আতঙ্কে অভিভাবকেরা : স্কুলে যেতে অনীহা শিক্ষার্থীদের
- আমানুর রহমান
- ২৮ জুলাই ২০১৯, ০৬:২৩
গতকাল শনিবার পর্যন্ত সরকারি হিসাবে আটজন এবং বেসরকারি হিসাবে ২৫ জনের বেশি আক্রান্তের মৃত্যুর পর ডেঙ্গু প্রতিরোধে সতর্কতা জারি করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো: সোহরাব হোসাইন স্বাক্ষরিত সতর্কতা নির্দেশনায় চার দফা করণীয় নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার (২৫ জুলাই) রাতে মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ থেকে এ নির্দেশনা জারি করা হয়।
এ দিকে, রাজধানীতে ডেঙ্গু আতঙ্কে ভুগছে স্কুলগামী শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা। রাজধানীসহ দেশের কোথাও কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মশক নিধনে কার্যকর ব্যবস্থা নেই। বরং ডেঙ্গুবাহী এডিস মশার প্রজনন ক্ষেত্র হিসেবে চিহ্নিত হয়ে রয়েছে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের আশপাশ। এ ব্যাপারে প্রতিষ্ঠানগুলোরও কোনো পদক্ষেপ নেই বলে অভিযোগ অভিভাবক-শিক্ষার্থীদের। এসব কারণে শিক্ষার্থীদের অনেকে এ অবস্থায় স্কুলে যেতেই অনীহা প্রকাশ করেছে অভিভাকদের কাছে। আর যারা যাচ্ছে তাদের অনেকেই ড্রেসের সাথে লম্বা মোজা ও জামা পরে শরীর ঢেকে ক্লাসে যাচ্ছে। সামর্থ্যবানরা মশক প্রতিরোধী তরল মেখে সন্তানদের স্কুলে পাঠাচ্ছেন অনেকে।
রাজধানীর একধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী-অভিভাবকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, তারা সতর্কতার সাথেই ক্লাসে অংশ নিচ্ছে। মশার কামড়ের ভয়ে বেশ কিছু দিন ধরে কলেজ ড্রেসের সাথে লম্বা মোজা ও জামা পরে শরীর ঢেকে ক্লাসে যাচ্ছেন সেন্ট্রাল ওমেন্স কলেজের একাদশ শ্রেণীর ছাত্রী ইসরাত শারমিন। ওই ছাত্রী বলেন, কখন, কোথায়, কিভাবে মশা কামড়াবে তা তো আগে থেকে বলা যাচ্ছে না। সে জন্য নিজের নিরাপত্তা নিজেই নিতে হচ্ছে। অভিভাবকদের পরামর্শে একইভাবে স্কুলে যেতে হচ্ছে নারিন্দা সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী রায়হানকে। ভিকারুন নিসা নূন স্কুলের তৃতীয় শ্রেণীর এক ছাত্রীর অভিভাবকের অভিযোগ, ক্লাসে মশার অত্যাচারে তার মেয়েটি স্কুলে যেতে অনাগ্রহী হওয়ার বিষয়টি কর্তৃপক্ষকে জানানোর পরও তারা কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না।
ধানমন্ডি বয়েজ হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক সামিনা ইয়াসমিন বলেন, ১৫ দিন আগে সিটি করপোরেশনের কর্মীরা বিদ্যালয়ের আশপাশে মশার ওষুধ ছিটিয়ে চলে গেছে। এরপর আর তারা আসেনি। তবে আমরা নিজেরা মিলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রেখেছি। অ্যাসেম্বলিতে ছাত্রদের ডেঙ্গু রোগ বিষয়ে সচেতন করছি। সিটি করপোরেশনের ভূমিকা নিয়ে একই কথা বললেন আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ ড. শাহান আরা বেগম। তিনি বলেন, ব্যক্তিগতভাবে আমরা শিক্ষার্থীদের সচেতন করছি। তবে শিক্ষা বিভাগ থেকে এ ব্যাপারে কোনো নির্দেশনা পাইনি।
এদিকে, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক ড. এ এফ এম মনজুর কাদির বলেন, মশক নিধনের কাজটি করে সিটি করপোরেশন। আমরা শুধু প্রতিটি বিদ্যালয় পরিচ্ছন্ন রাখতে শিক্ষকদের নির্দেশনা দিয়েছি। শিক্ষার্থীদেরর সচেতন করার কথা বলছি।
