০১৯) আবার বৈঠকে বসবে যেখানে সুন্দরবন রক্ষায় ২০১৭ সালে দেয়া তাদের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে আমাদের সরকার কতটুকু কি করেছেন তার মূল্যায়ন করা হবে। নিয়মানুযায়ী বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থকে একটি রাষ্ট্রীয় প্রতিবেদন জমা দেয়ার কথা রয়েছে। সুলতানা কামাল জানান, বাপা একটি কপি তাদের দেয়ার জন্য বাংলাদেশ সরকারের কাছে অনুরোধ জানিয়েছে। এ ছাড়া বর্তমান পর্যায়ে দেশের উদ্বিগ্ন জনমানুষের পক্ষ থেকে ইউনেস্কোর কাছে একটি চিঠিও প্রেরণ করা হয়েছে, যাতে বাংলাদেশ সরকারকে রামপাল প্রকল্প বাতিল ও বন রক্ষায় উদ্বুদ্ধ করতে এবং সরকার ও অন্যান্য সদস্য রাষ্ট্রগুলোকে বনের পক্ষে রাখার চেষ্টা করতে। তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, সরকার নির্বিকার হলে, তার ওপর চাপ প্রয়োগের লক্ষ্যে বনকে ‘বিপদাপন্ন তালিকাভুক্ত’ করা যেতে পারে।
অধ্যাপক মো: আব্দুল আজিজ বলেন, দেশের অর্থনীতি ও জনগণকে ধ্বংস করে সরকার কাকে খুশি করতে চাইছে তা আমার বোধগম্য নয়। তিনি এ প্রকল্প থেকে সরে আশার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।
অধ্যাপক বদরুল ইমাম বলেন, সুন্দরবনের রামপাল প্রকল্প একটা অস্বচ্ছ প্রকল্প। সুন্দরবন নিয়ে নেতিবাচক মানবিকতা জাতির জন্য অভিশাপ বয়ে আনবে। এ ক্ষতি আর কখনো পুষে নেয়ার মতো নয়।