২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ন ১৪৩১, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

ব্যথামুক্ত স্বাভাবিক ডেলিভারির নতুন যুগে আদ্-দ্বীন

ব্যথামুক্ত স্বাভাবিক ডেলিভারির নতুন যুগে আদ্-দ্বীন - ছবি : সংগৃহীত

মাত্র সাড়ে পাঁচ হাজার টাকায় ব্যথামুক্ত স্বাভাবিক ডেলিভারির নতুন যুগের সূচনা করেছে আদ্-দ্বীন হাসপাতাল। কোনো প্রকার জটিলতা ছাড়া এখন থেকে এই হাসপাতালে যে কেউ চাইলেই ব্যথামুক্ত সন্তান প্রসবের সুযোগ গ্রহণ করতে পারবেন। হাসপাতালের লেবার ওয়ার্ডে সম্প্রতি নতুন এই সেবা চালু করা হয়েছে। নতুন এই সেবা পেয়ে রোগী ও তাদের আত্মীয়স্বজনরা অত্যন্ত খুশি। সাফল্যে উচ্ছ্বসিত হাসপাতালের ডাক্তার-নার্সরাও। গত ৯ ফেব্রুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত ছয়টি ব্যথামুক্ত স্বাভাবিক ডেলিভারি সফলভাবে সম্পন্ন করেছে আদ্-দ্বীন হাসপাতাল।

গর্ভবতী মায়েদের যথাযথ পরীক্ষা-নিরীক্ষা ছাড়াই নির্বিচারে সিজারিয়ান অপারেশনের অভিযোগ যখন বেশির ভাগ হাসপাতাল ও ক্লিনিকের বিরুদ্ধে খুবই জোরালো- ঠিক তখনই ঢাকার মগবাজারে আদ্-দ্বীন হাসপাতালে ব্যথামুক্ত নরমাল ডেলিভারির নতুন যুগের সূচনা হয়েছে। এমনিতেই আদ্-দ্বীনের পলিসি হলো স্বাভাবিক ডেলিভারিকে উৎসাহিত করা। নতুন এই সেবায় ব্যাপক আগ্রহ দেখাচ্ছেন অভিভাবক ও গর্ভবতী মায়েরা।

রাজধানী ঢাকার প্রাণকেন্দ্র মগবাজারে আদ্-দ্বীন হাসপাতালের অবস্থান। হাসপাতালের সাথেই রয়েছে আদ্-দ্বীন মহিলা মেডিক্যাল কলেজ। ৫০০ শয্যার এই হাসপাতালটিতে মহিলা, পুরুষ ও শিশু সবার সব ধরনের চিকিৎসাসেবা দেয়া হয়। তবে মহিলা রোগীর সংখ্যা এখানে সবসময়ই বেশি। প্রসূতি মায়েদের এখানে বিশেষ যত্ন ও নিবিড় সেবাদানের কারণে অনেকের কাছে হাসপাতালটি বিশেষ আকর্ষণের জায়গা হয়ে উঠেছে। দক্ষ চিকিৎসক, ধাত্রী ও নার্সদের সার্বক্ষণিক সেবা এবং অভিজ্ঞ কর্মকর্তাদের তত্ত্বাবধানের কারণে হাসপাতালটিতে দিন দিন রোগীর ভিড় বাড়ছে। স্বল্পমূল্যে এমন চিকিৎসাসেবা বাংলাদেশের কোথাও আর নেই।

এ বিষয়ে আদ্-দ্বীন ফাউন্ডেশন পরিচালিত হাসপাতালগুলোর পরিচালক ডা: নাহিদ ইয়াসমিন বলেন, ‘আগামী প্রজন্মকে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাসম্পন্ন হিসেবে গড়তে সিজারিয়ান অপারেশনের চেয়ে নরমাল ডেলিভারির ক্ষেত্রে গুরুত্ব দিচ্ছে আদ্-দ্বীন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। পরিসংখ্যানে দেখা যায়, যেসব মা গর্ভবতী অবস্থায় আদ্-দ্বীন হাসপাতালের সেবা নিয়েছেন, তাদের ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ নরমাল ডেলিভারি হয়েছে এই হাসপাতালে।’

তিনি আরো বলেন, ‘ব্যথামুক্ত নরমাল ডেলিভারির জন্য সন্তান গর্ভধারণের পর থেকে আমাদের সাথে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখা জরুরি। আমাদের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরা নিয়মিত চেকআপ, পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও গর্ভের সন্তানের অবস্থান দেখেন।

