চামড়ার ক্রয়মূল্য ৩৭৫ টাকা, বিক্রয়মূল্য ৩৬ টাকা
- টঙ্গী সংবাদদাতা
- ২৫ আগস্ট ২০১৯, ২১:১৩
চামড়ার প্রান্তিক ব্যবসায়ী লালু মিয়া সুদূর হবিগঞ্জ থেকে টঙ্গীতে ১৫২টি চামড়া এনে ট্রাক ভাড়া দিয়েছেন সাত হাজার টাকা। টঙ্গী বাজারে এই ১৫২ চামড়া বিক্রি করেছেন মাত্র সাড়ে পাঁচ হাজার টাকা। হবিগঞ্জ থেকে ট্রাক ভাড়াসহ তার প্রতি চামড়ার ক্রয়মূল্য পড়েছে ৩৭৫ টাকা। অথচ টঙ্গী বাজারে তার এসব চামড়ার বিক্রয়মূল্য পড়েছে প্রতিটি ৩৬ টাকা ১৮ পয়সা। এতে প্রতি চামড়ায় তাকে লোকসান দিতে হয়েছে ৩৩৮ টাকা ৮২ পয়সা করে।
রোববার বেলা ২টায় টঙ্গী বাজারে চামড়ার স্তুপের পাশে দাঁড়িয়ে গামছা দিয়ে দুই চোখ মুছছিলেন ব্যবসায়ী লালু মিয়া। লালু মিয়ার বাড়ি হবিগঞ্জ জেলার মাধবপুর উপজেলার কালিকাপুর বাজারে। সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে অশ্রুসজল লালুর সমস্যার কথা জানতে চাইলে তিনি কান্না জড়িত কণ্ঠে জানান, টেলিভিশনের খবরে তারা জানতে পারেন, ঢাকায় হাজার/বারোশ’ টাকায় চামড়া বিক্রি হচ্ছে। এমন খবরে বুকভরা আশা নিয়ে ১৫২টি চামড়া ট্রাকে করে গত শনিবার রাতে তিনি টঙ্গী বাজারে পৌছান। এখানে এসেই চামড়ার দাম শুনে তার চক্ষু চড়কগাছ। অবশেষে হতাশ হয়ে তিনি চামড়া ফেরত নিতে চাইলে টঙ্গী বাজার গরু হাটের ইজারাদাররা তার গাড়ি আটকে দেন।
তাকে জানানো হয়- এই বাজারে এসে কেউ ফেরত যেতে পারেন না। চামড়া বিক্রি করলেও যেমন খাজনা দিতে হয়; তেমনি ফেরত নিলেও খাজনা দিতে হয়। তবে বিক্রি করলে চামড়া প্রতি ৬০ টাকা, আর ফেরত নিলে চামড়া প্রতি ২৫ টাকা করে বাজারের ইজারাদারদেরকে টুল বা খাজনা দিতে হয়। বাজারের ইজারাদারদের এমন আচরণে তখন লালুর বুক ফেটে কান্না আসে।
কান্নাজড়িত কণ্ঠে লালু বলেন, আমার পকেটে কোন টাকা ছিল না। গত রাতে এসেছি; এখনো (রোববার বেলা ২টা) কিছুই খাইনি। টাকা থাকলে প্রতি চামড়ায় ২৫ টাকা করে খাজনা দিয়েই চামড়াগুলো ফেরত নিয়ে যেতাম। ‘ট্রাক ভাড়া সাত হাজার টাকা, চামড়া বিক্রি করেছেন মাত্র সাড়ে পাঁচ হাজার টাকা। বাকি ট্রাক ভাড়া দিবেন কিভাবে এবং খাওয়া ও যাওয়ার ব্যবস্থা কি?’ এমন প্রশ্নের জবাবে লালু মিয়া পাশে দাঁড়ানো একজন লোককে ডেকে এনে বলেন, ‘ওনার নাম এখলাস উদ্দিন; বাড়ি আমাদের এলাকায়; তিনি টঙ্গীতেই থাকেন। তাকে বাজারে ফোন করে এনে কিছু টাকা হাওলাদ নিয়েছি।’
এসময় এখলাস উদ্দিনও ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, টেলিভিশনের মালিকরা কত টাকা পেয়েছেন? ঢাকায় চামড়া ১০০০ থেকে ১২০০ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে টিভিতে এমন মিথ্যা খবর প্রচার করে সারাদেশ থেকে চামড়া এনে পানির দরে বিক্রি করতে বাধ্য করা হচ্ছে কেন? তিনি আক্ষেপ করে বলেন, এলাকায় ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ঘোড়া প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থীর সমর্থক ছিলাম। কিন্তু কেন্দ্রে ভোট দিতে গিয়ে ব্যালট পেপারে যখন নৌকা প্রতীক দেখলাম; তখন আর ঠিক থাকতে পারলাম না, আমরা নৌকার এমন ভক্ত। আমরা নৌকাকে এতো ভালবাসি। কিন্তু আমার প্রশ্ন সরকার কাদের স্বার্থে এই সিন্ডিকেট করে এই টাকাগুলো কাদেরকে খাওয়াচ্ছে। তিনি বলেন, টঙ্গী বাজার ঘুরে দেখলাম, সাধারণ ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে সর্বোচ্চ ৫০ টাকা করে চামড়া কিনে নিয়ে এই বাজারেই আড়তদাররা টেনারি মালিকদের কাছে ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা করে চামড়া বিক্রি করছে। কেন এভাবে সাধারণ ব্যবসায়ীদের গলাকাটা হচ্ছে এবং এয়াতিম-মিসকিনদের হক নষ্ট করা হচ্ছে?
উত্তরার বাউনিয়া থেকে ২০টি বড় গরুর চামড়া টঙ্গী বাজারে বিক্রি করতে আসেন প্রদীপ চন্দ্র রায়। তিনি বলেন, আমিও এখানে চামড়া বিক্রি করতে এসে বিপদে পড়েছি। না পারছি চামড়া ফেরত নিতে, না পারছি বিক্রি করতে।
টঙ্গী বাজারের একজন পাইকারি চামড়া ব্যবসায়ী আমান উল্লাহ জানান, তারা চামড়ার সাইজ অনুযায়ী ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা করে টেনারি মালিকদের কাছে বিক্রি করছেন।
বাজারের ইজারাদারদের টোল অফিসে যোগাযোগ করা হলে দায়িত্বরত কর্মচারীরা অভিযোগ অস্বীকার করে দাবি করেন, তারা বিক্রেতাদের কাছ থেকে কোন টোল আদায় করেন না। যারা চামড়া ক্রয় করেন শুধু তাদের কাছ থেকেই টোল আদায় করেন। চামড়া ফেরত নিতে চাইলে কাউকে বাধা দেয়া হয় না বলেও তারা দাবি করেন।