২৩ নভেম্বর ২০২৪, ৮ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

হালকা কারিগরি শিল্পের সম্ভাবনা

দরকার সমন্বিত উদ্যোগ
-

বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে যতটুকু উন্নতি হয়েছে তার পেছনে সাধারণ মানুষের নিরবচ্ছিন্ন চেষ্টার অবদান সবচেয়ে বেশি। কৃষি বাণিজ্য শিল্প ও শিক্ষাÑ প্রত্যেকটি অগ্রগতির সূচকে মানুষের ক্রমাগত চেষ্টা দেশকে এগিয়ে নিয়ে চলেছে। বিগত এক দশকে দেশের উন্নয়নে সরকার যে কৃতিত্ব দাবি করতে চায়, সেটিও প্রকৃতপক্ষে ব্যক্তি খাতের বিচ্ছিন্ন আন্তরিক প্রচেষ্টারই ফল বলতে হবে। সরকার সুসংগঠিত পরিকল্পনা করে বিপ্লব ঘটিয়ে দিয়েছে এমন একটি সেক্টরও সম্ভবত পাওয়া যাবে না। পোশাক শিল্প ও প্রবাসী আয় অর্থনীতির এ দু’টি প্রধান খাত ধারাবাহিকভাবে মানুষের শ্রমে ঘামে অর্জিত। সময়মতো যথাযথ পদক্ষেপ নিতে পারলে এ দুটো খাতের অবস্থা আরো শক্ত ভিত্তির ওপর দাঁড়াতে পারত। নীরবে দেশের অভ্যন্তরে আরো একটি শিল্পের বিকাশ ঘটেছে। একটি সহযোগী দৈনিক এ শিল্পের সম্ভাবনা নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। সেটি হচ্ছে হালকা প্রকৌশল শিল্প।
রাজধানী ঢাকার অদূরে কেরানীগঞ্জের জিঞ্জিরার হালকা ইলেকট্রনিক পণ্যের খ্যাতির কথা সবাই জানে। এখানে গত কয়েক যুগে বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি উৎপাদনের বিকাশ ঘটেছে। প্রথমে বিদেশের ইলেকট্রনিক পণ্যের নকল সামগ্রী তৈরি করেছে এখানকার স্বল্পশিক্ষিত কিংবা নিরক্ষর কারিগররা। ধীরে ধীরে তারাই এসব পণ্য উৎপাদনে দক্ষতা অর্জন করেছে। খবরে জানা যাচ্ছে, জিঞ্জিরাতে গড়ে উঠেছে দুই হাজারের বেশি ক্ষুদ্র ও হালকা শিল্পকারখানা। ছয় লাখ কারিগর দিনরাত বিভিন্ন ধরনের বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি তৈরি করে যাচ্ছে। পুরনো ভাঙা জাহাজের অবশিষ্টাংশ, পরিত্যক্ত শিল্পকারখানা থেকে পাওয়া স্ক্র্যাপ, পুরনো যন্ত্রপাতি, লোহা ও ইস্পাতের শিট থেকে তারা নিত্যপ্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি তৈরি করে। সুঁই, ব্লেড, আলপিন থেকে শুরু করে সমুদ্রগামী জাহাজের বিভিন্ন খুচরা যন্ত্রাংশ পর্যন্ত এখানে তৈরি হয়। সর্বাধুনিক প্রযুক্তির বিভিন্ন বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতিও তারা তৈরি করে। পরিকল্পিত উদ্যোগ না থাকায় এটি একটি অত্যাধুনিক শিল্পনগরী হিসেবে গড়ে উঠতে পারেনি।
খবরে আরো জানা যাচ্ছে, জিঞ্জিরার অনুসরণ করে দেশের বিভিন্ন জায়গায় হালকা যন্ত্রপাতি ও খুচরা যন্ত্রাংশ তৈরির কারখানা গড়ে উঠেছে। ক্ষুদ্র-মাঝারি আয়তনের ৫০ হাজার শিল্পকারখানা সারা দেশে ছড়িয়ে রয়েছে। এতে জড়িত রয়েছে ১২ লাখ খুদে কারিগর। এই জিঞ্জিরা শিল্পেরই আরো উন্নত একটি বিকশিত সংস্করণ দেখা যাচ্ছে বগুড়ায়। সেখানে কৃষি যন্ত্রাংশ তৈরির বিপুল বিকাশ ঘটেছে। উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন জেলায় কৃষিযন্ত্র তৈরির কারখানা গড়ে উঠেছে। এসব কারখানায় তৈরি হচ্ছে পানির পাম্প, টিউবওয়েল, পাওয়ার টিলার, ধান ও ভুট্টা মাড়াইয়ের মেশিন। তৈরি হচ্ছে কৃষিকাজে ব্যবহৃত প্রায় প্রতিটি বৈদ্যুতিক কলের খুচরা যন্ত্রাংশও। এসব কারখানা বছরে দুই হাজার কোটি টাকার যন্ত্রপাতি তৈরি করছে। সেগুলো বিদেশে রফতানিও হচ্ছে। ফলে দেশের বিপুল বৈদেশিক মুদ্রার সাশ্রয় হচ্ছে।
জিঞ্জিরার হালকা যন্ত্রশিল্প আজ সারা দেশে ডালপালা ছড়িয়েছে। দেশের কোনো কোনো অঞ্চলে এ শিল্প আরো একটু বড় হয়ে মাঝারি বৈদ্যুতিক শিল্পে রূপ নিয়েছে। বাংলাদেশে যন্ত্রশিল্পের এ বিস্তার কিছু মানুষের লাগাতার শ্রম সাধনার ফল। শুরু থেকে এ নিয়ে রাষ্ট্রীয় পর্যায় থেকে আনুকূল্য থাকলে হালকা মাঝারি যন্ত্রশিল্পে বাংলাদেশ হয়তো এত দিনে স্বয়ংস¤পূর্ণ হয়ে যেত। সরকার চাইলে এখনো এটিকে একটি সমন্বিত রূপ দিতে পারে। প্রথমত দক্ষ কারিগরদের বাছাই করে তাদের প্রণোদনা দিতে পারে। ভূমিকা রাখতে পারে এসব কারখানার সাথে দেশের কারিগরি শিক্ষার সমন্বয় সাধনে। কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে বের হয়ে ছাত্ররা সরাসরি যাতে এসব কারখানায় সংযুক্ত হতে পারে তার অনুকূল পরিবেশ তৈরি করে দিতে পারে সরকার। অথবা এ খাতে উদ্যোক্তা হওয়ার জন্য তাদের সরকার আর্থিক প্রণোদনা দিতে পারে।


আরো সংবাদ



premium cement