সব কিছুু স্বাভাবিক থাকলে ইপিডুরাল অ্যানেস্থেসিয়া দিয়ে ব্যথামুক্ত নরমাল ডেলিভারি করা হয়ে থাকে।
হাসপাতালের অ্যানেস্থেসিয়া বিভাগের প্রধান প্রফেসর ডা: আজিজুল গফুর জানান, এই মেথডে প্রসববেদনার সময় ইপিডুরাল অ্যানেস্থেসিয়া দেয়া হয়। এরপর তাকে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখা হয়। গর্ভস্থ সন্তান ও মাকে ক্লোজ মনিটরিং করা হয়। জটিলতা না হলে এভাবেই নরমাল সন্তান ডেলিভারি করানো হয়। পরিস্থিতি অনুযায়ী ৫ থেকে ১০ ঘণ্টা কখনো তার চেয়েও কম সময়ে সন্তান ডেলিভারি হয়। তিনি বলেন, ‘আদ্-দ্বীন হাসপাতালে ব্যথামুক্ত নরমাল ডেলিভারিতে খরচও কম। আমরা রোগীদের কাছ থেকে মাত্র সাড়ে পাঁচ হাজার টাকা নিয়ে থাকি।’

হাসপাতালের সিনিয়র মেট্রোন আফরোজা বানু বলেন, প্রতি বছর এই হাসপাতালে গর্ভবতী অবস্থায় শুরু থেকে চেক আপের মাধ্যমে যত সংখ্যক গর্ভবতী মা ভর্তি হন তাদের ৮০ শতাংশ ক্ষেত্রেই নরমাল ডেলিভারি হয়ে থাকে। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, চলতি বছরে জানুয়ারি থেকে ২৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ৬০৫টি স্বাভাবিক ডেলিভারি হয়েছে। এর মধ্যে ৫২৫ জনই আদ্-দ্বীন হাসপাতালে গর্ভকালীন চিকিৎসাসেবা গ্রহণ করেছেন। এ ছাড়াও ২০১৬ সালে চার হাজার ৯৬টি এবং ২০১৮ সালে চার হাজার ২৩০টি স্বাভাবিক ডেলিভারি হয়েছে। এই সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। সৌদি আরব ও জর্দানে নার্সিং পেশায় দীর্ঘ অভিজ্ঞতা রয়েছে আফরোজা বানুর। তিনি জানান, আদ্-দ্বীনে তারা মাসে ৪৫০ থেকে ৫০০ প্রসূতির নরমাল ডেলিভারির ব্যবস্থা করেন। ‘যেসব রোগী আমাদের তত্ত্বাবধান ও পর্যবেক্ষণে থাকেন, তাদের বেশির ভাগই নরমাল ডেলিভারি হয়।

তবে জটিলতা হয় রেফার্ড রোগীদের নিয়ে। তারা আসেন অনেকটা জটিলতা নিয়ে।’ সম্প্রতি চালু হওয়া নরমাল ডেলিভারি সাপোর্ট কার্যক্রম নিয়ে তিনি বলেন, ‘অনেক প্রসূতি আছেন যারা ‘প্রসবকালীন পেইন’ সহ্য করতে রাজি নন। নরমাল ডেলিভারির সম্ভাবনা থাকলেও তারা সিজারিয়ানের জন্য পীড়াপীড়ি করেন। তাদের জন্যই এই ব্যথামুক্ত ডেলিভারির কার্যক্রম হাতে নেয়া হয়েছে। এই উদ্যোগে রোগীর ডেলিভারি যেমন স্বাভাবিক হবে ঠিক তেমনি তিনি কোনো ব্যথাও অনুভব করবেন না। এ পর্যন্ত এ রকম ছয়টি কেস সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে।

সেবাগ্রহী প্রেমা আঞ্জুম বলেন, ‘সন্তান গর্ভে থাকতে খুব চিন্তা করতাম। ডেলিভারি পেইনকে খুব ভয় পেতাম। সব দুশ্চিন্তা দূর করে আশার আলো দেখিয়েছে আদ্-দ্বীন হাসপাতাল। হাসপাতালটি ব্যথামুক্ত সফল ডেলিভারি সেবায় অগ্রদূত হয়ে থাকবে।’


আরো সংবাদ



premium cement