ক্ষমতা বাড়ছে ইউজিসির
উচ্চশিক্ষা কমিশন হচ্ছে না- আমানুর রহমান
- ১৪ নভেম্বর ২০১৯, ০৯:১৪
বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) ক্ষমতা বাড়ানো হচ্ছে। উচ্চশিক্ষার পরিধি ও ব্যাপ্তি অনেক গুণ বেড়ে যাওয়ায় গত কয়েক বছর থেকে ইউজিসির সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। বলা হচ্ছিল, ইউজিসি ‘দন্তহীন বাঘে’ পরিণত হয়েছে। ‘ঢাল নাই তলোয়ার নাই নিধিরাম সর্দার’। ক্ষমতা বৃদ্ধি পেলে এ রূপ অপবাদ হয়তো আর শুনতে হবে না ‘ইউজিসি’কে।
জানা গেছে, ইউজিসির বর্তমান কমিশন দায়িত্ব নেয়ার পর থেকেই এ ব্যাপারে নতুন করে চিন্তাভাবনা শুরু হয়েছে। কমিশনের বর্তমান চেয়ারম্যানসহ একাধিক সদস্য নতুন নিয়োগ পেয়েছেন। এ ছাড়া এবারই প্রথম কমিশনে একজন সদস্যকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে, যিনি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মনোনীত হয়েছেন। কমিশন সদস্যদের সবাই এই সংস্থাকে আর ‘দাফতরিক প্রতিষ্ঠান’ হিসেবে দেখতে চান না। তাৎক্ষণিক যেকোনো পদক্ষেপ নিতে ‘মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায়’ যেন থাকতে না হয়। এ অবস্থার অবসান চান কমিশনের সব সদস্য। কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক কাজী শহীদুল্লাহসহ একাধিক সদস্যের সাথে আলাপকালে তারা নয়া দিগন্তকে বলেন, কমিশনের নির্বাহী ক্ষমতা থাকা উচিত।
এ ছাড়াও বর্তমানে পাবলিক (৪৮) ও প্রাইভেট (১০৭) বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যানুপাতে ইউজিসি কাজের চাপে অনেকটাই অকেজো হতে বসেছে। তাই উচ্চশিক্ষার মান নিশ্চিত করতে সংস্থার আমূল পরিবর্তনের পাশাপাশি ক্ষমতায়ন এবং স্বাধীনভাবে কাজ করার নিশ্চয়তা বিধান করা হচ্ছে বলে ইউজিসির একাধিক দায়িত্বশীল সূত্রে জানা গেছে। এ ব্যাপারে সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে সবুজ সঙ্কেত পেয়েছে কমিশন। এ লক্ষ্য নিয়ে গত ১৭ অক্টোবর পূর্ণাঙ্গ কমিশন প্রধানমন্ত্রীর সাথে সাক্ষাৎ করে। এ সময় শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরীও উপস্থিত ছিলেন। সূত্রে জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রীর সবুজ সঙ্কেতে কমিশনে এক বা একাধিক সদস্যের সমন্বয় কমিটি গঠিত হবে আগামী কয়েক দিনের মধ্যে। সে কমিটি ইউজিসির ক্ষমতায়নের সুনির্দিষ্ট প্রস্তাবনা বা একটি আইনের পূর্ণাঙ্গ খসড়া প্রণয়ন করে মন্ত্রণালয়ে পাঠাবে। মন্ত্রণালয় সেটিকে আইনি রূপ দিতে পরবর্তী পদক্ষেপ নেবে। এবারের প্রস্তাবনা যেন অতীত পরিণতির মুখে না পড়ে, তারও ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে সূত্র জানায়।
বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী ইউজিসিকে বেশ কিছু নির্দেশনা দিয়েছেন। তারই আলোকে ইউজিসি কিছু পদক্ষেপও নিয়েছে। সূত্র জানায়, এ বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী স্পষ্ট করেছেন, উচ্চ শিক্ষার নিয়ন্ত্রক সংস্থা হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন-ইউজিসি নামটিই সঠিক এবং আশপাশের একাধিক দেশে এ নামেই এ ধরনের প্রতিষ্ঠান কাজ করছে। হায়ার এডুকেশন কমিশন নামে নতুন প্রতিষ্ঠান তৈরির প্রয়োজন নেই।
