চুয়াডাঙ্গায় যুবলীগ নেতাকে কুপিয়ে জখম, ঢাকায় স্থানান্তর
- চুয়াডাঙ্গা সংবাদদাতা
- ২২ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ১১:৪৬
চুয়াডাঙ্গা জেলা জজ আদালতের সহকারী সরকারি কৌঁসুলি (এপিপি) ও জেলা যুবলীগের সাবেক আহ্বায়ক অ্যাড. শফিকুল ইসলামকে (৫৫) ফিল্মি স্টাইলে উপর্যুপরি কুপিয়ে হত্যার চেষ্টা করেছে দুর্বৃত্তরা। শনিবার রাতে শহরের রেলবাজার জনতা ব্যাংক ভবনের নিচে এ ঘটনা ঘটে। হামলার একপর্যায়ে অ্যাড. শফিকুল ইসলাম শফি মাটিতে লুটিয়ে পড়লে দুর্বৃত্তরা পালিয়ে যায়। পরে স্থানীয় লোকজন তাকে উদ্ধার করে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে ভর্তি করেন। সেখানে প্রায় দুই ঘণ্টা অস্ত্রোপচারের পর উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে ঢাকায় রেফার্ড করেন কর্তব্যরত চিকিৎসকেরা।
এ ঘটনার পর চুয়াডাঙ্গা শহরজুড়ে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। ঘটনার পর থেকে শহরের গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলোতে পুলিশ চেকপোস্ট বসায় এবং অপরাধীদের ধরতে শুরু করে সাঁড়াশি অভিযান। রাতেই পুলিশ অভিযান চালিয়ে ঘটনার সাথে জড়িত সন্দেহে সাতজনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করে। তবে আটককৃতদের নাম প্রকাশ করেনি পুলিশ।
এদিকে জেলা যুবলীগের সাবেক আহ্বায়ক অ্যাড. শফিকুল ইসলাম শফির ওপর হামলার প্রতিবাদে রাতেই চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতাল চত্বর থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল করে আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ, কৃষক লীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতা-কর্মীরা। পরে বিক্ষোভ মিছিলটি চুয়াডাঙ্গা বড় বাজারের শহীদ হাসান চত্বরে (চৌরাস্তার মোড়) সংক্ষিপ্ত প্রতিবাদ সমাবেশের মধ্য দিয়ে শেষ হয়। এ সময় উপস্থিত ছিলেন পৌর মেয়র ওবাইদুর রহমান চৌধুরী জিপু, সদর উপজেলা চেয়ারম্যান আসাদুল হক বিশ্বাস, সদর উপজেলা কৃষক লীগের সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান কবির, চুয়াডাঙ্গা আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের যুগ্ম-আহ্বায়ক মতিয়ার রহমান মতি, সদর উপজেলা কৃষক লীগের আহ্বায়ক আব্দুল মতিন দুদু, পৌর কৃষক লীগের যুগ্ম-আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আরিফ, জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক জানিফ, জেলা ছাত্রলীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন জ্যাকিসহ স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতা-কর্মীরা।
প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, শনিবার রাতে শহরের আলিয়া মাদরাসা-সংলগ্ন মসজিদে এশার নামাজ আদায় শেষে রেলবাজার শাখা জনতা ব্যাংক ভবনের নিচে বসে গল্প করছিলেন অ্যাড. শফিকুল ইসলাম শফি। এ সময় হঠাৎ তিনটি মোটরসাইকেলে ৬-৭ জন দুর্বৃত্ত জনতা ব্যাংক ভবনের সামনে এসে অ্যাড. শফিকুল ইসলাম শফির ওপর অতর্কিত হামলা চালিয়ে এলোপাতাড়ি কুপাতে থাকে। একপর্যায়ে অ্যাড. শফি মাটিতে লুটিয়ে পড়লে দুর্বৃত্তরা মৃত ভেবে তিনটি মোটরসাইকেলযোগে দ্রুত ঘটনাস্থল থেকে সটকে পড়ে।
ঘটনার পরপরই রেলবাজার জনশূন্য হয়ে যায়। পরে স্থানীয় কয়েকজন ব্যক্তি রক্তাক্ত অবস্থায় অ্যাড. শফিকে উদ্ধার করে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে ভর্তি করেন।
