২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ন ১৪৩১, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

মেসির সেই জাদুকরি ফ্রি-কিকের গুরু ম্যারাডেনা!

- ছবি : সংগৃহীত

ফুটবল অঙ্গনে গত এক দশক ধরে লিওনেল মেসির প্রতি ম্যাচেই কোনো না কোনো জাদুকরি দৃশ্য উপভোগ করেন ফুটবলপ্রেমীরা। এমন দৃশ্যগুলো দেখতে দেখতে অভ্যস্ত হয়ে গেছে ফুটবল বিশ্বের চোখ।

কিছুদিন আগেই লা লিগার ম্যাচে পানেনকা ফ্রি-কিকে গোল করেছিলেন মেসি, চ্যাম্পিয়নস লিগে লিভারপুলের বিপক্ষে করেছেন ফ্রি-কিক থেকে অসাধ্য এক গোল! অ্যালিসন তাঁর সামর্থ্যের সর্বোচ্চটা দিয়েই ঝাঁপিয়েছিলেন, কিন্তু মেসির পা থেকে যাওয়া বলটা পোস্ট ও ক্রসবারের জোড়ার অংশটার কাছের এমন একটা জায়গা দিয়ে জালে ঢুকেছে, যেটা আটকানো অসম্ভব।

মেসির এই জাদুকরি ফ্রি-কিক নিয়ে এবার মুখ খুললেন আর্জেন্টিনা জাতীয় দলের একসময়ের ফিটনেস ট্রেনার ফের্নান্দো সিনোরিনি। তার দাবি, মেসিকে ফ্রি-কিক নেওয়া শিখিয়েছেন দিয়েগো ম্যারাডোনাই।

২০১০ বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনার কোচ ছিলেন ম্যারাডোনা। তারই সহকারী হিসেবে ফিটনেস ট্রেনার ছিলেন সিনোরিনি, তিনিই লিখেছেন, ‘২০০৯ সালের ফেব্রুয়ারির কথা। ম্যারাডোনা মাসকয়েক হয় দায়িত্ব নিয়েছেন। নিয়মিত অনুশীলনের পর শুটিং অনুশীলন করতে থেকে গিয়েছিল কার্লোস তেভেজ, হাভিয়ের মাসচেরানো আর মেসি। সে ফ্রি-কিকে যে শটটা নিয়েছিল সেটা গোলপোস্টের একটু ওপর দিয়ে বেরিয়ে যায়। সে বিরক্ত হয়েই ফিরছিল, আমি বললাম ‘তুমি কি ওই জঘন্য শটের পর কিছুই করবে না?’

ম্যারাডোনা আমার কথা শুনে ফেলেন এবং আমাদের ডাকেন। মেসির কাঁধে হাত রেখে বলেন, ‘শট নেওয়ার সময় তাড়াহুড়া করবে না। পা আরেকটু আস্তে চালাও। বল যদি নাই বোঝে তুমি কী করতে যাচ্ছ, তাহলে কিভাবে হবে!’

এরপর ম্যারাডোনা দেখিয়ে দেন কী করে টপ কর্নার দিয়ে বল জালে পাঠাতে হয় আর সেটা নাকি মন্ত্রমুগ্ধের মতো দেখে যান মেসি। এর পর থেকেই জাতীয় দল হোক কিংবা ক্লাব, ফ্রি-কিক শুটিং হয়ে ওঠে মেসির নিয়মিত অনুশীলনের অংশ। বার্সেলোনার হুয়ান গাম্পার অনুশীলন মাঠে নাকি মেসি প্রায়ই ফ্রি-কিক অনুশীলনে ব্যতিব্যস্ত রাখেন বার্সেলোনার দুই গোলরক্ষক মার্ক আন্দের টের স্টেগান ও জ্যাসপার সিলেসেনকে।

মেসি নিজেই অবশ্য গত বছর বলেছিলেন, ‘অনুশীলনের কোনো বিকল্প নেই। অনুশীলন করতে করতে একটা অভ্যাসের পর্যায়ে নিয়ে আসতে হবে। অন্য যেকোনো দক্ষতার মতোই ফ্রি-কিক অনুশীলন দরকার।’

এই মৌসুমে ৫৬ বার গোলমুখী ফ্রি-কিক নিয়েছেন মেসি, যার আটটিতেই হয়েছেন সফল। রোনালদো এই মৌসুমে ২৪ বার ফ্রি-কিক নিয়েও গোল করতে পারেননি। গত ১০ মৌসুমে ফ্রি-কিক থেকে মেসির গোলের সংখ্যা ৩১। ইউরোপের শীর্ষ পাঁচ লিগে মেসির সমান ফ্রি-কিক গোল কেউই করতে পারেননি। সবচেয়ে কাছাকাছি জায়গায় রোনালদো, ২৪ গোল করেছেন ফ্রি-কিকে। শুধু সংখ্যাতেই নয়; দূরত্ব, বাঁক এবং কৌশল—কোনো দিকেই মেসি পিছিয়ে নেই। লিভারপুলের বিপক্ষে গোলটায় মেসি শট নিয়েছিলেন ৩১.৭ গজ দূর থেকে, বলের গতি ছিল ঘণ্টায় ৬৭ মাইল। আলাভেসের বিপক্ষে মাটিতে গড়ানো শটে গোলের সময় শট নিয়েছিলেন ২২.৭ গজ দূর থেকে, গতি ছিল ঘণ্টায় ৪৫ মাইল। আর ১৮ গজ দূর থেকে নেওয়া পানেনকা ফ্রি-কিকে এস্পানিওলের বিপক্ষে করা গোলটায় বলের গতি ছিল মাত্র ২৮ মাইল।

অর্থাৎ দূর থেকে, কাছে থেকে, মানবপ্রাচীরের ওপর দিয়ে, বাঁক খাইয়ে কিংবা গড়িয়ে; যেকোনোভাবেই গোল করার সামর্থ্য আছে মেসির। তাই ফ্রি-কিকের শ্রেষ্ঠত্বের মুকুটটাও মেসিকে দেওয়া যায় অনায়াসেই। তাই তো একসময়ের সমালোচক হোসে মরিনহোও মেসির শ্রেষ্ঠত্ব মেনে নিয়ে তাঁকে দিয়েছেন ফুটবল ঈশ্বরের খেতাব, ‘লিভারপুল সাহস দেখিয়েছে। মনে হয় না গত ২০ বছরে কোনো দল বল দখলে বার্সেলোনাকে হারাতে পেরেছে। কিন্তু ‘ফুটবল ঈশ্বর’ সব পাল্টে দেয়। অবশ্যই বার্সেলোনা দারুণ দল, চমৎকার সব খেলোয়াড় কিন্তু ওই একজন আসলেই সবার চেয়ে আলাদা।’
সূত্র : মেইল অনলাইন, মার্কা


আরো সংবাদ



premium cement