২৩ নভেম্বর ২০২৪, ৮ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

পেঁয়াজের সাথে পাল্লা দিয়ে দাম বেড়েছে ডিম মুরগি সবজির

পেঁয়াজের সাথে পাল্লা দিয়ে দাম বেড়েছে ডিম মুরগি সবজির - ছবি : সংগৃহীত

পেঁয়াজের দাম নিয়ে সারা দেশে হইচই চলছে কয়েক সপ্তাহ ধরেই। সমস্যার সৃষ্টি হয় ভারতে পেঁয়াজের রফতানিমূল্য তিন গুণ বাড়িয়ে দেয়ার মধ্যদিয়ে। দেশবাসীর তীব্র প্রতিক্রিয়ার মধ্যেই স্থায়ীভাবে রফতানি বন্ধ করে দেয় দেশটি। এ নিয়ে সারা দেশে বিরাজ করছে অরাজক পরিস্থিতি। হাটে, ঘাটে, মাঠে; আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে চলে আসে পেঁয়াজের দাম। মাছের দাম আগে থেকেই বেশি। এবার পেঁয়াজের সাথে পাল্লা দিয়ে দাম বেড়েছে ডিম, মুরগি ও সবজির। ডিমের দাম বাড়তে বাড়তে প্রতি ডজন ১২০ টাকায় উঠেছে। ফার্মের মুরগির দাম উঠেছে ১৪০ থেকে ১৫০ টাকায়। এক সপ্তাহের ব্যবধানে সব ধরনের সবজির দাম বেড়েছে কেজিতে ১০ থেকে ৪০ টাকা। যদিও শীত ঘনিয়ে আসায় বাজারে শীতের সবজির সরবরাহ বেশ বেড়েছে। পেঁয়াজ আসছে মিয়ানমার ও ভারত থেকে।

খুচরা বাজারে গতকাল প্রতি কেজি দেশী পেঁয়াজ বিক্রি হয় ৯৫ থেকে ১০০ টাকায়। আগের দিন কোনো কোনো বাজারে ১২০ টাকায়ও পেঁয়াজ বিক্রি করতে দেখা গেছে। ভারতীয় পেঁয়াজ গতকাল বিক্রি হয় ৬৫ থেকে ৭৫ টাকা। আগের দিন এ দর ছিল আরো পাঁচ থেকে ১০ টাকা বেশি। মিয়ানমার থেকে আসা ছোট আকারের পেঁয়াজ গতকাল ৬০ থেকে ৬৫ টাকায় বিক্রি করতে দেখা গেছে। বাজারে প্রচুর পেঁয়াজ মজুদ থাকার পরও দাম বাড়তে থাকায় ক্ষুব্ধ সাধারণ মানুষ। তাদের অভিযোগ, টাকা বাড়িয়ে দিলে যদি পেঁয়াজ পাওয়া যায় তবে কম দামে কেন পাওয়া যাবে না? বাজারে সরবরাহের তো কোনো ঘাটতি নেই! তবে বিক্রেতারা আশা করছেন, কয়েক দিনের মধ্যে পেঁয়াজের দাম কিছুটা কমে আসবে।

এ দিকে রফতানি বন্ধ ঘোষণার পর ভারতের মোহদিপুর স্থলবন্দরে আটকে পড়া পেঁয়াজ সোনামসজিদ স্থলবন্দর দিয়ে আসতে শুরু করেছে বলে জানা গেছে। ভারতের মোহদিপুরে দুর্গাপূজার সরকারি ছুটি শুরু হলেও বিশেষ ব্যবস্থায় পাঠানো হচ্ছে পেঁয়াজ। গতকাল দুপুর ১২টার পর থেকে ভারতীয় পেঁয়াজভর্তি ট্রাক আসা শুরু হয়। বেলা ৩টা পর্যন্ত ৫৫টি ভারতীয় ট্রাক পেঁয়াজ নিয়ে সোনামসজিদ স্থলবন্দরে প্রবেশ করেছে বলে কাস্টম সূত্র জানায়। গতকাল সারা দিনে ২০০ পেঁয়াজের ট্রাক পাঠানো হবে বলে ভারতীয় সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টরা জানিয়েছেন। সূত্র জানায়, ভারত পেঁয়াজ রফতানি বন্ধ ঘোষণার পরপরই বন্ধ হয়ে যায় পেঁয়াজ আসা। এতে করে ভারতের মোহদিপুর স্থলবন্দরে কয়েক শ’ পেঁয়াজভর্তি ট্রাক আটকা পড়ে। কয়েক দিন অপেক্ষমাণ থাকার কারণে এসব পেঁয়াজে পচন ধরা শুরু হয়েছিল। শেষ পর্যন্ত গতকাল থেকে পেঁয়াজগুলো আসা শুরু হয়।

এ দিকে গতকাল শুক্রবার রাজধানী ঢাকার কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখা যায়, চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে সব ধরনের সবজি। সবচেয়ে বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে পাকা টমেটো। এ সবজিটি বিক্রি হচ্ছে ১২০ থেকে ১৪০ টাকা কেজি, যা গত সপ্তাহে ছিল ৮০ থেকে ১০০ টাকা। টমেটোর মতো দাম বেড়েছে গাজরের। গত সপ্তাহে ৬০ থেকে ৮০ টাকা কেজি বিক্রি হওয়া গাজরের দাম গতকাল বেড়ে হয়েছে ৮০ থেকে ১০০ টাকা। প্রতি কেজি শিম বিক্রি হচ্ছে ১০০ থেকে ১২০ টাকায়। গত সপ্তাহে এ সবজির দাম ছিল ৭০ থেকে ৮০ টাকা। ছোট আকারের একেকটি ফুলকপি গতকাল বিক্রি হয় ৪০ থেকে ৫০ টাকা। একই দামে বিক্রি হচ্ছে পাতাকপি। মুলা বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৬০ টাকা কেজি দরে। চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে লাউ, করলা, ঝিঙা, বরবটি, বেগুন, পটোল, ঢেঁড়স, ধুন্দুলসহ সব ধরনের সবজি। গত সপ্তাহে ছোট আকারের যে লাউ ৫০ থেকে ৬০ টাকা পিস বিক্রি হয়েছে সেই লাউয়ের দাম বেড়ে গতকাল বিক্রি হয় ৭০ থেকে ৮০ টাকা।

খুচরা বাজারে গতকাল প্রতি কেজি করলা বিক্রি হয় ৭০ থেকে ৮০ টাকা, যা গত সপ্তাহে ছিল ৬০ থেকে ৭০ টাকা। বরবটি আগের সপ্তাহের মতো ৭০ থেকে ৮০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। তবে সপ্তাহের ব্যবধানে বেগুনের দাম কেজিতে বেড়েছে ২০ টাকা। প্রতি কেজি বেগুন বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ৮০ টাকা, যা গত সপ্তাহে ছিল ৫০ থেকে ৬০ টাকা। দাম বৃদ্ধির এ তালিকায় আছে চিচিংগা, ঝিঙা, ধুন্দুলও। এসব সবজি বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৭০ টাকা কেজিতে, যা গত সপ্তাহে ছিল ৫০ থেকে ৬০ টাকা কেজি। বাজারে এখন ৫০ টাকার নিচে মিলছে কেবল পেঁপে ও মিষ্টি কুমড়া। তবে সপ্তাহের ব্যবধানে এ দু’টি সবজির দামও বেড়েছে। গত সপ্তাহে ১৫ থেকে ২০ টাকা কেজি বিক্রি হওয়া পেঁপের দাম বেড়ে হয়েছে ২৫ থেকে ৩০ টাকা। আর মিষ্টি কুমড়ার যে ফালি ১৫ থেকে ২০ টাকা বিক্রি হচ্ছিল তার দাম বেড়ে হয়েছে ২০ থেকে ৩০ টাকা।

মাছের বাজারে এক কেজি ওজনের ইলিশ ১০০০ থেকে ১১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ৮০০ থেকে ৯০০ গ্রাম ওজনের প্রতিটি ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ৮৫০ থেকে ৯০০ টাকা। রুই মাছ কেজি ২৪০ থেকে ৩০০ টাকা। তেলাপিয়া ১৩০ থেকে ১৬০ টাকা, পাঙ্গাশ ১২০ থেকে ১৫০ টাকা, শিং ৪০০ থেকে ৬০০ টাকা, কাচকি ২৫০ থেকে ৩৫০ টাকা, পাবদা ৪০০ থেকে ৬০০ টাকা, ট্যাংরা ৫৫০ থেকে ৭০০ টাকা কেজি বিক্রি হয়। এ ছাড়া প্রতি কেজি গরুর গোশত ৫৫০ থেকে ৫৭০ টাকা, খাসি ৭৫০ থেকে ৭৮০ টাকা, ব্রয়লার ১৪০ থেকে ১৫০ টাকা, লাল লেয়ার ২২০ থেকে ২৫০ টাকা, পাকিস্তানি কক ২৫০ থেকে ২৭০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করতে দেখা যায়।


আরো সংবাদ



premium cement