১৪ খণ্ডে বঙ্গবন্ধুর ‘সিক্রেট ডকুমেন্ট’ প্রকাশ করা হবে : সংসদে প্রধানমন্ত্রী
- বাসস
- ১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ০০:০০
প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা শেখ হাসিনা বলেছেন, জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী উদযাপনের সময়ই ‘সিক্রেট ডকুমেন্ট অব ইন্টেলিজেন্স ব্রাঞ্চ অন ফাদার অব দি নেশন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান’-এর পুরো ১৪টি খণ্ড প্রকাশ করা হবে। একই সাথে জাতির পিতার লেখা ‘স্মৃতিকথা,’ এবং চীন সফরের ওপর রচিত একটি ভ্রমণ বর্ণনামূলক গ্রন্থও প্রকাশের উদ্যোগ নেয়া হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন,‘স্বাধীনতা সংগ্রামসহ প্রতিটি ক্ষেত্রে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানেরই অবদান এবং তিনিই অগ্রণী ভূমিকা নিয়েছিলেন; কিন্তু দুর্ভাগ্য হলো তার নামটা আমাদের দেশে সম্পূর্ণভাবে মুছে ফেলার অপচেষ্টা করা হয়েছিল। তাই ইতিহাসের সত্য ঘটনা উদ্ভাসিত করার জন্যই এটি প্রকাশের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।’
প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা শেখ হাসিনা গতকাল বুধবার বিকেলে জাতীয় সংসদে তার জন্য নির্ধারিত প্রশ্নোত্তর পর্বে জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য মুজিবুল হকের এক সম্পূরক প্রশ্নের উত্তরে এ কথা বলেন। এ সময় ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী স্পিকারের দায়িত্ব পালন করছিলেন।
প্রধানমন্ত্রী জাতির পিতার আত্মজীবনী লেখার প্রেক্ষাপট তুলে ধরে বলেন, ‘জাতির পিতা যখন জেলে ছিলেন তখন আমার মা তাকে খাতা দিয়ে আসতেন ও লিখতে প্রেরণা দিতেন। সেই অনুপ্রেরণাতেই তিনি লিখতে শুরু করেন। তার জীবনে অনেক কিছু তিনি লেখেন।’ তিনি বলেন, এ ব্যাপারে তার মা (বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব) সব সময় সচেতন ছিলেন। তিনি লেখার জন্য খাতা দেয়ার পাশাপাশি পড়ার জন্য বঙ্গবন্ধুর দেয়া তালিকা থেকে কারাগারে বইও কিনে দিতেন।
শেখ হাসিনা বলেন, বঙ্গবন্ধু যখন কারাগার থেকে মুক্তি পেতেন তখন তার মা জেল গেটে গিয়ে তার বাবার কাছ থেকে ওই আত্মজীবনী লেখা খাতা এবং বইগুলো সংগ্রহ করতেন। এমনকি একাত্তর সালের ২৫ মার্চ মধ্যরাতে জাতির পিতা ধানমন্ডি ৩২ নম্বর থেকে গ্রেফতারের পরদিন ওই ৩২ নম্বরের বাড়ি লুট হলেও ওই খাতাগুলো কিন্তু সংরক্ষণ করা ছিল। তিনি বলেন, আমার মায়ের নির্দেশে তিনি যেখানে খাতাগুলো রেখেছিলেন সেখান থেকে পরে আমরা তা উদ্ধার করেছিলাম। এরপর ’৭৫-এ জাতির পিতাকে হত্যার পর আমি যখন দেশে ফিরে আসি তখনকার রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান আমাদের ওই বাড়িতে ঢুকতে দেয়নি। রাস্তার ওপর বসেই আমরা দোয়া-দরুদ পাঠ করেছি। এরপর প্রথম যখন ওই বাড়িতে ঢোকার সুযোগ পেলাম তখন আমার মায়ের বলে দেয়া জায়গা থেকেই সর্বপ্রথম খাতাগুলো উদ্ধার করলাম। প্রধানমন্ত্রী বলেন, সেই খাতাগুলোর মধ্য থেকেই অসমাপ্ত আত্মজীবনী এবং ‘কারাগারের রোজনামচা’ আমরা প্রকাশ করেছি। তিনি বলেন, অসমাপ্ত আত্মজীবনীতে ’৫৪ সাল পর্যন্ত বিষয়গুলো লেখা। আর কারাগারের রোজনামচা হচ্ছে ’৬৬ থেকে ’৬৮ সালের ঘটনাপঞ্জি নিয়ে রচিত। তিনি যখন ছয় দফা দিলেন সে সময়কার ঘটনা এটি। শেখ হাসিনা বলেন, এর বাইরেও আরো কিছু লেখা আছে, যা বঙ্গবন্ধু নিজেই নাম রেখে গিয়েছিলেন ‘স্মৃতিকথা’। সেটি অনেকটা অসমাপ্ত আত্মজীবনীর মতোই। এটি আরো অনেক বেশি তথ্যসংবলিত। সেটি ইতোমধ্যে তৈরি করেছি। সেটি আমরা ছাপাব। সেটির বাংলার কাজ হয়ে গেছে। ইংরেজির অনুবাদও হয়ে গেছে।
প্রধানমন্ত্রী নিজেই প্রতিটি লাইন অনুবাদের সাথে মিলিয়ে দেখছেন উল্লেখ করে বলেন, এই কাজে তার বান্ধবী প্রয়াত সংসদ সদস্য বেবী মওদুদ তাকে সহায়তা করতেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৫২ সালে তদানীন্তন পাকিস্তান থেকে জাতির পিতা চীন সফরে যান। সেখানে সে সময় একটি শান্তি সম্মেলন হয়েছিল। তিনি ’৫২ সালে তার ওই চীন ভ্রমণ এবং অভিজ্ঞতা সম্পর্কে লিখেছিলেন। সেই বইটাও মোটামুটি তৈরি হয়ে গেছে এবং ইতোমধ্যে প্রকাশনার জন্য দিয়ে দেয়া হয়েছে।
শেখ হাসিনা বলেন, জাতির পিতার জীবনীর কথা গাফ্ফার চৌধুরী, মাহবুব তালুকদার, তৎকালীন সাংবাদিক জাওয়াদুল করিমসহ কয়েকজন জাতির পিতার কাছ থেকে রেকর্ড করে নিতেন। সে ধরনের চারটি টেপ আমি গণভবন থেকে উদ্ধার করি। তিনি বলেন, একটি টেপের স্ক্রিপ্ট আমি ও বেবী মিলে তৈরি করি। সেখানে দেখলাম অনেক জায়গায় জাতির পিতার ‘স্মৃতিকথার’ সাথে সেটি মিলে যায়। কাজেই সেগুলো ‘স্মৃতিকথার’ সাথে সংযুক্ত করে আমরা সেটি তৈরি করে রেখেছি। এটি আরো পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে আমরা ছাপতে দেবো।
সিক্রেটস ডকুমেন্ট সম্পর্কে শেখ হাসিনা বলেন, ’৯৬ সালে ক্ষমতায় আসার পর পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্থার ৪৮টি ফাইল উদ্ধার করি, যা ’৪৮ সাল থেকে ’৭১ সাল পর্যন্ত সময়ে জাতির পিতার বিরুদ্ধে লেখা। প্রায় ৪০ হাজার পাতার মতো। ৯ থেকে ১০ হাজার পাতার মতো সম্পাদনা করে সেটি আমরা ‘সিক্রেট ডকুমেন্ট’ হিসেবে ১৪টি খণ্ডে প্রকাশের উদ্যোগ নিয়েছি।
হাক্কানী পাবলিশার্স এটি প্রকাশ শুরু করেছে এবং ইতোমধ্যে প্রথম ও দ্বিতীয় খণ্ড প্রকাশ হয়েছে। তৃতীয় খণ্ডটিও ছাপাখানায় চলে গেছে। আর চতুর্থ খণ্ডটি বর্তমানে আমার কাছে আছে। এটা আমি এখন দেখছি। সেটি প্রয়োজনীয় সম্পাদনা আমি করব।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সেই গোয়েন্দা রিপোর্টে একটা জিনিস পেয়েছিলাম। জাতির পিতার দুইখানা লেখা খাতাও পাকিস্তান সরকার বাজেয়াপ্ত করেছিল। তিনি বলেন, সেখানে একটি খাতা আমরা উদ্ধার করেছি এবং আরেকটি তার হাতের লেখা পেয়েছি। অস্ট্রেলিয়ার একজন প্রবাসী বাঙালি বিজ্ঞানী গোপালগঞ্জ সমিতির এক সভায় জাতির পিতার সেই লেখনীর একটি ফটোকপি এনে আমাকে দেখান। সেখান থেকে ওই খাতা উদ্ধার করে ‘স্মৃতিকথা’র সাথেই একসাথে আমরা প্রকাশের উদ্যোগ নিয়েছি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা আশা করছি, জাতির পিতার জন্মশতবর্ষ উদযাপনের মধ্যেই এই ১৪ খণ্ড প্রকাশ করতে পারব।’
২০২০ সালের ১৭ মার্চ জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী থেকে ২০২১ সালের ২৬ মার্চ স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী পর্যন্ত সময়কে ইতোমধ্যে ‘মুজিব বর্ষ’ হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে বলেও প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন।
প্রধানমন্ত্রীর প্রশংসা এডিবির কান্ট্রি ডিরেক্টরের : এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) কান্ট্রি ডিরেক্টর মনমোহন প্রকাশ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পরিকল্পিত উন্নয়ন উদ্যোগের ভূয়সী প্রশংসা করেছেন। তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বর্তমান সরকারের বাস্তবমুখী পদক্ষেপের কারণে দারিদ্র্যের হার ১৯৭২ সালের ৮২ শতাংশ থেকে ২১ শতাংশে নেমে এসেছে।’
গত বুধবার সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে তার জাতীয় সংসদ কার্যালয়ে সৌজন্য সাক্ষাৎকালে এডিবির কান্ট্রি ডিরেক্টর এ প্রশংসা করেন। বৈঠক শেষে প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম এ ব্যাপারে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন। পরিকল্পিতভাবে দেশের উন্নয়নের ওপর গুরুত্বারোপ করে শেখ হাসিনা বলেন, কাউকেই যেখানে সেখানে শিল্প স্থাপনের অনুমতি দেয়া হবে না। তিনি বলেন, সরকার দেশব্যাপী অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা করেছে, যাতে উদ্যোক্তারা সেখানে কলকারখানা স্থাপন করতে পারেন।
প্রধানমন্ত্রীর শোক : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ফরিদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ও জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান কাজী জায়নুল আবেদীনের মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন। গতকাল এক শোক বার্তায় প্রধানমন্ত্রী জায়নুল আবেদীনের অবদানের কথা শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করে বলেন, তার মৃত্যুতে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ একজন নিষ্ঠাবান নেতাকে হারাল। শেখ হাসিনা মরহুমের রূহের মাগফিরাত কামনা করেন এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি সমবেদনা জানান।