প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগের জট খুলছে
- শাহেদ মতিউর রহমান
- ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ০৭:৪১
প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগের মামলা জট খুলছে। ইতোমধ্যে শিক্ষক নিয়োগের স্থগিতাদেশের বিরুদ্ধে আপিল করে কাজে যোগ দিয়েছে চার জেলার প্রার্থী। নিয়োগপ্রক্রিয়ায় নারী কোটার যথাযথ অনুসরণ হয়নি এমন অভিযোগে দেশের ৪২ জেলায় শিক্ষক নিয়োগ স্থগিত করে আদালত। তবে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতর (ডিপিই) আদালতের ওই স্থগিতাদেশের বিরুদ্ধে আপিল করে ইতোমধ্যে চার জেলার প্রার্থীদের নিয়োগ সম্পন্ন করেছে। এ দিকে স্থগিতাদেশের মধ্যে থাকা বাকি ৩৮ জেলার প্রার্থীরা এখনো অনিশ্চয়তা আর উদ্বেগের মধ্যে রয়েছেন। তারা আগামী ১৩ মার্চ উচ্চ আদালতে ১৭ দিনের ছুটিতে যাওয়ার আগেই মামলার নিষ্পত্তি চেয়ে মিরপুরের ডিপিইতে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন।
এ দিকে লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষার চূড়ান্তভাবে উত্তীর্ণ হওয়ার পর নির্বাচিত প্রার্থীদের গত ১৬ ফেব্রুয়ারির মধ্যে নিজ নিজ জেলা শিক্ষা অফিসের মাধ্যমে যোগদান করতে নিয়োগপত্র দেয়া হলেও আদালতের স্থগিতাদেশ থাকায় ৪২ জেলার প্রার্থীরা যোগদান করতে পারেননি। অবশ্য এর আগেই জানুয়ারি মাসের বিভিন্ন সময়ে শিক্ষক নিয়োগে নারী কোটার যথাযথ অনুসরণ হয়নি মর্মে নিয়োগ বঞ্চিতদের এমন অভিযোগের ভিত্তিতে ৪২ জেলায় শিক্ষক নিয়োগে স্থগিতাদেশ দেন উচ্চ আদালত। তবে ডিপিই নারী কোটার অনুসরণ হয়েছে এমন ব্যাখ্যা দিয়ে স্থগিতাদেশের বিরুদ্ধে আপিল করে। এই আপিলে পক্ষে আদেশ পাচ্ছে ডিপিই। ইতোমধ্যে চার জেলায় নিয়োগপ্রাপ্তদের পক্ষে আদেশ পেয়ে তারা কাজে যোগদানও করেছেন। বাকি ৩৮ জেলাতেও পর্যায়ক্রমে আপিল করা হচেছ। ডিপিই আশা করছে আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে তারা বাকি সব জেলায় আপিলের আদেশ পাবেন। নিয়োগপ্রাপ্তরাও যথানিয়মে কাজেও যোগদান করতে পারবেন।
গতকাল সোমাবার মিরপুরের ডিপিই কার্যালয়ে গিয়ে দেখা গেল দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে উত্তীর্ণ প্রার্থীরা আসছেন খোঁজখবর নিতে। তারা ডিপিই মহাপরিচালক বরাবরে স্মারকলিপি দিয়ে দ্রুততম সময়ে নিয়োগ পাওয়ার দাবিও জানিয়েছেন। একই সাথে গত রোববার জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে মানববন্ধন করে তারা দ্রুত সময়ে নিয়োগের দাবিও জানিয়েছেন। সিরাজগঞ্জ থেকে মিরপুরের ডিপিই অফিসে এসেছেন নিয়োগের অপেক্ষায় থাকা কয়েকজন শিক্ষক। তাদের মধ্যে কবির হোসেন মোল্লা নয়া দিগন্তকে জানান, আমরা নিয়োগপত্র হাতে পেয়েও আদালতের স্থগিতাদেশের কারণে কাজে যোগ দিতে পারছি না। তাই খোঁজ নিতে আজ এখানে এসেছি। অন্যান্য অনেক জেলা থেকেও এসেছেন অনেকে। তারা এই প্রতিবেদককে বলেন, গত ১৩ জানুয়ারি প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতদরের ওয়েবসাইডে আমাদের প্রত্যেকের নাম গেজেটে প্রকাশিত হলেও মামলা জটিলতার কারণে ১৬ ফেব্রুয়ারি কাজে যোগদান করতে পারিনি। নিয়োগপত্র পাওয়ার পর আমাদের অনেকেই আবার আগের চাকরি থেকে ইতোমধ্যে ইস্তফা দিয়েছেন। এক দিকে আগের চাকরি থেকে বিদায় এবং নতুন চাকরিতে যোগদান করতে না পেরে অনেকের মধ্যে এখন চরম অনিশ্চয়তা বিরাজ করছে। আমাদের প্রত্যেকের পরিবারেও এখন হতাশার ঘোর অমানিশা। নিয়োগবঞ্চিতরা বলেন, অবিলম্বে মুজিববর্ষ উপলক্ষে নিজ নিজ পদে যোগদানের ব্যবস্থা করতে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করছি। তারা নির্ধারিত ১৬ ফেব্রুয়ারি থেকেই যোগদান কার্যকর করতে এবং নিয়োগ কার্যক্রমে কে বা কারা এই প্রতিবন্ধকতা তৈরি করল সেটা তদন্ত করে খুুঁজে বের করতে হবে পাশাপাশি দায়ীদের বিরুদ্ধেও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করারও দাবি জানান।