বৈঠকে ইউজিসি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের জন্য বাংলাদেশ লোক প্রশাসন প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের মতো একটি প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট করতে সরকারের সহায়তা চায়। ইউজিসি জানায়, দেশে প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে কলেজ পর্যন্ত সব প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের জন্য পৃথক প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট রয়েছে। কিন্তু উচ্চ শিক্ষার শিক্ষকদের জন্য এ ধরনের কোনো প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট নেই। সমালোচকরা বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা স্বপ্রশিক্ষিত। এ ছাড়াও ইউজিসির জনবল বৃদ্ধি, নতুন স্থান সঙ্কুলানের জন্য পাশের জমি বরাদ্দ দেয়ার প্রস্তাবসহ বেশ কিছু সুপারিশ করা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রীর সাথে বৈঠকের পরপরই ইউজিসি মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়ে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভিসি, প্রোভিসি ও ট্রেজারারের শূন্য পদে দ্রুত নিয়োগ দেয়ার অনুরোধ জানায়। মন্ত্রণালয়কে এ ধরনের নির্দেশনা মূলক অনুরোধ ইউজিসির ইতিহাসে এ প্রথম বলেও একটি সূত্র নয়া দিগন্তকে জানায়। কারণ ১৯৭৩ সালে প্রতিষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ একটি প্রতিষ্ঠান। সব নির্বাহী ক্ষমতা মন্ত্রণালয়ের হাতে। ইউজিসি কেবল মন্ত্রণালয়কে সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ব্যাপারে সুপারিশ ও পরামর্শই দিতে পারে; নির্দেশনামূলক কোনো ক্ষমতা নেই কমিশনের।
ক্ষমতায়নের ব্যাপারে যে বিষয়গুলোকে প্রধান্য দেয়ার কথা ইউজিসির পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, তার মধ্যে প্রধান হচ্ছে, পাবলিক-প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অনিয়ম রোধে সরাসরি হস্তক্ষেপ করা, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে লাগামহীন বিষয় খুলে ছাত্র ভর্তি এবং অনৈতিকভাবে সনদবাণিজ্যের রাশ টেনে ধরা, আর্থিক অনিয়ম হলে সেখানে বরাদ্দ বন্ধ করা, শিক্ষকসহ যেকোনো নিয়োগে অনিয়ম হলে সরাসরি বন্ধ করার ক্ষমতা থাকা ইত্যাদি বিষয় অন্তর্ভুক্ত।
ইউজিসির সাবেক চেয়ারম্যান প্রফেসর এ কে আজাদ চৌধুরীর আমলের (২০১১-২০১৫) শুরুতেই ইউজিসির কাঠামো পরিবর্তনসহ উচ্চ শিক্ষাকে যুগোপযোগী এবং বিশ্বমানের নিশ্চিত করতে ‘হায়ার এডুকেশন কমিশন’ নামে পৃথক কমিশন গঠনের প্রস্তাব করে একটি খসড়া আইনের কাঠামো পাঠানো হয়েছিল মন্ত্রণালয়ের কাছে। কিন্তু গতকাল বুধবার পর্যন্ত তা আলোর মুখ দেখেনি। অভিযোগ রয়েছে, হায়ার এডুকেশন কমিশনের যে প্রস্তাবনা ইউজিসি দিয়েছিল তাতে, আমলাতন্ত্রের কর্তৃত্ব ও মন্ত্রণালয়ের প্রভাব মুক্ত একটি স্বাধীন কমিশনের কথা বলা ছিল। কিন্তু মন্ত্রণালয়ে যাওয়ার পর তা ব্যাপক সংশোধন ও পরিবর্তন করায় ইউজিসিই তা থেকে সরে যায়। ফলে গত ১১ বছরেও তা আর এগোয়নি।