বাম্পার ফলনেও হাসি নেই মুখে
- জিয়াউল হক মিজান
- ১৯ মার্চ ২০১৯, ০৮:৪৯
দেশে এ বছর আলুর বাম্পার ফলন হয়েছে। আলু চাষিদের খেলাপি ঋণ পুনঃতফসিল করেছে সরকারি ব্যাংকগুলো। ২০ বছরের কিস্তিতে ঋণ পরিশোধের সুযোগ পাচ্ছেন আলু ব্যবসায়ীরাও। কিন্তু তাতেও ভালো নেই আলু চাষী, ব্যবসায়ী এবং হিমাগারের মালিকরা। এর কারণে অসময়ে অতিবৃষ্টির কারণে এক সাথে সব আলু ঘরে তুলতে হচ্ছে।
এতে খরচ অনেক বেড়ে গেলেও আলুর উপযুক্ত দাম পাওয়া যাচ্ছেন না। সংরক্ষণের সুযোগ অপেক্ষাকৃত কম হওয়ায় এবং হাতে টাকা না থাকায় আলু কিনতে পারছেন না ব্যবসায়ীরা। ফলে উৎপাদন খরচের চেয়ে কম দামে আলু বিক্রি করতে গিয়ে বিপাকে পড়েছেন চাষিরা।
বিভিন্ন পর্যায়ের কৃষক এবং আলু ব্যবসায়ীর সাথে কথা বলে জানা যায়, একেক বিঘা জমিতে এবার আলু উৎপাদন হয়েছে ৮০ থেকে ৯০ বস্তা। মাঠভরা আলু সংগ্রহ করতে গিয়ে দারুণ খুশি কৃষক। কিন্তু এই হাসি মিলিয়ে যাচ্ছে বাজারে গিয়ে। কারণ এক বস্তা আলু বিক্রি করে একজন শ্রমিকের মজুরিও উঠছে না।
কৃষক পর্যায়ে কেজি প্রতি পাঁচ-ছয় টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে আলু। তা-ও এত পরিমাণ আলু যে কেনার লোকও পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে হতাশ হয়ে বাড়ি ফিরছেন কৃষকরা। বাজারে ৫৫ কেজির প্রতি বস্তা আলু বিক্রি হচ্ছে ২০০ থেকে ৩০০ টাকা দরে। সেই হিসেবে এক বিঘা জমির আলু বিক্রি করে পাওয়া যাচ্ছে বড়জোর ২৫ হাজার টাকা।
কিন্তু এক বিঘায় আলু চাষে খরচ হয়েছে ৩০ থেকে ৩৫ হাজার টাকা। ফলে গতবারের মতো এবারও ক্ষতির মুখে পড়েছেন চাষিরা। আর যাদের ফলন খারাপ হয়েছে বা জমি লিজ নিয়ে আলু চাষ করেছেন, তারা পড়ছেন আরো বেশি লোকসানে। কারণ এক বিঘা জমি লিজ বাবদই অতিরিক্ত ১২ থেকে ১৫ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। এ হিসাবে জমি লিজ নেয়া চাষিদের বিঘাপ্রতি খরচ হবে অন্তত ৪০ হাজার টাকা।
আবার হিমাগারে আলু রাখতেও অতিরিক্ত খরচ করতে হচ্ছে। এ কারণে অনেকে হিমাগারের ভাড়ার টাকাও সংগ্রহ করতে পারছে না। ফলে অনেকেই বাধ্য হয়ে কম দামে আলু বিক্রি করে দিচ্ছেন।
জানা যায়, গত দুই বছর আলুতে ব্যবসায়ী ও কৃষকদের ব্যাপক লোকসান হয়েছে। এ কারণে ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হন অনেকেই। ফলে ব্যাংকের কাছে খেলাপি হয়ে গেছেন। আগেই খেলাপি হয়ে যাওয়ায় এবার মওসুমে ঋণ নিতে পারছেন না ব্যবসায়ীরা। ব্যবসায়ীদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে আলুচাষি ও ব্যবসায়ীদের সরকারি ব্যাংকগুলোয় ঋণ ২০ বছরের জন্য পুনঃতফসিল করে দেয়া হয়েছে। এ জন্য ডাউনপেমেন্ট দিতে হবে মাত্র ৫ শতাংশ।
