প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের পরীক্ষা বর্জনের ঘোষণায় কী চাচ্ছে সরকার?
- আমানুর রহমান
- ০১ নভেম্বর ২০১৯, ০৬:০১, আপডেট: ০১ নভেম্বর ২০১৯, ০৬:৩০
প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক নেতারা গতকাল প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী ও প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের (ডিপিই) মহাপরিচালকের (ডিজি) সাথে বৈঠক করেছেন। এ সময় শিক্ষকদের প্রতি সমাপনী পরীক্ষা বর্জন না করার অনুরোধ করা হলেও তাদের বিভিন্ন দাবি-দাওয়ার ব্যাপারে তেমন কোনো ইতিবাচক সাড়া মন্ত্রী ও ডিজির পক্ষ থেকে পাওয়া যায়নি। প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী মো: জাকির হোসেন গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বিভিন্ন সংগঠনের নেতাদের বৈঠকে করেছেন। মন্ত্রীর সরকারি বাস ভবনে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। বৈঠকে শিক্ষক নেতারা গত ২৩ অক্টোবর ঢাকায় মহা-সমাবেশকে কেন্দ্র করে সারা দেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের দুই হাজার সাত শতাধিক শিক্ষককে যে শোকজ নোটিশ ইস্যু করা হয়েছে, তা প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছেন। তারা একই দাবি জানান প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের (ডিপিই) ডিজির কাছেও। তবে এসব বৈঠকে শিক্ষক নেতারা শোকজ নোটিশ প্রত্যাহারের সুস্পষ্ট আশ্বাস পাননি বলে জানা গেছে। অবশ্য ডিজি বিষয়টি দেখবেন বলে জানিয়েছেন।
ডিজির সাথে প্রায় ঘণ্টাব্যাপী বৈঠকে সমাপনী পরীক্ষা বর্জনের কর্মসূচি থেকে সরে আসার অনুরোধ জানানো হয়েছে বলে বৈঠক সূত্র জানান। তবে বেতন স্কেল সম্পর্কে শিক্ষক নেতাদের কোনোরূপ আশ্বস্ত করতে পারেননি ডিজি। এ নিয়ে শিক্ষক নেতারা ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে আসন্ন সমাপনী পরীক্ষার বর্জনের কর্মসূচিতে অনড় থাকবেন বলে গতকাল রাতে নয়া দিগন্তকে জানান।
ওই দু’টি বৈঠকে প্রাথমিক শিক্ষকদের ১৪টি সংগঠনের সমন্বয়ে গঠিত ‘বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক ঐক্য পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সব শিক্ষকনেতা উপস্থিত ছিলেন। মন্ত্রীর সাথে বৈঠকটি হয়েছে বেইলি রোড়স্থ মন্ত্রীর সরকারি বাস ভবনে এবং ডিজির সাথে বৈঠক হয়েছে তার মিরপুরস্থ কার্যালয়ে। প্রাথমিক শিক্ষক ঐক্য পরিষদের প্রধান মুখপাত্র বদরুল আলম নয়া দিগন্তকে বলেন, শোকজ নোটিশ মাথায় নিয়ে কোনো শিক্ষক ক্লাস ও পরীক্ষায় দায়িত্ব পালন করতে স্বস্তি বোধ করছেন না। অবশ্যই শোকজ প্রত্যাহার করে নিতে হবে। এ কথা ডিজি মহোদয়কে অবহিত করা হয়েছে।
ঐক্য পরিষদের সদস্য সচিব মোহাম্মদ শামসুদ্দীন মাসুদ বলেন, পূর্ব ঘোষিত সমাপনী পরীক্ষায় দায়িত্ব পালন থেকে বিরত থাকার ব্যাপারে পরিষদ নেতারাই শুধু নয়, সারা দেশের শিক্ষকরা আমাদের অব্যাহতভাবে চাপ দিয়ে যাচ্ছেন। সারা দেশে সাধারণ শিক্ষকরা শোকজ নোটিশের প্রত্যাহার চান। এ ব্যাপারে ডিজি অফিসকে আমরা সময় বেঁধে দেব। এ ছাড়াও কালো-ব্যাজ ধারণ করে শিক্ষকদের দায়িত্ব পালনের কথা ভাবা হচ্ছে।
শিক্ষক নেতারা বলেন, গত অক্টোবরের ঘোষিত কর্মসূচির ব্যাপারে পরিষদ নেতারা একমত। কারণ, অর্থ মন্ত্রণালয়ে যে প্রস্তাব পাঠানোর কথা শোনা যাচ্ছে, তাতেও শিক্ষকরা ক্ষুব্ধ। কারণ প্রধান শিক্ষকদের দাবি হচ্ছে, বেতনে দশম গ্রেড, আর সহকারী শিক্ষকদের তার পরের ধাপ অর্থাৎ ১১তম গ্রেড। কিন্তু এখন মন্ত্রণালয় প্রধান শিক্ষকদের ১১তম এবং সহকারী শিক্ষকদের ১৩তম গ্রেড নির্ধারণ করে প্রস্তাব পাঠাচ্ছে। শিক্ষক নেতারা বলেন, এ প্রস্তাবনা তো শিক্ষকদের কাছে গ্রহণযোগ্য হবে না।
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বেতন বৈষম্য নিরসনের লক্ষ্যে প্রধান শিক্ষকদের দশম গ্রেড এবং সহকারী শিক্ষকদের ১১তম গ্রেডের দাবিতে গত ১৪ থেকে ১৭ অক্টোবর পর্যন্ত কর্মবিরতি পালনের পর গত ২৩ অক্টোবর ঢাকার মহা-সমাবেশের ডাক দিয়েছিল প্রাথমিক শিক্ষকদের ১৪টি সংগঠনের সমন্বয়ে গঠিত ‘বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক ঐক্য পরিষদ’। কিন্তু ২৩ অক্টোবর পুলিশি বাধার কারণে মহাসমাবেশ করতে না পেরে শিক্ষক নেতারা নতুন করে কর্মসূচি ঘোষণা করেন। তাতে আগামী ১৩ নভেম্বর পর্যন্ত সরকারকে আলটিমেটাম দেয়া হয়।
শিক্ষক নেতারা ঘোষণা করেন, ১৩ নভেম্বরের মধ্যে সরকার দাবি মেনে না নিলে ১৭ নভেম্বর থেকে দেশব্যাপী শুরু হওয়া প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষা বর্জন করবেন প্রাথমিক শিক্ষকরা। এর পরও সরকার দাবি মেনে নিতে গড়িমশি করলে পরে ডিসেম্বর মাস থেকে শুরু হওয়া বার্ষিক পরীক্ষাও বর্জন করবেন শিক্ষকরা। এতেও সরকারের টনক না নড়লে শিক্ষকরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তালা ঝুলানোর কর্মসূচি ঘোষণা করবেন বলে হুঁশিয়ারি দেন শিক্ষক নেতারা।