১৭ নভেম্বর ২০২৪, ২ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ১৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

অনলাইনে হাজার কোটি টাকার কেনাবেচা

ব্যস্ততা ও যানজট এড়াতে ভার্চুয়াল জগৎই পছন্দ নগরবাসীর; প্রভাব পড়ছে বড় শপিংমলগুলোতে
-

নগরজীবনের ব্যস্ততা, চরম উষ্ণ আবহাওয়া, যানজট আর দরকষাকষির ঝক্কি-ঝামেলা এড়াতে অনেকেই ঝুঁকছেন অনলাইন কেনাকাটায়। ঘরে বসে ছবি দেখে পছন্দের পণ্যটি অর্ডার করছেন একটি ক্লিকেই। ৪০ থেকে ১০০ টাকার চার্জের বিনিময়ে একদিনের মধ্যেই পণ্য পৌঁছে যাচ্ছে গ্রাহকের দরজায়। গত কয়েক বছর ধরেই কেনাকাটার এই মাধ্যমটি বেশ জনপ্রিয় হয়ে ওঠছে। অনলাইনে এবার ঈদকেন্দ্রিক কেনাবেচা হাজার কোটি টাকা ছাড়ার আশাবাদ ব্যক্ত করছেন সংশ্লিষ্টরা।
ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অফ বাংলাদেশ (ইক্যাব) এর তথ্যমতে, এখনকার অনলাইন মার্কেটে জামা-কাপড়, জুয়েলারি, শাড়ি, প্রসাধনী, ঘর গোছানোর সামগ্রী, চাল-ডাল, মাছ-মাংস, সবজি থেকে শুরু করে জমি, ফ্ল্যাট, গাড়ি, কম্পিউটার, মোবাইল ফোন, গহনা, ব্যাগ-কসমেটিকসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় প্রায় সব পণ্যই মিলছে। বাদ যাচ্ছে না রমজান মাসের সেহরি এবং ইফতারও। রাজধানীর অভিজাত এলাকাগুলোতে নামীদামিসহ বিভিন্ন রেস্টুরেন্ট অর্ডার করলেই ঘরে পৌঁছে দিচ্ছে পছন্দসই সেহরি ও ইফতার। এর জনপ্রিয়তা ও আগ্রহের কারণে উদ্যোক্তারাও প্রতিনিয়ত নতুন নতুন ই-কমার্স সাইট নিয়ে আসছেন। ওয়েব সাইটের পাশাপাশি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকও যোগ হচ্ছে এই বেচাকেনায়। ক্রেতাদের সুবিধার কথা মাথায় রেখে কয়েক বছর ধরে আয়োজন করা হচ্ছে অনলাইন ঈদ মেলারও। অনলাইনে অর্ডারের ক্ষেত্রে পিছিয়ে নেই নারীরা। কেনাকাটায় সিংহভাগই তাদের অর্ডার বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্টরা।
এ দিকে ঈদকে সামনে রেখে প্রায় প্রত্যেকটি অনলাইন শপই বিভিন্ন ছাড় দিয়ে ক্রেতাদের আকৃষ্ট করার চেষ্টা করছে। এই মওসুমে ব্যাপক পণ্য সমাগমও করেছে প্রতিষ্ঠানগুলো। অনলাইন শপ দারাজ ৭৫ শতাংশ পর্যন্ত ছাড় দিচ্ছে। মেয়েদের রূপচর্চা বিষয়ক কিছু পণ্যে ৮০ শতাংশ পর্যন্ত ছাড় দিচ্ছে অনেক প্রতিষ্ঠান। এ ছাড়া বাগডুম, প্রিয়শপ, কিনলেডটকম, পিকাবো, আজকের ডিলসহ প্রায় প্রত্যেকটি শপই ঈদের জন্য রেখেছে তাদের বিশেষ অফার। অনেক প্রতিষ্ঠানই বিকাশে পেমেন্ট করলে দিচ্ছে ডিসকাউন্টসহ ক্যাশব্যাক অফার।
সংশ্লিষ্টরা জানান, ই-কমার্স সাইটগুলো থেকে কেনাকাটা করেন এমন মানুষের সংখ্যা বাড়ছে দিনকে দিন। শুধু রাজধানীতে নয়; এখন সরা দেশেই বাড়ছে অনলাইনে কেনাকাটা। এত দিন কেবল ঢাকা কেন্দ্রিক অনলাইন মার্কেট থাকলেও এখন দেশের বড় বড় শহরগুলোতেও গড়ে উঠছে এ ধরনের কেনাবেচা। তা ধীরে ধীরে ছড়িয়ে যাচ্ছে শহর থেকে গ্রামে।
ই-কাব জানায়, প্রতিদিন দেশের প্রায় এক হাজার অনলাইন শপ অনলাইনের মাধ্যমে প্রায় ২০ হাজার অর্ডার ডেলিভারি দেয়। এ ছাড়া ফেসবুকভিত্তিক আছে ১০ হাজারেরও বেশি।
উদ্যোক্তাদের মতে, নতুনদের পাশাপাশি বিশ্বের বড় মাপের বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানগুলো এখন তাদের পণ্যের প্রচারে ব্যবহার করছে ফেসবুক। অল্প পুঁজিতে, এমনকি বিনাপুঁজিতে এ ব্যবসা করা যায়। ঘরে বসেই ব্যবসা পরিচালনা করা যায়। তাই নতুন উদ্যোক্তাদের কাছে এ মাধ্যমটি বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। কয়েক বছর আগেও ঈদ শপিং মানেই ছোটবড় বিভিন্ন শপিংমল, বিপণিবিতান ও ফ্যাশন হাউজে ঘুরে ঘুরে পণ্য কেনার মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল। কিন্তু সম্প্রতি তথ্য-প্রযুক্তির এ যুগে অনেক ব্যবসা কার্যক্রম চলছে ডিজিটাল পদ্ধতিতে। ফলে এক দিকে যেমন অনলাইন শপিংয়ের পরিধি ও পরিসর সম্প্রসারিত হচ্ছে অন্য দিকে রাজধানীসহ অন্যান্য শহরের বড় বড় শপিং কমপ্লেক্সেও পড়ছে তার প্রভাব। যদিও ব্যবসায়ীদের দাবি অনলাইনের এই দাপাদাপিতেও বাজারে তেমন কোনোও প্রভাব পড়েনি।
তথ্যপ্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ এবং ই-কমার্স বিশ্লেষকরা বলছেন, গত দুই বছরে রাজধানী ও এর আশপাশসহ বড় শহরগুলোর কেনাকাটার চরিত্রে অনেক পরিবর্তন এসেছে। এর ফলে চিরাচরিত বাজারগুলোতে ভিড় কমেছে প্রায় ৪০ শতাংশ।
তারা বলছেন, ১৬ থেকে ৫৫ বছরের পুরুষ ক্রেতাদের বেশির ভাগই অনলাইনে জিনিস কিনতে পছন্দ করছেন।
ঠিক তেমনই ১৬ থেকে ৪৯ বছরের নারীদের কাছেও ব্যাপক জনপ্রিয় হয়েছে অনলাইনে জিনিসপত্র কেনা। বিশেষ করে সেই নারীরা যাদের পেশাগত কারণে প্রতিদিন বাইরে বেরোতে হয়, খুব দ্রুত হারে বাড়ছে এ পরিমাণও।
তারা আরো বলছেন, টেকনোলজির ব্যবহারের ফলে অনলাইনে বেশ কিছুটা কম দামে জিনিস দেয়া সম্ভব, যা কোনোভাবেই সাধারণ দোকানে দেয়া সম্ভব নয়। শুধু পোশাক নয় অন্যান্য জিনিস কেনার ক্ষেত্রেও তাই বাড়ছে অনলাইনের চাহিদা।
এ ব্যাপারে বেসিসের সাবেক সভাপতি ফাহিম মাশরুর বলেন, এখন শুধু অনলাইন ওয়েবসাইটেই (ফেসবুক বাদে) প্রতিদিন ১০ থেকে ১৫ হাজার অর্ডার প্রসেস হয়।
অনলাইনে এখন নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস থেকে সব ধরনের পণ্যই পওয়া যায়। টিকিট বিক্রি, স্বাস্থ্যসেবাও দেয়া হয় অনলাইনে। অনলাইনে সবচেয়ে বড় সুবিধা ক্রেতারা যেটা পাচ্ছেন, সেটা হলো ঘরে বসে অর্ডার দিয়ে ঘরে বসেই পেয়ে যাচ্ছেন। আর অনেক ক্ষেত্রে এই দাম শপিংমলের দামের থেকেও কম থাকায় ক্রেতারাও আগ্রহী হয়ে উঠছেন।
অন্য দিকে সরকারের সহযোগিতা পেলে বাংলাদেশে অনলাইন কেনাকাটা মাল্টি-বিলিয়ন ডলারের ইন্ডাস্ট্রিতে পরিণত হবে বলে মনে করেন বেসিসের সাবেক সভাপতি ও বাগডুম ডটকমের চেয়ারম্যান শামীম আহসান।


আরো সংবাদ



premium cement