খবর পেয়ে চুয়াডাঙ্গা পুলিশ সুপার জাহিদুল ইসলাম জাহিদ, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মো: কলিমুল্লাহ, সদর থানার ওসি আবু জিহাদ খান, জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি ও সদর উপজেলা চেয়ারম্যান আসাদুল হক বিশ্বাস, চুয়াডাঙ্গা পৌরসভার মেয়র ওবাইদুর রহমান চৌধুরী জিপু, জেলা যুবলীগের আহ্বায়ক নঈম হাসান জোয়ার্দ্দার, জেলা যুবলীগের সাবেক সভাপতি অ্যাড. শফিকুল ইসলাম শফিকে দেখতে সদর হাসপাতালে ছুটে আসেন।
চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের সার্জারি কনসালট্যান্ট ডা. ওয়ালিউর রহমান নয়ন জানান,‘ধারালো অস্ত্রের উপর্যুপরি কোপে অ্যাড. শফির পিঠ, ঘাড় ও পেট মারাত্মক জখম হয়েছে। তার অবস্থা আশঙ্কাজনক। ধারালো অস্ত্রের আঘাতে তার ভুঁড়ি বের হয়ে গেছে। আমরা প্রায় দুই ঘণ্টা অস্ত্রোপচারের পর প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়েছি। উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে ঢাকায় রেফার্ড করা হয়েছে।’
চুয়াডাঙ্গা জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি ও সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আসাদুল হক বিশ্বাস দাবি করেন, দলের ভেতর ঘাপটি মেরে থাকা চিহ্নিত সন্ত্রাসীরাই এ হামলা চালিয়েছে। হামলাকারীদের অবিলম্বে গ্রেফতারের দাবিও জানান তিনি।
চুয়াডাঙ্গা জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের আহ্বায়ক ও পৌর মেয়র ওবাইদুর রহমান চৌধুরী জিপু হামলাকারীদের চিহ্নিত সন্ত্রাসী দাবি করে বলেন, হামলা করে চুয়াডাঙ্গাতে আর রাজনীতি করা যাবে না। একজন রাজনীতিবিদকে ইঙ্গিত করে মেয়র আরও বলেন, ‘তাকে সাপোর্ট করে না বিধায় আমাদের লোকজনের ওপর এ হামলা চালানো হয়েছে।’ তিনি হামলাকারীদের দ্রুত গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়ে আরও বলেন, অ্যাড. শফিকুল ইসলাম শফি জেলা ছাত্রলীগ, জেলা যুবলীগের নেতৃত্ব দিয়েছেন। দলের জন্য এই মানুষটার অনেক অবদান রয়েছে।
চুয়াডাঙ্গা সদর থানার ওসি আবু জিহাদ খান সাংবাদিকদের বলেন, ‘গ্রুপিংয়ের কারণে এ হামলার ঘটনা ঘটতে পারে বলে আমরা প্রাথমিকভাবে ধারণা করছি। একজন সংসদ সদস্যের বিরুদ্ধে কটূক্তি করার প্রতিবাদে এ হামলার ঘটনা ঘটেছে বলে আটক ব্যক্তিদের জিজ্ঞাসাবাদে জানা গেছে। এ ঘটনার পর থেকে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে এবং অপরাধীদের ধরতে বিশেষ অভিযান অব্যাহত রয়েছে।’
চুয়াডাঙ্গা জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মো: কলিমুল্লাহ বলেন, ‘পুলিশ সুপার স্যারের নির্দেশনা মোতাবেক আমরা অভিযান পরিচালনা করছি। এ ঘটনায় কেউ পার পাবে না। প্রকৃত অপরাধীদের আটক করে প্রকৃত ঘটনা উন্মোচন করা হবে।’
চুয়াডাঙ্গার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জাহিদুল ইসলাম জাহিদ সাংবাদিকদের বলেন, ‘অ্যাডভোকেট শফিকুল ইসলাম শফির ওপর যারা হামলা করেছে, তারা যত শক্তিশালীই হোক, তাদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনা হবে। ইতোমধ্যে আমার হামলার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে সাতজনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করেছি।’
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা