পুঁজিবাজারে ফের বিপর্যয়ের আশঙ্কা
- অর্থনৈতিক প্রতিবেদক
- ৩০ এপ্রিল ২০১৯, ০৭:৪৭
পুঁজিবাজারে নতুন করে বিপর্যয়ের আশঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে। থামছে না বাজারের টানা পতন। ধারাবাহিক এ পতনের ফলে গত তিন মাসে দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ মূলধন হারিয়েছে প্রায় ৪০ হাজার কোটি টাকা। সূচক হারিয়েছে প্রায় ৮০০ পয়েন্ট। এ পরিস্থিতিতে সর্বস্ব হারিয়ে পথে বসতে চলেছেন পুঁজিবাজারের লাখ লাখ বিনিয়োগকারী। ফলে এ মুহূর্তে চরম বিক্ষুব্ধ তারা। গত কয়েক দিন বিক্ষোভ ও মানববন্ধনের পর গতকাল লেনদেনের শুরু থেকে বাজারের পতন শুরু হলে তারা প্রতীক অনশনের মতো কঠিন কর্মসূচি পালন করেছেন। বেলা ২টায় জাতীয় সংসদের সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি রাশেদ খান মেনন এমপি অনশনকারীদের সাথে সংহতি প্রকাশ করতে ডিএসইর সামনে পৌঁছেন। এমপি জুস পান করিয়ে এ অনশন ভঙ্গ করান।
বেলা ১১টা থেকে বিনিয়োগকারীদের প্রতীক অনশন শুরু হয়। পুঁজিবাজাার বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদের ব্যানারে এ কর্মসূচিতে কয়েক শ’ বিনিয়োগকারীকে অংশ নিতে দেখা যায়। এ সময় সংগঠনের নেতৃবৃন্দ পুঁজিবাজারের চলমান অস্থিরতা নিরসনে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেন। বক্তারা বলেন, ২০১১ সালে বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপেই বাজার ধীরে ধীরে আস্থায় ফিরে আসে। পুঁজিবাজারের জন্য তিনি সে সময় অনেকগুলো প্রণোদনা ঘোষণা করেন। এবারো পরিস্থিতি বিবেচনায় প্রধানমন্ত্রীকে এ দায়িত্ব নেয়ার আহ্বান জানান তারা।
বক্তারা বলেন, ২০১১ সালে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা সংস্কার করা হলেও সংস্থাটি গত ৯ বছরে বাজারের স্থিতিশীলতা ফেরাতে ব্যর্থ হয়েছে। উপরন্তু নানা সুযোগ-সুবিধা গ্রহণের বিনিময়ে বিভিন্ন মৌল ভিত্তিহীন কোম্পানিকে পুঁজিবাজার থেকে মূলধন উত্তোলনের সুযোগ করে দিয়েছে। এর ফলে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়ার দুই-তিন বছরের মধ্যে কোম্পানিগুলো আর উৎপাদনে থাকছে না। এ প্রসঙ্গে তারা অ্যাপোলো ইস্পাতসহ বেশ কয়েকটি কোম্পানির নাম উল্লেখ করেন, যেগুলো প্রিমিয়ামসহ বাজারে তালিকাভুক্ত হলেও এ মুহূর্তে ‘জেড’ ক্যাটাগরিতে। এ ছাড়া বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধার বিনিময়ে বিভিন্ন কোম্পানিকে প্লেসমেন্ট শেয়ারের অনুমতি দেয়া হয়েছে, যেগুলো পরে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয়ে ওই সব প্লেসমেন্ট শেয়ার বিক্রি করে বিপুল অর্থ হাতিয়ে নিয়েছে।
২০১০ সালের পুঁজিবাজার বিপর্যয়ের পর ঢাকা চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বেশ কয়েকজন বিনিয়োগকারীর আত্মহননের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে তারা যত দ্রুত সম্ভব বিএসইসির পুনর্গঠনের মাধ্যমে বাজার পরিস্থিতির উন্নতি বিধানে অর্থমন্ত্রীসহ সরকারের নীতিনির্ধারকদের কাছে দাবি জানান। এটা করা না হলে ২০১০-১১ সালের মতো নতুন করে বিপর্যয়ের আশঙ্কা প্রকাশ করেন তারা, যা বর্তমান সরকারের জন্য কোনোভাবেই সুখকর হওয়ার কথা নয়।
প্রসঙ্গত, জানুয়ারির শেষ সপ্তাহ থেকে পুঁজিবাজারের এ পতন শুরু হয়। ওই দিন ডিএসই সূচকের অবস্থান ছিল ৫ হাজার ৯৫০ পয়েন্টে। গতকাল ডিএসইর প্রধান সূচক নেমে আসে ৫ হাজার ১৭৫ পয়েন্টে। ৫ হাজার ২৩৮ পয়েন্ট থেকে দিন শুরু করা সূচকটি ৬২ পয়েন্ট হারিয়ে এ-পর্যায়ে নামে। আর ২৯ ডিসেম্বর ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের বাজার মূলধন ছিল চার লাখ ২১ হাজার ৫৮১ কোটি টাকা, যা গতকাল লেনদেন শেষে দাঁড়ায় তিতন লাখ ৮২ হাজার ৭০১ কোটি টাকায়।
বাজার পরিস্থিতি নিয়ে জানতে চাইলে বিশিষ্ট পুঁজিবাজার বিশ্লেষক ড. মোহাম্মদ মুসা নয়া দিগন্তকে বলেন, পুঁজিবাজারে এখন যা হচ্ছে তা কারো বোধগম্য নয়। দিনের পর দিন বিনিয়োগকারীরা সর্বস্বান্ত হচ্ছেন। আর যারা বিষয়টি নিয়ে কাজ করছেন তারা বলছেন এটি কোনো সমস্যা নয়। এটি সব দেশেই ঘটে থাকে। আবার সংসদে বসে আগামী বাজেটে পুঁজিবাজারের সঙ্কট কাটাতে প্রণোদনারও ঘোষণা দেন; কিন্তু কী প্রণোদনা দেয়া হবে তারও কোনো উল্লেখ নেই।
সিএসইর সামনে অনশন : চট্টগ্রাম ব্যুরো জানায়, পুঁজিবাজারে অব্যাহত দরপতনের প্রতিবাদে চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সামনে বেলা সাড়ে ১১টা থেকে দেড় ঘণ্টার প্রতীকী অনশন কর্মসূচি পালন করেছেন বিনিয়োগকারীদের সংগঠন ইনভেস্টরস ফোরাম অব চট্টগ্রাম। ক্ষুব্ধ বিনিয়োগকারীরা বলেন, গত দুই মাস ধরে টানা দরপতনে পুঁজিবাজারে ৬০০ পয়েন্ট কমে গেছে। দেশ স্থিতিশীল এবং অর্থনীতির সব সূচকে আগালেও ক্রমাগত নি¤œমুখী পুঁজিবাজার। এর পেছনে নিয়ন্ত্রক সংস্থার ব্যর্থতাকে দায়ী করে সেটি পুনর্গঠনের দাবি জানান বিনিয়োগকারীরা। দেশের পুঁজিবাজারকে গতিশীল করে বিনিয়োগকারীদের আস্থায় আনতে আসছে বাজেটে বিশেষ প্রণোদনাও দাবি করেন তারা। এ সময় কোম্পানির পরিচালকদের ব্যক্তিগতভাবে ২% এবং সম্মিতিভাবে ৩০% শেয়ার রাখার বাধ্যবাধকতার আইন কার্যকর করারও দাবি জানানো হয় অনশনকালে। পরে তারা শরবত পান করে অনশন ভঙ্গ করেন।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা