০৬ অক্টোবর ২০২৪, ২১ আশ্বিন ১৪৩১, ২ রবিউস সানি ১৪৪৬
`
যাচাই-বাছাই শুরু হবে ৮ সেপ্টেম্বরের পর

এমপিওভুক্তির জন্য ৬ সহস্রাধিক আবেদন

-

সারা দেশের নন-এমপিও ছয় হাজার ২৩০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির (মান্থলি পে-অর্ডার বা বেতনের সরকারি অংশ) জন্য আবেদন করা হয়েছে। বাংলাদেশ শিক্ষা তথ্য ও পরিসংখ্যান ব্যুরো (ব্যানবেইস) সূত্রে জানা গেছে, গত সোমবার ২০ আগস্ট রাত ১২টার আগ পর্যন্ত অনলাইনে এ আবেদন জমা পড়ে। আগামী ৮ সেপ্টেম্বরের পর যাচাই-বাছাইয়ের কাজ শুরু হবে। এরপর তা মন্ত্রীর কাছে উপস্থাপন করা হবে।
ব্যানবেইস সূত্রে জানা গেছে, এমপিওর জন্য যারা আবেদন করেছেন, তাদের মধ্যে একই প্রতিষ্ঠানের জন্য একাধিক আবেদন করা হয়েছে। যেমন একই স্কুল নিম্ন-মাধ্যমিক ও মাধ্যমিক স্কুল হিসেবে এবং আবার কলেজ হিসেবেও আবেদন করা হয়। এ ছাড়া সদ্য অনুমতিপ্রাপ্ত, স্বীকৃতিপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান এবং স্বীকৃতির জন্য আবেদন করা হয়েছে এমন প্রতিষ্ঠানও রয়েছে। ফলে আবেদন করা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ছয় সহস্রাধিক ছাড়িয়েছে। মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, যাচাই-বাছাই কমিটির কাজ শুরু হবে ৮ সেপ্টেম্বরের পর। এরপরই জানা যাবে কত প্রতিষ্ঠান এমপিওর জন্য চূড়ান্ত করা হলো। সম্প্রতি জারি করা ‘জনবল কাঠামোর’র শর্ত পূরণ করা প্রতিষ্ঠানই প্রাধান্য পাবে। অন্যগুলো শর্তের কারণেই বাদ যেতে পারে।
ব্যানবেইস সূত্র আরো জানায়, ২০১০ সালে জরিপের তথ্য-উপাত্ত অনুসারে সারা দেশে নন-এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যা হচ্ছে মাত্র পাঁচ হাজার ২৪২টি। অপর দিকে শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, সারা দেশে নন-এমপিও প্রায় সহস্রাধিক শিাপ্রতিষ্ঠান থাকলেও প্রথম পর্যায়ে মাত্র এক হাজার শিাপ্রতিষ্ঠানকে এমপিওভুক্ত করা হবে। তার মধ্যে নিম্ন-মাধ্যমিক ও মাধ্যমিক স্কুল পর্যায়ে ৪০০টি, স্কুল অ্যান্ড কলেজ ১০, কলেজ ৭৫, ভোকেশনাল স্কুল ও কলেজ ৩০০, মাদরাসা ১০০ ও বিজনেস ম্যানেজম্যান্ট কলেজ ১১৫টি।
গত ১৪ জুন জারি করা এমপিও নীতিমালা বা জনবল কাঠামোর আলোকে এবার এমপিওভুক্ত করা হবে। তাতে এমপিভুক্তির জন্য যেসব শর্তের কথা বলা হয়েছে, তার মধ্যে উল্লেখযোগ্যগুলো হচ্ছে, শিকদের নিয়োগে বয়সসীমা ৩৫ বছর নির্ধারণ করা। নীতিমালা অনুযায়ী, শিাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির জন্য ১০০ নম্বরের গ্রেডিং করা হবে। তার মধ্যে একাডেমিক স্বীকৃতিতে ২৫ নম্বর (প্রতি দুই বছরের জন্য পাঁচ নম্বর, ১০ বা তার চেয়ে বেশি বয়স এমন প্রতিষ্ঠানের জন্য ২৫ নম্বর), শিার্থীর সংখ্যার ওপর ২৫ নম্বর (কাম্য সংখ্যার জন্য ১৫ নম্বর, এরপর ১০ শতাংশ বৃদ্ধিতে পাঁচ নম্বর), পরীার্থীর সংখ্যার জন্য ২৫ নম্বর (কাম্য সংখ্যার েেত্র ১৫ ও পরবর্তী প্রতি ১০ জনের জন্য পাঁচ নম্বর), পাবলিক পরীায় উত্তীর্ণের জন্য ২৫ নম্বরের (কাম্য হার অর্জনে ১৫ নম্বর ও পরবর্তী প্রতি ১০ শতাংশ পাসে পাঁচ নম্বর) গ্রেডিং করা হবে।
বেসরকারি কলেজের প্রভাষকদের এমপিওভুক্তির েেত্র বিষয়ভিত্তিক ২৫ জন শিার্থী বাধ্যতামূলক থাকতে হবে। তবে বিজ্ঞান বিভাগে ১৫ জন শিার্থী থাকলেও চলবে। আর নতুন জনবলকাঠামোতে সৃষ্ট পদের শিক-কর্মচারীদের বকেয়া বেতন-ভাতা দেয়া হবে না। কিন্তু নতুন পদে এমপিওভুক্ত করা হবে। নতুন জনবলকাঠামোর বাইরে কর্মরতদের পদ শূন্য হলে নতুন করে নিয়োগ দেয়া যাবে না। এ েেত্র, যারা এমপিওভুক্ত নন, কিন্তু বৈধভাবে নিয়োগ পেয়েছেন, তাদের নতুন পদে পদায়ন করতে হবে বলে নীতিমালায় উল্লেখ করা হয়।
মন্ত্রণালয় সূত্র আরো জানায়, চলতি অর্থবছরের বাজেটে স্কুল-কলেজ এমপিওভুক্তিতে ৪৩২ কোটি দুই লাখ ৭৩ হাজার টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এ বাজেটের মধ্যে যতগুলো প্রতিষ্ঠানকে দেয়া যায়, তাই দেয়া হবে বলে নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে। তবে শেষ পর্যন্ত কত সংখ্যক প্রতিষ্ঠান এমপিও দেয়া হবে তা নির্ধারণ করা হবে সরকারের রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের আলোকে। তার আগে আন্ত:মন্ত্রণালয় সভা করে তা চূড়ান্ত করা হবে।
এ ব্যাপারে এমপিওভুক্তির জন্য প্রতিষ্ঠান যাছাই-বাছাই কমিটির আহ্বায়ক এবং মাধ্যমিক ও উচ্চশিা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (বেসরকারি মাধ্যমিক) জাবেদ আহমেদ গতকাল নয়া দিগন্তকে বলেন, চারটি নির্দেশকের আলোকে সফটওয়্যারে অ্যাপ্লিকেশন গ্রেডিং করা হয়েছে। কতগুলো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে এমপিওভুক্ত করা হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাকে তালিকা করা ও যাচাই-বাছাইয়ের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। এর পরের সিদ্ধান্ত নেবে সরকার। আন্ত:মন্ত্রণালয় একটি বৈঠক হবে। অর্থ মন্ত্রণালয় কত টাকা বরাদ্দ দেয় তার ওপর নির্ভর করবে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সূত্র জানিয়েছে, গত বছর মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতর (মাউশি) সারা দেশে এমপিওবিহীন সাত হাজার ১৪২টি শিাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করতে বার্ষিক দুই হাজার ১৮৪ কোটি ২৭ লাখ ৫২ হাজার ২৫০ টাকা চাহিদা পাঠিয়ে ছিল মন্ত্রণালয়ে। এ হিসাবে বরাদ্দকৃত অর্থে মাত্র ৫০০ প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করা সম্ভব হবে। সংসদীয় আসনপ্রতি প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করতে অনলাইনে সফটওয়ারের মাধ্যমে গ্রের্ডিং করা হয়েছে। মন্ত্রী-এমপিদের ডিও লেটারের স্তূপ জমেছে মন্ত্রণালয়ে। তাদের চাহিদা পূরণ করতে হলে অন্তত পাঁচ হাজার প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করতে হবে।
এ দিকে মাদরাসা কারিগরি বিভাগের আবেদন প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে গতকাল থেকে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদরাসা বিভাগের এমপিও যাছাই-বাছাই কমিটির আহ্বায়ক এবং কারিগরি ও মাদরাসা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (প্রশাসন ও উন্নয়ন) এ কে এম জাকির হোসেন ভুঞা নয়া দিগন্তকে বলেন, আগামী ১৪ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত আবেদন নেয়া হবে। ব্যানবেইসের ওয়েবসাইটে একটি সফটওয়্যারের লিংক দেয়া আছে। তাতে আবেদনের সব নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। অনলাইনেই আবেদন ফরমটি পূরণ করতে হবে।
গত ১০ জুন থেকে জাতীয় প্রেস কাবের সামনে এমপিওভুক্তির দাবিতে অনশনকারী নন-এমপিও শিক্ষক নেতা নন-এমপিও শিাপ্রতিষ্ঠান শিক-কর্মচারী ফেডারেশনের অধ্য মাহমুদন্নবী ডলার নয়া দিগন্তকে বলেন, আমাদের দাবি ছিল এবং এখন আছে ইতোমধ্যে স্বীকৃতিপ্রাপ্ত সব ক’টি প্রতিষ্ঠানকেই এমপিওর আওতায় নেয়া। প্রয়োজনে ধাপে ধাপে করা যেতে পারে। তবে সবগুলোর গেজেট করা যতে পারে। বেতনও ধাপে ধাপে দেয়া হোক। এখনই যদি স্বীকৃতিপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানগুলোকে এমপিওর আওতায় আনা না হয়, তা হলে প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ বা ধ্বংস হয়ে যাবে। শিক্ষকেরা মাঠে মারা যাবেন। তাদের চাকরির আর কোনো সুযোগ থাকবে না। কারণ ১৭-১৮ বছর ধরে বহু শিক বিনাবেতনে চাকরি করছেন। তাদের বয়স শেষের দিকে।
উল্লেখ্য, ২০১০ সালের পর থেকে শিাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তি বন্ধ রয়েছে। এর পরের বছরের জাতীয় বাজেটগুলোতেও এ খাতের জন্য কোনো বরাদ্দ রাখা ছিল না। চলতি অর্থবছরের (২০১৮-১৯) বাজেটেও এমপিও খাতের জন্য কোনো বরাদ্দ রাখা হয়নি। এ নিয়ে শিক্ষক সংগঠনগুলো ক্ষোভের মুখে বলছে সরকার এমপিও খাতের জন্য বিশেষ বরাদ্দ দেবে এবং এ বছরই এমপিও দিতে হবে। তার জন্যই নতুন জনবলকাঠামো জারি করা হয়েছে।

 


আরো সংবাদ



premium cement