আলুচাষি ও ব্যবসায়ীদের সুবিধা দিতে ইতোমধ্যে অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর ও সরকারি ব্যাংকগুলোর এমডিদের কাছে চিঠি পাঠানো হয়েছে। ওই চিঠিতে অর্থ মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের জন্য বলা হয়েছে। কিন্তু সরকারি ব্যাংক সুবিধা দিতে রাজি হলেও বেসরকারি ব্যাংক থেকে কোনো সুবিধা পাওয়া যাচ্ছে না।
বিশেষজ্ঞদের মতে, কৃষককে আলুর উপযুক্ত দাম দিতে সরকারিভাবে বিভিন্ন সময়ে আলু রফতানি কথা বলা হলেও কোনো উদ্যোগই কার্যকর হয়নি। কারণ আলুর রফতানি বৃদ্ধির জন্য ভাল জাতের ও গুণগতমানের আলু উৎপাদন করতে হবে কৃষকদের। বর্তমানে বাংলাদেশে অবমুক্ত প্রায় ৪০টি জাতের উন্নত আলুর চাষাবাদ হচ্ছে কৃষক পর্যায়ে।
উচ্চফলনশীল জাতের আলুবীজ সম্প্রসারিত হয়েছে ৮০ শতাংশেরও বেশি আবাদি এলাকায়। কিন্তু কৃষক পর্যায়ে প্রত্যয়িত বীজ ব্যবহারের হার মাত্র ১০ শতাংশ। বাকি ৯০ শতাংশ অপ্রত্যয়িত। তাদের মতে, ভালো খামার ব্যবস্থাপনা, যথাযথ পর্যায়ে উপকরণ ব্যবহার, রোগ প্রতিরোধ, পোকা-মাকড় নিয়ন্ত্রণ ইত্যাদি সম্পর্কিত ভালো ধ্যান-ধারণার কৃষকদের ঘাটতি আছে। এর জন্য উপযুক্ত প্রশিক্ষণ দিতে হবে তাদের। এ ছাড়া ভালোভাবে প্রক্রিয়াজাতকরণ, প্যাকেটজাতকরণ ও সংরক্ষণ অবকাঠামোর উন্নয়ন সাধন করতে হবে।
বাংলাদেশ কোল্ড স্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশনের তথ্যানুযায়ী, এ বছর দেশে ৯৫ লাখ টন আলু উৎপাদিত হবে বলে আশা করা হচ্ছে। এর মধ্যে ৫৫ লাখ টন আলু সংরক্ষণের প্রয়োজন পড়বে। কিন্তু খেলাপি হয়ে যাওয়ায় আলু সংগ্রহ করতে পারছেন না ব্যবসায়ীরা। ব্যবসায়ীরা আলু না কেনায় আলুর দাম কমে গিয়ে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন কৃষকরাই।
সমিতির প্রথম সহসভাপতি কামরুল ইসলাম চৌধুরী গোর্কি বলেন, আমরা পরিস্থিতির শিকার হয়ে খেলাপি হয়েছি। এখন আলুর মওসুম চলছে। কিন্তু আমাদের কাছে টাকা না থাকা এবং ব্যাংকের কাছ থেকে নতুন করে ঋণ না পাওয়ায় এ খাতে অস্থিরতা তৈরি হয়েছে। এখন আলু সংরক্ষণ করতে না পারলে আলুর দাম কমে যাবে। আলু নষ্ট হয়ে যাবে। পরবর্তী সময়ে সঙ্কটের কারণে আলুর দাম অনেক বাড়বে, যা অন্য খাদ্য পণ্যের দামও বাড়িয়ে দেবে বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা