ঐতিহ্যের ধারক মুন্সীগঞ্জের বাবা আদম মসজিদ
অনন্য স্থাপত্য- মু. আবু সাঈদ সোহান মুন্সীগঞ্জ
- ০৭ অক্টোবর ২০১৮, ০০:০০
মুন্সীগঞ্জ জেলার পুরনো নাম বিক্রমপুর। বিক্রমপুর ছিল বাংলার পুরনো রাজধানী। বৌদ্ধ ও হিন্দু যুগে আরব থেকে অনেক সুফি-দরবেশ ইসলাম প্রচারের জন্য মুন্সীগঞ্জের বিক্রমপুরে আগমন করেন। তাদেরই একজন হলেন বাবা আদম শহীদ (রহ:)। ঝযধয ঐঁসধুধহ কধনরৎ ‘ঞযব ইধঃঃষব ড়ভ কধহধর ঈযধহমঁব’ গ্রন্থে বলেন, বাবা আদম শহীদ (রহ:) আরবের তায়েফ নগরীতে বাবার মৃত্যুর পর জন্মগ্রহণ করেন। তিনি বাংলাদেশ ও ভারতের বিভিন্ন স্থানে খানকাহ নির্মাণ করে ইসলাম প্রচার করেন। বাবা আদম শহীদ (রহ:) ১১৪২ খ্রিষ্টাব্দে বাংলাদেশের চট্টগ্রামে আসেন। সেখান থেকে ১১৫২ খ্রিষ্টাব্দে মুন্সীগঞ্জ সদরের বিক্রমপুরে আসেন। মুন্সীগঞ্জ এলাকার কপাল দুয়ার, মানিকেশ্বর ও ধীপুরে তিনটি খানকাহ নির্মাণ করে বিক্রমপুরে ইসলাম প্রচার করেন। এ তিনটি খানকায় যথাক্রমে সৈয়দ জোবায়ের (রহ:), শহীদ মুয়াবিয়ান আল বসরী (রহ:) ও শেখ মখদুম আল মুয়াসসিস (রহ:) দায়িত্বে থাকেন। দরগাহ বাড়িতে বাবা আদম শহীদ (রহ:) ১১৭৩ খ্রি: খানকাহ নির্মাণ করেন। অর্থাৎ রাজা বল্লাল সেনের বাড়ির চারপাশেই বাবা আদমের খানকাহ নির্মিত হয়। মুসলমান সুুফির ধর্মীয় তৎপরতায় বল্লাল সেন রুষ্ট হন। বিক্রমপুরে দিন দিন মুসলমানদের সংখ্যা বৃদ্ধি পেলে রাজা উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন এবং যুদ্ধ বাধে। এ দিকে ১১৭৪ খ্রিষ্টাব্দে বড়পীর আবদুল কাদের জিলানী (রহ:) অষ্টম মৃত্যুবার্ষিকীতে আবদুল্লাহপুরে গরু জবেহ করা হয়। এতে রাজা বল্লাল সেন রাগে অগ্নিশর্মা হয়ে ওই খানকার দায়িত্বে থাকা মুয়াবিয়ান আল বসরীকে অন্ধকূপে নিক্ষেপ করে শহীদ করেন। এতে বাংলার বিভিন্ন স্থানে থাকা সুফিরা রাজা বল্লাল সেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েন। ১১৭৮ সালের ২০ সেপ্টেম্বর বল্লাল সেনের সাথে ধর্মযুদ্ধে বাবা আদম শহীদ হন।
বাবা আদম (রহ:) শহীদ হওয়ার ৩০০ বছর পর তার স্মৃতি রক্ষার্থে বাংলার সুলতান জালাল উদ্দিন আবু জাফর শাহের ছেলে বিক্রমপুরের শাসক মহান মালিক কাফুরশাহ ছয় গম্বুজবিশিষ্ট একটি মসজিদ নির্মাণ করেন। তার মাজারের পশ্চিম-উত্তর পাশে ১৪৭৯ খ্রিষ্টাব্দে এ মসজিদটির নির্মাণ কাজ শুরু হয়। ১৪৮৩ খ্রিষ্টাব্দে সুলতান ফাতশাহের শাসনামলে নির্মাণ কাজ সমাপ্ত হয়। মসজিদটির উত্তর-দক্ষিণে ৪৩ ফুট ও পূর্ব পশ্চিমে ৩৬ ফুট মসজিদে তিনটি মেহরাব রয়েছে। মসজিদে প্রবেশের জন্য তিনটি দরজাও রয়েছে। মসজিদটি নির্মাণের সময় লাল পোড়া মাটির ১০ ইঞ্চি, ৭ ইঞ্চি, ৬ ইঞ্চি ও ৫ ইঞ্চি মাপের ইট ব্যবহার করা হয়েছে। মসজিদের ভেতরে দু’টি স্তম্ভ রয়েছে। মসজিদে প্রবেশের মূল দরজার ঠিক উপরে আরবি ভাষায় একটি শিলালিপি রয়েছে। মসজিদটি শুধু মুন্সীগঞ্জেরই নয় পুরো ভারত বর্ষের মধ্যে একটি দর্শনীয় স্থান। ১৯৯১-১৯৯৬ সালে বাংলাদেশ ডাক বিভাগ এ মসজিদের ছবি সংবলিত ডাকটিকিট প্রকাশ করে। বাবা আদম মসজিদটি সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের তত্ত্বাবধানে রয়েছে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা