২৩ নভেম্বর ২০২৪, ৮ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`
জাতীয় স্বাস্থ্যসেবা সপ্তাহ উদ্বোধন

চিরায়ত চিকিৎসা পদ্ধতিতে গুরুত্বারোপ প্রধানমন্ত্রীর

জাতীয় স্বাস্থ্যসেবা সপ্তাহের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে অ্যাম্বুলেন্সের চাবি হস্তান্তর করছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা :পিআইডি -

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের চিরায়ত চিকিৎসা পদ্ধতির ওপর গুরুত্বারোপ করে প্রচলিত চিকিৎসা ব্যবস্থার পাশাপাশি প্রাচীনকাল থেকে চলে আসা চিরায়ত স্বাস্থ্যসেবা পদ্ধতিকে মূলধারায় ফিরিয়ে আনার আহ্বান জানিয়েছেন।
গতকাল বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আয়োজিত জাতীয় স্বাস্থ্যসেবা সপ্তাহ-২০১৯ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী এ আহ্বান জানান। তিনি বলেন, ‘আমরা ভেষজ, আয়ুর্বেদিক, ইউনানী এবং হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা উপেক্ষা করতে পারি না এবং মানুষের চিকিৎসার সুবিধার জন্য এগুলোর উন্নয়নে আরো গুরুত্ব দিতে হবে।’ প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ বর্তমানে মানসম্পন্ন ওষুধ উৎপাদনে ব্যাপক সাফল্য অর্জন করেছে এবং বিদেশে এর চাহিদা তৈরি হয়েছে, পাশাপাশি চিরায়ত ওষুধেরও ব্যাপক গুরুত্ব রয়েছে।
বিশ্বব্যাপী ভেষজ (হার্বাল) চিকিৎসার চাহিদা ব্যাপক উল্লেখ করে তিনি চিরায়ত চিকিৎসার উন্নয়নে গবেষণার প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্বারোপ করেন। প্রধানমন্ত্রী তৃণমূলপর্যায়ে জরুরি স্বাস্থ্যসেবা সহজতর করতে ২০১৭-১৮ অর্থবছরে সরকারি অর্থে কেনা অ্যাম্বুলেন্স ও জিপ বিতরণ করেন। তিনি জনগণের দোরগোড়ায় স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দিতে তার সরকারের অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করে বলেন, স্বাস্থ্যখাতের সামগ্রিক উন্নয়নে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। সব মানুষকে স্বাস্থ্যসেবার আওতায় আনার অঙ্গীকারের অংশ হিসেবে দেশব্যাপী কমিউনিটি ক্লিনিক স্থাপন করা হয়েছে।
বর্তমান প্রায় ১৪ হাজার ক্লিনিক মা ও শিশুদের স্বাস্থ্যসেবা দিচ্ছে এবং এখান থেকে ৩০টি মারাত্মক রোগের ওষুধ বিনামূল্যে দেয়া হচ্ছে। তিনি দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, ১৯৯৬-২০০১ মেয়াদে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ক্লিনিকগুলো প্রতিষ্ঠিত হওয়ায় পরবর্তী বিএনপি-জামায়াত শাসনামলে স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারী এই বুনিয়াদি প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ করে দেয়া হয়। তিনি বলেন, প্রসবকালীন সময়ের জন্য দক্ষ প্রশিক্ষণ কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। সরকার আইসিটি ব্যবহার করে ‘স্বাস্থ্য বার্তা’ নামে কল সেন্টারের মাধ্যমে টেলি মেডিসিন সেবা চালু করেছে। এসব উদ্যোগ হচ্ছে মূলত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান প্রবর্তিত স্বাস্থ্যসেবারই অংশ।
স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী জাহিদ মালেক অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন। এতে বিশেষ অতিথি ছিলেন প্রতিমন্ত্রী ডা: মো: মুরাদ হাসান। স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব স্বাগত বক্তৃতা দেন। এ ছাড়া বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডাব্লিউএইচও)-এর প্রতিনিধিগণ অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন।
প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন, বঙ্গবন্ধু সংবিধানে স্বাস্থ্যকে পাঁচটি মৌলিক চাহিদার একটি হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করেন। তিনি বলেন, এই সাংবিধানিক নীতির অনুসরণে আওয়ামী লীগ সরকার মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিক্যাল কলেজ এবং প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে জনগণের মানসম্পন্ন চিকিৎসা সুবিধা প্রদান এবং চিকিৎসক ও নার্সদের মতো দক্ষ জনশক্তি তৈরির ওপর গুরুত্বারোপ করেছে। তার সরকার ঢাকায় প্রথম মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করে। পরবর্তীতে সরকার দেশের ৮টি বিভাগের প্রতিটি মেডিক্যাল কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে গড়ে তোলার পরিকল্পনা গ্রহণ করে। বর্তমানে চট্টগ্রাম, সিলেট ও রাজশাহীতে তিনটি মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, স্বাস্থ্য খাতের উন্নয়নের কারণে দেশের গড় আয়ু ৬৬ দশমিক ৮ বছর থেকে বেড়ে ৭২ বছর ছাড়িয়েছে এবং মাতৃমৃত্যুর হার ৩ দশমিক ৪৮ থেকে কমে ১ দশমিক ৭২ (প্রতি হাজারে) এবং শিশু মৃত্যুর হার প্রতি ১০০০ এ ৪১ থেকে কমে ২৪-এ দাঁড়িয়েছে।
আওয়ামী লীগ সরকার সর্বজনীন স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে কাজ করছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, তার সরকার প্রতিবন্ধীদের জন্য আর্থিক সহায়তা দিচ্ছে। আগামী বাজেট থেকে অটিস্টিকসহ সব ধরনের প্রতিবন্ধীকে আর্থিক সহায়তা দেয়া হবে। শেখ হাসিনা এ সময় অটিস্টিকদের কল্যাণে তার কন্যা সায়মা ওয়াজেদ হোসেনের অবদানের কথা স্মরণ করেন।
প্রধানমন্ত্রী হৃদরোগ, স্ট্রোক, ক্যান্সার, ডায়াবেটিস, কিডনি রোগের ব্যাপক বিস্তার ঘটায় এইসব রোগ সম্পর্কে সতর্ক থাকার জন্য দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানান। তিনি বলেন, এই রোগগুলোর জন্য প্রতিকারের চেয়ে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণই উত্তম।


আরো সংবাদ



premium cement