২২ নভেম্বর ২০২৪, ৭ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ১৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

অনুমোদন পাচ্ছে এভিয়েশন অ্যান্ড অ্যারোস্পেসসহ ৪ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়

-

দ বৈমানিক ও বিমান প্রকৌশলী তৈরি করতে দেশে প্রথম এভিয়েশন বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করতে যাচ্ছে সরকার। রাজধানীর আশকোনায় অত্যাধুনিক এ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হবে। এর নাম নির্বাচন করা হয়েছে বঙ্গবন্ধু এভিয়েশন অ্যান্ড অ্যারোস্পেস বিশ্ববিদ্যালয়। একই সাথে আরো তিনটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদন দিতে যাচ্ছে সরকার। বগুড়া, চাঁদপুর ও লক্ষ্মীপুর জেলায় একটি করে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করা হবে। এসব জেলায় কোনো পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় নেই। দেশের প্রতিটি জেলায় একটি করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করার সরকারের রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের অংশ হিসেবে এগুলো প্রতিষ্ঠা করা হচ্ছে। বর্তমানে দেশে ৪২টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। এর মধ্যে ৩৭টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করছে। অন্য ৫টি বিশ্ববিদ্যালয় এখনো শিক্ষা কার্যক্রম শুরু না করলেও সেগুলোর প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো স্থাপন ও সংস্কারের কাজ চলছে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) সূত্রে বলা হয়, এভিয়েশন অ্যান্ড অ্যারোস্পেস বিষয় বিশেষায়িত বিশ্ববিদ্যালয় দেশে এটিই প্রথম। তাই রাজধানীর আশকোনা এলাকায় ১২ একর জমির ওপর এভিয়েশন বিশ্ববিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করা হবে। এ বিশ্ববিদ্যালয়ে অ্যারোনটিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংসহ সংশ্লিষ্ট প্রতিটি বিষয় এবং প্রকৌশল, আইসিটি ও বিজ্ঞানের বিভিন্ন বিষয় পড়ানো হবে। সম্পূর্ণ তথ্যপ্রযুক্তিনির্ভর বিশেষায়িত এ বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য স্থান নির্বাচন, পরিকল্পনা গ্রহণ ও অর্থ বরাদ্দের কাজ এরই মধ্যে শেষ হয়েছে। এখন চলছে আইন তৈরির কাজ। অন্য দিকে মন্ত্রিসভার বৈঠকে বগুড়া, চাঁদপুর ও লক্ষ্মীপুরের এ তিন বিশ্ববিদ্যালয়ের খসড়া আইনটি উপস্থাপনের জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে। মন্ত্রিসভা থেকে অনুমোদন পেলে আইন মন্ত্রণালয় ও ব্যয়সংক্রান্ত বিষয়ের জন্য অর্থ মন্ত্রণালয় পাঠানো হবে। নিয়মানুযায়ী, আইন ও অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে অনুমোদন হলে মন্ত্রিসভার অনুমোদনের পরই আইনটির চূড়ান্তভাবে অনুমোদন ও পাসের জন্য জাতীয় সংসদে উপস্থাপন করা হবে।
শিা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (বিশ্ববিদ্যালয়) মো: আবদুল্লাহ আল হাসান চৌধুরী বলেন, প্রধানমন্ত্রী তিন জেলায় তিনটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনে নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এর পরিপ্রেেিত আমরা কাজ শুরু করেছি। খসড়া আইনটি মন্ত্রিসভায় পাস হলে পরে প্রক্রিয়া শুরু করা হবে।
শিা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিা বিভাগ থেকে জানা গেছে, বাংলাদেশ বিমানবাহিনী ও বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতায় ঢাকায় বঙ্গবন্ধু এভিয়েশন অ্যান্ড অ্যারোস্পেস বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হচ্ছে। এ বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এরই মধ্যে সম্মতি জ্ঞাপন করেছেন। আশকোনায় এ বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপ (বেবিচক) ১২ একর জমি বরাদ্দ দিয়েছে। এখানে ২০২৫ সালের মধ্যে দণি এশিয়ায় এবং ২০৩০ সালের মধ্যে এশিয়ার একটি নেতৃস্থানীয় উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা হবে।
জানা গেছে, শুরুতে তিনটি ফ্যাকাল্টিতে ১০টি বিভাগ চালু করা হবে। এরই মধ্যে বিভাগগুলোতে পড়ানোর জন্য স্নাতক ও স্নাতকোত্তর প্রোগ্রামের আন্তর্জাতিক মানের পাঠ্যক্রম প্রণয়ন করা হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠাসংক্রান্ত সারসংপে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পাঠানো হলে গত বছরের ৫ ফেব্রুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এর নীতিগত অনুমোদন দেন। গত বছর ২৪ এপ্রিল শিা মন্ত্রণালয় পাবলিক এভিয়েশন ইউনিভার্সিটি স্থাপনে খসড়া আইন প্রস্তুত করতে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনকে (ইউজিসি) নির্দেশনা দেয়। ওই নির্দেশনা অনুযায়ী বিমানবাহিনীর প্রতিনিধিসহ ইউজিসি বঙ্গবন্ধু এভিয়েশন অ্যান্ড অ্যারোস্পেস বিশ্ববিদ্যালয় আইনের খসড়া তৈরি করে গত বছরের ১১ জুলাই জমা দেয় শিা মন্ত্রণালয়ে।
খসড়া আইনটি বাংলাদেশ বিমানবাহিনী পুনঃনিরীার সময় তাদের বেশ কিছু পর্যবেণ দেয়। পর্যবেণে বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালস, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেরিটাইম ইউনিভার্সিটি আইনসহ অন্যান্য বিশেষায়িত বিশ্ববিদ্যালয় আইনের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে খসড়াটির পরিমার্জন ও সংযোজন-বিয়োজন করে ৭ মে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ে পাঠায়। বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় পুনঃমতামতসহ খসড়াটি পাঠিয়ে দেয় শিা মন্ত্রণালয়ে। কিন্তু মূল খসড়া আইন থেকে ভাইস চ্যান্সেলরসহ গুরুত্বপূর্ণ পদে নিয়োগের েেত্র সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব বাদ দিয়ে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০ বছরের শিকতার অভিজ্ঞতাসম্পন্ন ব্যক্তিকে ভাইস চ্যান্সেলর হিসেবে নিয়োগের প্রস্তাব করে মতামত দেয়। এ বিষয়ে আপত্তি জানিয়ে গত ১০ সেপ্টেম্বর বিমানবাহিনীর পরিকল্পনা শাখা ভাইস চ্যান্সেলর নিয়োগ বিষয়ে শিা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিা বিভাগের সচিবের কাছে নতুন প্রস্তাব দেয়। প্রস্তাবে বিভিন্ন দেশের উদাহরণ তুলে ধরে বলা হয়, পোল্যান্ড, ইউক্রেন, যুক্তরাজ্যসহ অন্যান্য দেশে এভিয়েশন ইউনিভার্সিটি আইন এবং পাশের দেশ ভারতের রাজীব গান্ধী ন্যাশনাল এভিয়েশন ইউনিভার্সিটি অ্যাক্ট পর্যালোচনা করে দেখা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে নিয়োগের েেত্র সংশ্লিষ্ট বিষয়ে অভিজ্ঞ ব্যক্তিদের নিয়োগ দেয়া হয়েছে। কিন্তু বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় পুনঃমতামতের সময় ভাইস চ্যান্সেলর নিয়োগের েেত্র পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০ বছরের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন শিককে নিয়োগের প্রস্তাব করে। এতে সংশয় দেখা দিলে তা নিয়ে এখন পরীা-নিরীা করছে শিা মন্ত্রণালয়।
এ বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিা বিভাগের উপসচিব (পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়) জিন্নাত রেহানা বলেন, আইনের খসড়ায় সংশোধন, সংযোজন ও পরিমার্জনের বিভিন্ন প্রস্তাব রয়েছে। সংশ্লিষ্টদের সব প্রস্তাব পরীা-নিরীা ও যাচাই-বাছাই চলছে।
তিন জেলায় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় : বগুড়া, চাঁদপুর ও লক্ষ্মীপুর জেলায় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনে আইন প্রণয়নের পাশাপাশি স্থান নির্বাচনের কাজ চলছে।
আমাদের বগুড়া জেলা অফিস থেকে আবুল কালাম আজাদ জানান, বগুড়া জেলায় পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠায় ১৯৯৬-২০০১ সালে আওয়ামী লীগ শাসনামলে একসাথে দেশের ১৫ জেলায় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনে আইন পাস করেছিল। অন্য জেলাগুলোতে বাস্তবায়িত হলেও বগুড়া বিশ্ববিদ্যালয়টি আর কার্যকর হয়নি। ওই সময় পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়টির স্থান নির্বাচন করা হয়েছিল বগুড়া-ঢাকা মহাসড়কের পাশের শাহজাহানপুর উপজেলার জামালপুর নামক স্থানে। এবারো আওয়ামী লীগের শাসনামলের শেষ দিকে এ জেলায় বিজ্ঞান প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার কথা শোনা যাচ্ছে। জেলার নতুন তিনটি স্থান এবার বিবেচনায় নেয়া হচ্ছে। এগুলো হচ্ছে বগুড়া-রংপুর, বগুড়া-নওগাঁ ও বগুড়া-ঢাকা মহাসড়কের পাশে।
জেলা প্রশাসন সূত্রে বলা হয়েছে, কোনো স্থানকেই গতকাল পর্যন্ত চূড়ান্ত করে প্রস্তাবনা পাঠানো হয়নি। আইন পাস হওয়ার পর স্থান নির্বাচনের কথা বলা হচ্ছে।
লক্ষ্মীপুর জেলা সংবাদদাতা আ হ ম মোশতাকুর রহমান জানান, জেলা প্রশাসন বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থান নির্বাচনের জন্য সার্ভেয়ার নিয়োগ করেছে। জেলার ভবানীগঞ্জের চর মনসা এলাকা এবং অপরটি মজু চৌধুরীর হাট এলাকার চর রমনী মোহন এলাকা বিবেচনায় রাখা হয়েছে। তবে, চূড়ান্ত প্রতিবেদন পাঠানো হয়নি।

 


আরো সংবাদ



premium cement