ডিপিই সূত্র জানায়, ১৩ ফেব্রুয়ারি প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের পরিচালক (পলিসি ও অপারেশন) খান মো: নুরুল আমিন স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে উচ্চ আদালতের স্থগিতাদেশ থাকায় ৩৮ জেলায় নিয়োগ স্থগিতের নির্দেশনা জারি করা হয়। নির্দেশনায় বলা হয়, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে রাজস্ব খাতভুক্ত সহকারী শিক্ষক নিয়োগ-২০১৮ এর ফলাফলে ৬০ শতাংশ নারী কোটা সংরক্ষণ হয়নি উল্লেখ করে হাইকোর্টে ৩৮ জেলায় রিট পিটিশন করা হয়েছে। এ রিট পিটিশনের আদেশে আদালত আগামী ছয় মাসের জন্য নিয়োগ কার্যক্রম স্থগিত করেছেন। ফলে আগের ঘোষণা মতে, ১৬ ফেব্রুয়ারি এসব জেলায় যোগদানের বিষয়টি অনিশ্চয়তা দেখা দেয়। একই সাথে মামলাজনিত জটিলতায় এসব জেলায় শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় চূড়ান্তভাবে নির্বাচিত প্রার্থীদের যোগদান, কর্মশালা ও পদায়ন নির্দেশনা স্থগিত করা হয়। আদালতে বিষয়টি সুরাহার পরে এই ৩৮ জেলায় তাদের যোগদান-পদায়নের সময় জানিয়ে দেয়া হবে মর্মে বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়।
গতকাল সন্ধ্যায় ডিপিইর সহকারী পরিচালক মো: আতিক এসবি সাত্তার নয়া দিগন্তকে জানান, আদালতের স্থগিতাদেশের বিরুদ্ধে আপিল করে স্থগিতাদেশ আবার স্থগিত করা হয়েছে। ফলে নিয়োগে আমাদের আর কোনো বাধা থাকবে না। ইতোমধ্যে চারটি জেলায় আমরা নিয়োগপ্রক্রিয়া শেষ করেছি। কুড়িগ্রাম, ভোলা, ময়মনসিংহ ও গাজীপুরের প্রার্থীদের নিয়োগ কার্যক্রম শেষ হয়েছে। আশা করছি বাকি ৩৮ জেলাতেও নিয়োগ কার্যক্রম এভাবেই চলবে। ডিপিই সূত্র আরো জানায়, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগ-২০১৮ পরীক্ষায় চূড়ান্তভাবে নির্বাচিতদের গত মাসের ২০-২৫ তারিখের মধ্যে ডাকযোগে নিয়োগপত্র পাঠানো হয়। সেখানে তাদের প্রত্যেককেই ১৬ ফেব্রুয়ারি যোগদান ও ১৭ থেকে ১৯ ফেব্রুয়ারি তাদের কর্মশালামূলক প্রশিক্ষণ অংশ নিতে বলা হয়েছিল।
উল্লেখ্য, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতর গত বছরের ৩০ জুলাই সহকারী শিক্ষক নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করার পর সারা দেশ থেকে ২৪ লাখ পাঁচজন প্রার্থী আবেদন করেন। প্রথম ধাপে ২৪ মে, দ্বিতীয় ধাপে ৩১ মে, তৃতীয় ধাপে ২১ জুন এবং চতুর্থ ধাপে ২৮ জুন লিখিত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। এরপর লিখিত পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হলে দেখা যায়, ৫৫ হাজার ২৯৫ জন প্রার্থী পাস করেছেন। লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ এসব প্রার্থীর গত বছরের ৬ অক্টোবর থেকে মৌখিক পরীক্ষা শুরু হয়। মাসব্যাপী সারা দেশের সব জেলায় মৌখিক পরীক্ষার আয়োজন করা হয়। মৌখিক পরীক্ষা শেষ হলে চূড়ান্ত নিয়োগের জন্য ১৮ হাজার ১৪৭ জন শিক্ষক চূড়ান্ত করা হয়। কিন্তু নতুন শিক্ষক নিয়োগে নারী কোটার বাস্তবায়ন নিয়ে বিতর্ক তৈরি হওয়ায় ইতোমধ্যে ৪২ জেলায় শিক্ষক নিয়োগ স্থগিত করেন আদালত।