সিলেট-১ আসনে চমক দেখাতে পারেন খন্দকার আব্দুল মুক্তাদির
- এনামুল হক জুবের সিলেট ব্যুরো
- ২৬ ডিসেম্বর ২০১৮, ০০:০০
সিলেট বিভাগে ১৯টি সংসদীয় আসনের মধ্যে সর্বাধিক ভোটার হচ্ছেন সিলেট-১ আসনে। সিলেট সিটি করপোরেশন ও সদর উপজেলা নিয়ে গঠিত এই আসনে মোট ভোটার হচ্ছেন পাঁচ লাখ ৪৪ হাজার ২১৯ জন। মর্যাদাপূর্ণ এই আসনে ‘যে দলের প্রার্থী বিজয়ী হন সেই দলই ক্ষমতায় যায়’ এমন একটি মিথ প্রচলিত রয়েছে।
এই আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য হচ্ছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত। আসন্ন সংসদ নির্বাচনে তিনি প্রার্থী হননি। তার পরিবর্তে এখানে আওয়ামী লীগ তথা মহাজোটের প্রার্থী হয়েছেন ড. এ কে আব্দুল মোমেন। তিনি জাতিসঙ্ঘে বাংলাদেশের সাবেক স্থায়ী প্রতিনিধি ও রাষ্ট্রদূত এবং অর্থমন্ত্রীর ছোট ভাই।
অপর দিকে, বিএনপি তথা ঐক্যফ্রন্টের মনোনীত প্রার্থী হচ্ছেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা খন্দকার আব্দুল মুক্তাদির। তিনি একজন শিল্পপতি। মোমেন এবং মুক্তাদির দু’জনই এবার প্রথম নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন। মোমেনের বিপক্ষে সিলেটে বিএনপির কেউ কেউ ইনাম আহমদ চৌধুরীকে দলের প্রার্থী দেখতে চেয়েছিলেন। কিন্তু সার্বিক দিক বিবেচনা করে কেন্দ্র কর্মিবান্ধব খন্দকার আব্দুল মুক্তাদিরকেই বেছে নেয়। মনোনয়ন না পাওয়ায় ইনাম আহমদ চৌধুরী যোগ দিয়েছেন আওয়ামী লীগে। এ ঘটনার পর মান অভিমান ভুলে বিএনপির সবপর্যায়ের নেতাকর্মীরা এখন ঐক্যবদ্ধ। তারা ধানের শীষের পক্ষে মাঠে সক্রিয়।
নির্বাচনী প্রচারণার শুরুতে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা খন্দকার মুক্তাদিরকে দুর্বল প্রার্থী মনে করে ধারণা করেছিলেন, তারা খুব সহজে বিপুল ভোটে বিজয়ী হবেন। কিন্তু, দিন যতই গড়িয়ে যাচ্ছে ধানের শীষের পক্ষে ভোটারদের ততই ব্যাপক সাড়া লক্ষ করা যাচ্ছে। বিশেষ করে সদর উপজেলায় খন্দকার আব্দুল মুক্তাদির শক্ত অবস্থানে রয়েছেন। তবে, এর পেছনে নানা কারণ রয়েছে। তার বাবা বিএনপি প্রতিষ্ঠাতাদের অন্যতম মরহুম খন্দকার আব্দুল মালিক ১৯৭৯ সালে ও ১৯৯১ সালে এই আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর এখানে নানা উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়িত হয়। পরে এই আসনের সাবেক সংসদ সদস্য, সাবেক অর্থ ও পরিকল্পনা মন্ত্রী মরহুম এম সাইফুর রহমানের প্রচেষ্টায় আরো অনেক প্রকল্প সম্পন্ন হওয়ায় এ অঞ্চলের মানুষের আর্থসামাজিক অবস্থা তথা জীবনমানের উন্নয়ন হয়। বিএনপি শাসনামলে শুধু সদর উপজেলা নয়; সিলেট নগরীতেও লাগে উন্নয়নের ছোঁয়া।
অপর দিকে, বর্তমান আওয়ামী লীগের শাসনামলে গত ১০ বছর এই নির্বাচনী এলাকায় অনেক উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়িত হয়েছে। কিন্তু, সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগার নির্মাণ ছাড়া এসব প্রকল্প দৃশ্যমান না হওয়ায় ভোটাররা মরহুম এম সাইফুর রহমানের কথাই কৃতজ্ঞতার সাথে স্মরণ করছেন।
সিলেট নগরীতে এখনো প্রচার-প্রচারণায় নৌকা এগিয়ে। প্রতিদিনই আওয়ামী লীগের সর্বস্তরের নেতাকর্মীকে মাঠে সক্রিয় থাকতে দেখা যাচ্ছে। দাপটের সাথে চলছে তাদের প্রচারণা। সে তুলনায় প্রচারণায় ধানের শীষ পিছিয়ে রয়েছে। দমন-পীড়নের কারণেই বিএনপি ও জামায়াতের নেতাকর্মীদের মাঠে দেখা যাচ্ছে না।
এ দিকে, ধানের শীষের প্রার্থী খন্দকার আব্দুল মুক্তাদির অভিযোগ করেছেন, তার পক্ষে ব্যাপক গণজোয়ার দেখে সরকার দিশেহারা হয়ে গত তিন দিন থেকে গণগ্রেফতার শুরু করেছে। এ পর্যন্ত বিএনপি ও জামায়াতের দুই শতাধিক নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, সিলেটে ধানের শীষের পক্ষে যে গণজোয়ার সৃষ্টি হয়েছে তা ঠেকিয়ে রাখার সাধ্য তাদের নেই। আওয়ামী লীগ বিজয় ছিনিয়ে নেয়ার জন্য নানা ষড়যন্ত্র করছে বলে তিনি অভিযোগ করেন।
সরেজমিনে ভোটারদের সাথে আলাপকালে তারা নির্বিঘেœ ভোট দেয়ার ব্যাপারে গুরুত্বারোপ করেন। নৌকার পক্ষে যেমনি অনেক ভোটার মুখ খুলছেন, তেমনি ধানের শীষের সমর্থন করেন এমন ভোটারের সংখ্যাও কম নয়। তবে, সাধারণ ভোটারদের বেশির ভাগই ভয়ে মুখ খুলতে রাজি নন। শেষ পর্যন্ত এই ভয়কে জয় করে সাধারণ ভোটাররা কেন্দ্রে গিয়ে ভোট দিতে সক্ষম হলে খন্দকার আব্দুল মুক্তাদিরই চমক দেখাবেন বলে মনে করছেন তার সমর্থকরা।