জাম্বুরা : প্রকৃতির ওষুধ
- ডা: মাওলানা লোকমান হেকিম
- ০৪ এপ্রিল ২০১৯, ১৩:৩৩
জাম্বুরা বিভিন্ন নামে পরিচিত বাংলাদেশে। একেক অঞ্চলে একেক নাম। যেমন- জাম্বুরা, বাতাবি লেবু, বাদামি লেবু, ছোলম, বড় লেবু ইত্যাদি। লেবু যত প্রকারের আছে, তন্মধ্যে এই জাম্বুরা হচ্ছে সর্বাপেক্ষা পুষ্টিগুণসমৃদ্ধ। এতে সবচেয়ে বেশি আছে ভিটামিন সি। জাম্বুরায় ভিটামিন সি রয়েছে ১০৫ মিলিগ্রাম। কাগজি লেবু, পাতি লেবুতে আছে ৬৩ মিলিগ্রাম। কমলাতেও আছে ৩৪ মিলিগ্রাম, কামরাঙ্গাতে ৬১ মিলিগ্রাম, আমড়াতে ৯২ মিলিগ্রাম। আনারস, আমলকী ও এ ধরনের ফলে যে পরিমাণ ভিটামিন সি আছে, তার চেয়ে বেশি রয়েছে জাম্বুরায়। বেশ কিছুদিন ধরেই বাজারে দেশীয় ফল জাম্বুরা পাওয়া যাচ্ছে। সাইট্রাস গোত্রের এই ফলটি একাধারে যেমন পুষ্টিকর, তেমনি রয়েছে এর নানাবিধ ঔষধিগুণ। রোগ নিরাময় আর স্বাস্থ্য সুরক্ষায় জাম্বুরা বিশেষভাবে কার্যকর। জাম্বুরার বৈজ্ঞানিক নাম সাইট্রাস প্যারাডিস্ট।
পুষ্টি উপাদান : জাম্বুরা ভিটামিন সি ভিটামিন এ ও পটাসিয়ামের বেশ ভালো উৎস। এ ছাড়া অন্যান্য ভিটামিনের মধ্যে ফলিক এসিড, পাইরিডক্সিন ও থায়ামিনও রয়েছে উল্লেখযোগ্য মাত্রায়। সেই সাথে আছে খানিকটা আয়রন, ক্যালসিয়াম, কপার ও ফসফরাস।
ফাইটোনিউট্রিয়েন্টস ও অন্যান্য উপাদান : লাল রঙের জাম্বুরা নানা রকম ফাইটোনিউট্রিয়েন্টসে সমৃদ্ধ। এগুলোর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে। এগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- ফ্ল্যাভোনয়েড, নারিঞ্জেনিন ও নারিঞ্জিন। রয়েছে লাইকোপেন, বিটা ক্যারোটিন, জ্যান্থিন ও লিউটিন। আরো আছে খাদ্য আঁশ পেকটিন।
স্বাস্থ্য তথ্য : * পেকটিন রক্তের কোলেস্টেরল কমাতে সাহায্য করে। এ ছাড়া এটি ল্যাক্সেটিভ হিসেবে কাজ করে শরীরের দূষিত পর্দাথগুলো শরীর থেকে বের করে দিতে সহায়তা করে। * ভিটামিন এ ও ফ্ল্যাভোনয়েড দৃষ্টিশক্তির জন্য আবশ্যক। এ ছাড়া ভিটামিন এ নিশ্চিত করে ত্বকের স্বাস্থ্য ও মিউকাস মেমব্রেনের সুস্থতা। * ভিটামিন সি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে তোলে, সাথে সাথে রক্ষা করে ক্ষতিকর ফ্রি রেডিক্যালস থেকে। এ ছাড়া আয়রন শোষণেও এটি সহায়তা করে।
* লাইকোপেন তেজষ্ক্রিয় রশ্মির ক্ষতিকর প্রভাব থেকে ত্বককে রক্ষা করে।
ঔষধি গুণ, ওজন নিয়ন্ত্রণ : জাম্বুরা শরীরে মেটাবলিজম বাড়িয়ে দেয়, ফলে ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা সহজ হয়। এতে রয়েছে এমন কিছু এনজাইম, যা ফ্যাট পুড়িয়ে ফেলতে সাহায্য করে। তা ছাড়া অত্যধিক পানি ও স্বল্প সোডিয়ামের উপস্থিতি একে ওজন কমানোর কার্যকরী খাবার হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে। ক্যালিফোর্নিয়ার নিউট্রিশন অ্যান্ড ম্যাটাবলিজম সেন্টারের এক গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে, শুধু খাবার গ্রহণের ৩০ মিনিট আগে এক গ্লাস জাম্বুরার জুস খেয়ে ১২ সপ্তাহে ওজন কমানো সম্ভব দুই থেকে পাঁচ কেজি পর্যন্ত।
