১৮ নভেম্বর ২০২৪, ৩ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ১৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

খেলাপি ঋণ সোয়া লাখ কোটি টাকা, আদায় মাত্র আড়াই হাজার!

-

ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে পরিশোধ না করার প্রবণতা বেড়ে যাচ্ছে। ফলে এক দিকে খেলাপি ঋণ বেড়ে যাচ্ছে, অন্যদিকে কমে যাচ্ছে আদায়। ব্যাংকগুলো থেকে প্রাপ্ত সর্বশেষ পরিসংখ্যান মতে, সেপ্টেম্বর শেষে অবলোপনসহ প্রায় ১ লাখ ২৭ হাজার কোটি টাকার খেলাপি ঋণের মধ্যে আদায় হয়েছে মাত্র ২ হাজার ৬৫২ কোটি টাকা। খেলাপি ঋণের বিপরীতে আদায়ের হার মাত্র ২ দশমিক ১ শতাংশ।

ব্যাংকাররা জানিয়েছেন, ২০১৪ ও ১৫ সালে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ঋণ নবায়নের বিশেষ সুযোগ দেয়া হয়। ২০১৪ সালে রাজনৈতিক অস্থিরতায় ব্যবসায়িক মন্দার কারণ দেখিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে খেলাপি ঋণ নবায়নের বড় ধরনের সুযোগ দেয়া হয়। তৎকালীন গভর্নর যেকোনো উপায়ে খেলাপি ঋণ ১০ শতাংশের মধ্যে নামিয়ে আনার নির্দেশনা দেন। ফলে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকসহ খেলাপি ঋণ বেশি এমন ব্যাংকগুলোকে কোনো মতে ডাউন পেমেন্ট নিয়ে ঋণ নবায়ন করার মৌখিক নির্দেশনা দেয়া হয়।

ওই বছরে ডিসেম্বর প্রান্তিক শেষ হওয়ার মাত্র ১৫ দিন আগে এ নির্দেশনা দেয়ায় রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকসহ অন্য ব্যাংকগুলো শুক্রবার ছুটির দিনেও পরিচালনা পর্ষদের বৈঠক ডেকে ডাউন পেমেন্ট না নিয়েই বিপুল অঙ্কের খেলাপি ঋণ নবায়ন করে।

ফলে ডিসেম্বর প্রান্তিকে খেলাপি ঋণ আগের তিন মাসের চেয়ে না বেড়ে বরং কমে যায়। একই সাথে বড় অঙ্কের ঋণখেলাপিদের ছাড় দেয়ার জন্য ঋণ পুনর্গঠনের নামে বিশেষ সুযোগ দেয়া হয়। যেমন ৫০০ কোটি টাকা থেকে এক হাজার কোটি টাকা পর্যন্ত ঋণখেলাপিদের মাত্র ২ শতাংশ ডাউন পেমেন্ট নিয়ে এবং এক হাজার কোটি টাকার ওপরের ঋণখেলাপিদের মাত্র এক শতাংশ ডাউন পেমেন্ট নিয়ে ঋণ নবায়নের সুযোগ দেয়া হয়। অথচ, ব্যাংক কোম্পানি আইন অনুযায়ী ১০০ টাকার খেলাপি ঋণকে নবায়ন করতে হলে গ্রাহককে ১৫ টাকা নগদে আগাম পরিশোধ করতে হবে। একই সাথে বিদ্যমান সুদহারেও বিশেষ ছাড় দেয়া হয়। ফলে ১২টি ব্যবসায়ী গ্রুপ ১৫ হাজার কোটি টাকার খেলাপি ঋণ নবায়ন করেন এ সুযোগ নিয়ে। একই সাথে খেলাপি ঋণ কমাতেও ২০১৪ ও ২০১৫ সালে সুদ মওকুফের হিড়িক চলে।

দেশের প্রথম প্রজন্মের একটি ব্যাংকের এমডি জানিয়েছেন, বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে খেলাপি ঋণ নবায়নের নীতিমালা শিথিল করায় ব্যবসায় অসম প্রতিযোগিতার সম্মুখীন হন নিয়মিত যারা ঋণ পরিশোধ করতেন তারা। কারণ ব্যাংক থেকে একজন ঋণ নিয়ে পরিশোধ না করে ব্যবসায় করায় তার ব্যবসায়ী ব্যয় কমে যায়। অন্য দিকে ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে সুদে-আসলে পরিশোধ করায় তুলনামূলকভাবে ওই ব্যবসায়ীর ব্যবসায় ব্যয় বেড়ে যায়। এ অসম প্রতিযোগিতার হাত থেকে রক্ষা পেতে যারা নিয়মিত ঋণ পরিশোধ করতেন ওই সব গ্রাহক ঋণ পরিশোধে নিরুৎসাহিত হয়ে পড়েন। এভাবেই ব্যাংকের খেলাপি ঋণ বেড়ে যায়।

সর্বশেষ পরিসংখ্যান মতে, গত সেপ্টেম্বর শেষে অবলোপনসহ মোট খেলাপি ঋণ ছিল ১ লাখ ২৬ হাজার ৬০০ কোটি টাকা। কিন্তু এর মধ্যে আদায় হয়েছে মাত্র ২ হাজার ৬৫২ কোটি টাকা। খেলাপি ঋণের মধ্যে রাষ্ট্রায়ত্ত ৬ ব্যাংকেরই প্রায় অর্ধেক। কিন্তু আদায় হয়েছে সবচেয়ে কম। যেমন ৬ রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের সেপ্টেম্বর শেষে অবলোপনসহ মোট খেলাপি ঋণ ছিল ৬০ হাজার ৫৬০ কোটি টাকা। কিন্তু আদায় হয়েছে মাত্র ৬৫৪কোটি টাকা, যা শতকরা হিসাবে মাত্র ১ দশমিক শূন্য ৮ শতাংশ।