জানতে চাইলে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের (মাউশি) পরিচালক (মাধ্যমিক) অধ্যাপক ড. আবদুল মান্নান নয়া দিগন্তকে বলেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নœ রাখতে আগে থেকেই নির্দেশনা দেয়া আছে। বর্তমানে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে প্রতিষ্ঠানগুলোকে আরো সচেতন হতে বলা হয়েছে। তিনি জানান, মন্ত্রণালয় থেকেই নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। সেটিকে কার্যকর করতে পদক্ষেপসহ জরুরি নির্দেশনা পাঠানো হবে।
এ ছাড়া ডেঙ্গু রোগ সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধিতে ডিএনসিসির আওতাধীন সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রধানদের সাথে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র মো: আতিকুল ইসলামের মতবিনিময় সভা করেন। মিরপুরের গার্লস আইডিয়াল ইনস্টিটিউটে শুক্রবার দুপুরে এ সভা হয়েছে। সভায় ডেঙ্গু মশা প্রতিরোধে বিভিন্ন করণীয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে বলে জানা গেছে।
সর্বশেষে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ডেঙ্গু মশার আক্রমণ থেকে শিক্ষার্থীদের রক্ষা করতে গত বৃহস্পতিবার রাতে সতর্কতা জারি করা হয়েছে। পাশাপাশি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মধ্যে করণীয় বিভিন্ন নির্দেশনাও দেয়া হয়েছে। মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সিনিয়র সচিব স্বাক্ষরিত এ নির্দেশনায় বলা হয়, সম্প্রতি দেশের বিভিন্ন স্থানে ডেঙ্গুর প্রকোপ দেখা দিয়েছে। অনেক মানুষ এতে আক্রান্ত হয়েছেন এবং হচ্ছেন। বিশেষজ্ঞদের ধারণা- সতর্কতা অবলম্বন করলে ডেঙ্গু থেকে নিস্তার পাওয়া সম্ভব। ডেঙ্গু প্রতিরোধের জন্য সরকারের সংশ্লিষ্ট দফতরগুলো সব প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে।
আরো বলা হয়েছে, ডেঙ্গু এডিস মশাবাহিত একটি রোগ। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর খেলার মাঠ ও ভবনগুলোর মাঝে পানি জমে থাকে এমন জায়গা, ফুলের টবে জমে থাকা পানি এডিস মশার উপযুক্ত প্রজননক্ষেত্র।
ডেঙ্গুর বিস্তার রোধে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে। এ লক্ষ্যে দেশের প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে ডেঙ্গু প্রতিরোধে নিম্নোক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। ১. খেলার মাঠ ও ভবনগুলো পরিষ্কার রাখতে হবে; ২. মাঠ কিংবা ভবনে জমে থাকা পানি দ্রুত সরিয়ে ফেলতে হবে; ৩. শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে সৌন্দর্য বর্ধনের জন্য যেসব ফুলের টব রয়েছে, সেগুলো নিয়মিত পরিষ্কার করতে হবে এবং ৪. ডেঙ্গু প্রতিরোধের উপায়গুলো শিক্ষার্থীদের নিয়মিত আনুষ্ঠানিকভাবে অবহিত করতে হবে।
পরিপত্রে নির্দেশনা বাস্তবায়নে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালককে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। নির্দেশনা বাস্তবায়ন করবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধানরা। জেলা শিক্ষা অফিসার ও উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারেরা তদারকি করবেন। নির্দেশনা বাস্তবায়ন হচ্ছে কি না তা মনিটরিং করাসহ প্রতি সপ্তাহে এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন সংগ্রহ করবেন মহাপরিচালক।