২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ন ১৪৩১, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

অবশেষে পুলিশের হস্তক্ষেপে মুক্ত লোহাগড়ার সেই পরিবার

বেড়া অপসারণ করার পর রোববার তরিকুল ইসলামের বাড়ির দৃশ্য - নয়া দিগন্ত

অবশেষে পুলিশের হস্তক্ষেপে মুক্ত হলো নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার কুচিয়াবাড়ী গ্রামের তরিকুল ইসলামের পরিবার। শনিবার (১৭ আগস্ট) রাত সাড়ে ৮টার দিকে তাদের বাড়িতে পুলিশ গিয়ে বাঁশের বেড়া অপসারণ করে। এ সময় উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর) শেখ ইমরান, লোহাগড়া থানার এসআই মিলটন কুমার দেবদাসসহ পুলিশের একটি দল। পুলিশের এই ভূমিকায় খুশি তরিকুলের পরিবারসহ সচেতনমহল।

ভূক্তভোগী তরিকুল ইসলাম বলেন, বাড়ি ও ক্ষেতের জমি বিক্রির অপরাধে পাশের ঝিকড়া গ্রামের হাফিজুর রহমান ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে শনিবার (১৭ আগস্ট) সকাল ৮টার দিকে হঠাৎ করে বাঁশের বেড়া দিয়ে ঘরের তিন পাশ ঘিরে ফেলেন। ভয়ে এ অন্যায়ের প্রতিবাদও করতে পারিনি। একপর্যায়ে আমার মা, স্ত্রী ও দুই শিশু সন্তানসহ আমি ঘরের মধ্যে অবরুদ্ধ হয়ে পড়ি। বিষয়টি সাংবাদিকরা জানার পর ওইদিন বেলা ১১টার দিকে লোহাগড়ার থানার ওসিকে অবগত করলেও তিনি কোনো গুরুত্ব দেননি। এ খবর গণমাধ্যমে প্রকাশের পর রাতে পুলিশ এসে বাঁশের বেড়া অপসারণ করে। এখন আমার দুই শিশু সন্তানসহ পরিবারের সদস্যরা বাড়িতে ঠিকমত চলাফেরা করতে পারছে। এজন্য নড়াইলের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন (পিপিএম-বার)সহ সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তাদের আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই।

তরিকুল জানান, পুলিশ প্রশাসনের হস্তক্ষেপের পর গ্রামবাসীও বিষয়টি মীমাংসার জন্য নড়েচড়ে বসেছেন। এজন্য রোববার (১৮ আগস্ট) সকাল সাড়ে ১০টার দিকে কুচিয়াবাড়ী ইটভাটার পাশে গ্রামবাসী দুইপক্ষের দ্বন্দ্ব মীমাংসার জন্য আলোচনায় বসেছেন। তবে এখনো সুরাহা হয়নি, আলোচনা চলছে। গ্রাম পর্যায়ে বিষয়টি মীমাংসা না হলে বিকেলে লোহাগড়া থানায় সমাধান করার কথা রয়েছে।

ভূক্তভোগী তরিকুল আরো জানান, প্রায় ২৫ বছর ধরে নিজের বসতভিটায় বসবাস করছেন তিনি। মা, স্ত্রী ও দুই সন্তানকে নিয়ে তার সংসার। তার বসতভিটায় প্রায় ৩০ শতক জমি রয়েছে। এর মধ্যে প্রায় ২৫ শতক নিজের কেনা জমি এবং পাঁচ শতক মায়েরপ্রাপ্ত জমি। পৈতৃকভিটা ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা থানার কামারগ্রামে বসবাস করার জন্য তরিকুল লোহাগড়ার তালবাড়িয়া গ্রামের জহিরসহ তার তিন ভাইয়ের কাছে প্রায় ৩০ শতক জমি বিক্রি করেন। ভূমি অফিসে জমির কাগজপত্র যাচাই-বাচাই শেষে গত ৩১ জুলাই ওই জমি লোহাগড়ায় রেজিস্ট্রি হয়। এছাড়া গত ৮ আগস্ট ক্ষেতের প্রায় ২১ শতক জমি তরিকুলের প্রতিবেশী শিমুল মোল্যা ক্রয় করেন। জমি বেচাকেনার এ বিষয়টি তরিকুলের মামা পাশের ঝিকড়া গ্রামের হাফিজুর রহমান জানতে পেরে ক্ষুব্ধ হন। এ ঘটনায় হাফিজুর শনিবার (১৭ আগস্ট) সকালে হঠাৎ করে তরিকুলের ঘরের তিন পাশে বাঁশের বেড়া দিয়ে আটকে দেন। এছাড়া হাফিজুর রহমান জমির ক্রেতাদের জমিতে আসতে দিবেন না বলেও হুমকি দেন।

শনিবারের ছবি। বেড়া দেয়ার পর। শনিবার রাতে পুলিশ এই বেড়া অপসারণ করে

তরিকুল ইসলাম বলেন, মায়ের সঙ্গে প্রায় ২৫ বছর ধরে কুচিয়াবাড়ির জমিতে বসবাস করছি। আর বাবা আছেন ফরিদপুরের বাড়িতে। তিনি মাঝে-মধ্যে আমাদের খোঁজখবর নেন। এখন নিজের বাড়ি ফরিদপুরের কামারগ্রামে বসবাস করার উদ্দেশ্যে এখানকার (কুচিয়াবাড়ী) জমি বিক্রি করেছি। এ ঘটনায় আমার মামা ঝিকড়া গ্রামের হাফিজুর রহমান আমাদের ঘরের তিন পাশে বাঁশের বেড়া দিয়ে ঘিরে দেয়। আর ঘরের পেছনের পাশে কোনো দরজা না থাকায় সেদিকে বেড়া দেয়নি। পরে পুলিশের হস্তক্ষেপে আমরা উন্মুক্ত ভাবে বাড়িতে চলাফেরা করতে পারছি।

তরিকুল আরো বলেন, এ ঘটনার প্রায় দুই বছর আগেও হাফিজুর রহমান আমাদের জমির বড় একটি তালগাছ বিক্রি করে দেন। থানায় অভিযোগ দিলে পুলিশের হস্তক্ষেপে ওই তালগাছটি ফিরে পাই।

তরিকুলের মা স্বরূপজান বলেন, শনিবার সকাল থেকে আমি এবং আমার ছেলে, বেটার বউ ও দুই পুতনি (ছেলের মেয়ে) ঘর থেকে বের হতে পারছি না। বৈধ জমি বিক্রির পরও হাফিজুর আমাদের হুমকি দেয়।

এ ব্যাপারে অভিযুক্ত হাফিজুর রহমান দাবি করেন, পৈতৃকসূত্রে ওই জমিতে তার অংশ রয়েছে; তাই তিনি বেড়া দিয়েছিলেন। কিন্তু, হঠাৎ করে কেন বেড়া দিলেন? এ প্রশ্ন এড়িয়ে যান তিনি।


আরো সংবাদ



premium cement