সরকারি ব্যাংকগুলোর মধ্যে সোনালী ব্যাংক আলোচ্য তিন মাসে খেলাপি ঋণ আদায় করেছে সবচেয়ে বেশি। সোনালী ব্যাংকের আলোচ্য সময়ে অবলোপনসহ ২০ হাজার ৩২০ কোটি টাকার খেলাপি ঋণের মধ্যে আদায় করেছে প্রায় ৩৮০ কোটি টাকা, যা মোট খেলাপি ঋণের ১ দশমিক ৮৭ শতাংশ।

এ বিষয়ে সোনালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ওবায়েদ উল্লাহ আল মাসুদ নয়া দিগন্তকে জানিয়েছেন, সোনালী ব্যাংক থেকে প্রত্যেক দায়িত্বশীল কর্মকর্তাকে বেশি হারে না দিয়ে স্বল্প পরিসরে ঋণ আদায়ের টার্গেট দিয়েছিল। স্বল্প টার্গেট দেয়ায় অনেকেই এটা উৎসবের মতো নিয়েছেন। ফলে প্রত্যেকেই অল্প হলেও দীর্ঘ দিনের পুরনো খেলাপি ঋণ আদায় করতে পেরেছেন। এতেই সামগ্রিকভাবে খেলাপি ঋণ আদায় বেড়েছে ব্যাংকটির।

অন্য সরকারি ব্যাংকগুলোর মধ্যে রূপালী ব্যাংক ৫ হাজার ৫১২ কোটি টাকার মধ্যে আদায় করেছে ৪৮ কোটি টাকা, যা খেলাপি ঋণের শূন্য দশমিক ৮৮ শতাংশ। জনতা ব্যাংক ১৩ হাজার ৩৪ কোটি টাকার খেলাপি ঋণের মধ্যে আদায় করেছে মাত্র ৬৩ কোটি টাকা, আদায়ের হার মাত্র শূন্য দশমিক ৪৯ শতাংশ। অগ্রণী ব্যাংক ১০ হাজার ২১৯ কোটি টাকার খেলাপি ঋণের মধ্যে আদায় করতে পেরেছে ৯৪ কোটি টাকা, আদায়ের হার মাত্র শূন্য দশমিক ৯৩ শতাংশ। এর বাইরে বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক ১ দশমিক ৭২ শতাংশ এবং বেসিক ব্যাংক শূন্য দশমিক ২৬ শতাংশ খেলাপি ঋণ আদায় করতে পেরেছে তিন মাসে।

এ দিকে বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোতে সেপ্টেম্বর শেষে ৫৭ হাজার ২৪৮ কোটি টাকার বিপরীতে আদায় হয়েছে ১৭৬৭ কোটি টাকা। আদায়ের হার মাত্র ৩ দশমিক শূন্য ৯ শতাংশ।

ব্যাংকাররা জানিয়েছেন, খেলাপি ঋণ আদায় কমে যাওয়ায় ব্যাংক বহুবিধ সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে। মোটা দাগে খেলাপি ঋণের বিপরীতে ব্যাংকের আয় থেকে প্রভিশন ঘাটতি মেটাতে হচ্ছে। মন্দঋণের বিপরীতে অর্জিত সুদ আয় খাতে নেয়া যায় না। এর ফলে ব্যাংকের সামগ্রিক আয় কমে যাচ্ছে। একই সাথে ঝুঁকিভিত্তিক সম্পদ বেড়ে যাওয়ায় ব্যাংকের মূলধন ঘাটতি বেড়ে যাচ্ছে। পাশাপাশি ঋণ আটকে যাওয়ায় এর বিপরীতে সংগৃহীত আমানত নির্ধারিত মেয়াদ শেষে নতুন আমানত নিয়ে পুরনো আমানতকারীদের অর্থ ফেরত দিতে হচ্ছে। এতে ব্যাংকের বিনিয়োগ সক্ষমতা কমে যাচ্ছে। যার সামগ্রিক প্রভাব পড়ছে অর্থনীতিতে।

 


আরো সংবাদ



premium cement
চীন সফর শেষে দেশে ফিরেছেন বিমান বাহিনী প্রধান ৪৪, ৪৫ ও ৪৬তম বিসিএস নিয়ে পিএসসি’র সিদ্ধান্ত ট্রাকচাপায় হাবিপ্রবির ল্যাব টেকনিশিয়ান নিহত 'গণহত্যায় উসকানির দায়ে' ৩৭ সাংবাদিকের প্রেসক্লাবের সদস্যপদ স্থগিত সিলেটের কানাইঘাটে বন্ধুর হাতে ছাত্রদল নেতা খুন তিতুমীর কলেজের ইস্যুটির দ্রুতই সমাধান হবে : প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব কাঁঠালিয়ায় বিদ্যুৎস্পৃষ্টে কৃষকের মৃত্যু ইয়াং মুসলিমস সোসাইটির যাত্রা শুরু টেস্ট ও প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট থেকে অবসরে ইমরুল কায়েস অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদ ৪ বছরের কথা বলেননি প্রধান উপদেষ্টা : প্রেস সচিব কমনওয়েলথভুক্ত দেশগুলো বাংলাদেশের পাশে থাকবে : সহকারী মহাসচিব

সকল