হৃদরোগ নিরাময় : জাম্বুরায় আছে পেকটিন নামক এক ধরনের খাদ্যআঁশ, যা শরীর থেকে ক্ষতিকর কোলেস্টেরল বের করে দিতে সাহায্য করে। এ ছাড়া ফাইটোনিউট্রিয়েন্ট লিমোনয়েড ক্ষতিকর কোলেস্টেরল এলডিএলের উৎপাদন ব্যাহত করে। আর পটাসিয়াম রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। এভাবে জাম্বুরা বা এর জুস নিরাময়ে বিশেষ ভূমিকা পালন করে।
প্রোস্টেটের অসুখ নিরাময়ে : প্রোস্টেটের ক্যান্সারসহ নানা রকম অসুখ নিরাময়ে জাম্বুরা অত্যন্ত উপকারী বলে প্রমাণিত হয়েছে। এতে আছে লাইকোপেন, যা এক ধরনের ক্যারোটিনয়েড রঞ্জন, এটি ক্যান্সার টিউমার ধ্বংসে শক্তিশালী ভূমিকা পালন করে। লাইকোপোনের কার্যক্ষমতা বাড়িয়ে তোলে ভিটামিন সি-এর উপস্থিতি, যা জাম্বুরায় ভালো মাত্রায় আছে। অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট নারিঞ্জেনিন প্রোস্টেট ক্যান্সার কোষের বৃদ্ধি বাধাগ্রস্ত করে। এশিয়ান জার্নাল অব ক্লিনিক্যাল নিউট্রিশনে প্রকাশিত এক গবেষণায় দেখা গেছে, যারা প্রতিদিন লাইকোপেন সমৃদ্ধ ফল যেমন- জাম্বুরা ও গ্রিন টি পান করে, তাদের প্রোস্টেট ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতা অন্যদের তুলনায় ৮২ থেকে ৮৬ শতাংশ কমে যায়।
আর্থ্রাইটিস প্রতিরোধ : জাম্বুরায় স্যালিসাইলিক এসিড আছে, যা শরীরের অজৈব ক্যালসিয়াম ভাঙতে সাহায্য করে। ফলে এগুলো কার্টিলেজ ও জয়েন্টে জমাট বাঁধতে পারে না, তাই আর্থ্রাইটিস হওয়ার প্রবণতা কমে। আর্থ্রাইটিস নিরাময়ের জন্য প্রতিদিন এক গ্লাস জাম্বুরার জুসের সাথে এক চা চামচ আপেল সিডার ভিনেগার মিশিয়ে খেলে উপকার পাওয়া যায়। কিডনি ও গলব্লাডারের পাথর অপসারণে : ব্রিটিশ জার্নাল অব নিউট্রিশনে প্রকাশিত এক গবেষণায় জানা গেছে, প্রতিদিন দুই থেকে চার কাপ জাম্বুরা, আপেল ও কমলার জুস খেলে কিডনিতে পাথর হওয়ার আশঙ্কা কমে যায়। এ ছাড়া এটি গলব্লাডারের পাথর দ্রবীভূত করে শরীর থেকে বের করে দিতে সাহায্য করে।
বর্ষাকালে ঠাণ্ডায় সর্দি লাগলে : বাতাবি লেবু বা জাম্বুরা খেলে উপকার হয়। এ ছাড়া অল্প গরম পানিতে লেবুর রস দিয়ে খেলেও সর্দি কমে যাবে। দৈনিক ভাতের সাথে লেবুর রস খেলেও উপকার হয়। বর্তমানে আমাদের দেশে প্রচুর জাম্বুরা পাওয়া যায়। দামও কম। আসুন বিদেশী কমলা ও মাল্টা না খেয়ে যত দিন জাম্বুরা পাওয়া যায়, তত দিন জাম্বুরা খেয়ে ভিটামিন সি’র অভাব পূরণ করি।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা