২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ৯ পৌষ ১৪৩১, ২১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

স্বল্প খরচে সাশ্রয়ী হজ প্যাকেজ আসছে

- ফাইল ছবি

সর্বনিম্ন তিন লাখ ১৫ হাজার টাকার সাশ্রয়ী প্যাকেজসহ প্রথমবারের মতো হজের তিনটি প্যাকেজ ঘোষণা করতে যাচ্ছে সরকার। মন্ত্রিসভার আজকের বৈঠকে এ সম্পর্কিত প্রস্তাব অনুমোদন হতে পারে।

সরকারি ব্যবস্থাপনায় হজযাত্রী বৃদ্ধির পরিকল্পনার অংশ হিসেবে গত বছরের বছরের সর্বনিম্ন প্যাকেজ মূল্য থেকে ২৯ হাজার টাকা কমে নতুন তৃতীয় এই প্যাকেজটির প্রস্তাব তৈরি করা হয়েছে। এতে হজযাত্রীদের মক্কায় প্রায় আড়াই হাজার মিটার দূরে স্থায়ী বাড়িতে রাখা, এক মাস সময় সৌদি আরবে অবস্থান এবং প্রথমেই মদিনায় নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে।

এ বছর বাংলাদেশের জন্য এক লাখ ৩৭ হাজার ১৯৮ জনের কোটার মধ্যে সরকারি ব্যবস্থাপনার জন্য ১৭ হাজার ১৯৮ জন পাঠানেরার টার্গেট রাখা হয়েছে।

বেসরকারি হজ এজেন্সিগুলো সরকার ঘোষিত সর্বনিম্ন প্যাকেজের সাথে সমন্বয় করে হজ প্যাকেজ ঘোষণা করতে পারবে, যা কোনোভাবেই ওই প্যাকেজের কম হতে পারবে না। গত বছর সরকারি ব্যবস্থাপনার কোটা ছিল সাত হাজার ১৯৮ জন। এ বছর সৌদি সরকার বাংলাদেশের জন্য ১০ হাজার কোটা বৃদ্ধি করে, যা সরকারি ব্যবস্থাপনার গত বছরের কোটার সাথে যুক্ত করা হয়।

গত বছর সরকারি ব্যবস্থাপনার জন্য প্যাকেজ ‘এ’ ও ‘বি’ নামে দু’টি প্যাকেজ ঘোষণা করা হয়েছিল। যার মূল্য ছিল যথাযক্রমে চার লাখ ১৮ হাজার ৫০০ টাকা ও তিন লাখ ৪৪ হাজার টাকা। থাকার বাড়ি বা হোটেলের দূরত্বের তারতম্যের কারণে প্যাকেজ মূল্যে তারতম্য হয়ে থাকে। এই দু’টি প্যাকেজের হজযাত্রীদের মসজিদুল হারাম শরিফের অদূরে মিছফালাহ ও ইব্রাহীম খলিল রোড় এলাকায় যথাক্রমে সর্বোচ্চ এক মিটার ও দুই কিলোমিটার দূরত্বে হোটেলে রাখার ব্যবস্থা করা হয়। এ বছর প্রথম দুই প্যাকেজের হজযাত্রীদের আবাসন এমন দূরত্বেই হবে।

তবে বেসামরিক বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সবশেষ এ বছর হজযাত্রীদের বিমান ভাড়া গত বছরের এক লাখ ২৮ হাজার থেকে ১০ হাজার টাকা বৃদ্ধি করে এক লাখ ৩৮ হাজার টাকা করায় এবং সৌদি সরকারের কিছু নতুন ফি আরোপ হওয়ায় অগের প্রথম দু’টি প্যাকেজের মূল্য বৃদ্ধি করে যথাক্রমে তিন লাখ ৬০ হাজার ও চার লাখ ২৫ হাজার টাকা করা হচ্ছে। ধর্ম মন্ত্রণালয় প্যাকেজ মূল্য সমন্বয় করার ক্ষেত্রে হজযাত্রীদের খাওয়ার খরচ ৩০ হাজার টাকা থেকে কমিয়ে ২৮ হাজার টাকা ধার্য করেছে।

মন্ত্রিসভার আজকের বৈঠকের কার্যতালিকায় হজ প্যাকেজ অনুমোদন অন্তর্ভুক্ত রয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের মন্ত্রিসভা কক্ষে বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। মন্ত্রিসভায় প্রস্তাবিত প্যাকেজ অনুমোদন হওয়ার পর ধর্ম মন্ত্রণালয় প্যাকেজ ঘোষণা করতে পারবে এবং বেসরকারি এজেন্সিগুলোও তাদের প্যাকেজ দিতে পারবে।

হজযাত্রীদের জন্য সাশ্রয়ী প্যাকেজ নির্ধারণ করার জন্য ধর্ম মন্ত্রণালয় গত বছরের হজের পর থেকেই সম্ভাব্যতা যাচাই শুরু করে। হজের পর ধর্মপ্রতিমন্ত্রী শেখ মো: আবদুল্লাহ সংবাদ সম্মেলনে সরকারি ব্যবস্থাপনার হজযাত্রী বৃদ্ধির কথা জানিয়েছিলেন।

এ জন্য হজযাত্রীদের মক্কায় আজিজিয়া নামক স্থানে রাখা এবং প্রথমেই হজযাত্রীদের মদিনায় রাখার বিষয়টিকে সামনে আনা হয়। এ লক্ষ্যে ধর্ম প্রতিমন্ত্রীসহ কর্মকর্তারা মক্কায় সম্ভাব্য এলাকাও পরিদর্শন করেন।

সর্বশেষ চলতি বছরের হজচুক্তিতেও মদিনা থেকে হজ ফ্লাইট বৃদ্ধির বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করা হয়। তবে বেসামরিক বিমান মন্ত্রণালয় হজযাত্রীদের বিমান ভাড়া গত বছরের চেয়ে ১২ হাজার টাকা বৃদ্ধির সিদ্ধান্তে অটল থাকলে সাশ্রয়ী তৃতীয় প্যাকেজ ঘোষণা কিছুটা অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়ে। এরই পরিপ্রেক্ষতে চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে ধর্ম প্রতিমন্ত্রীসহ কর্মকর্তারা আবারো সৌদি আরব সফর করেন। বাড়ি ভাড়া কমিয়ে সাশ্রয়ী প্যাকেজ নির্ধারণের বিষয়কে প্রাধান্য দিয়ে বাড়ির খোঁজখবর নেন। অন্য দিকে বিমান ভাড়া কমানোর জন্যও ধর্ম মন্ত্রণালয় ও হাব বেসামরিক বিমান মন্ত্রণালয়ের প্রতি অনুরোধ জানায়।

সরেজমিন দেখে ধর্ম প্রতিমন্ত্রীর নেতৃত্বে কর্মকর্তারা প্রায় আড়াই হাজার মিটার দূরে দোর কুদাই নামক স্থানে সাশ্রয়ী প্যাকেজের হজযাত্রীদের বিকল্প হিসেবে আজিজিয়া নামক স্থানে রাখার ব্যাপারে একমত হন। দোর কুদাই থেকে পায়ে হেঁটে মসজিদুল হারামে যাওয়া সম্ভব। ওই এলাকায় ভারত, পাকিস্তান ও ইন্দোনেশিয়াসহ কয়েকটি দেশের হজযাত্রীদের একটি অংশকে রাখা হয়।

দেশে ফেরত আসার পর ধর্ম মন্ত্রণালয়ের অনুরোধে বেসামরিক বিমান মন্ত্রণালয় বিমান ভাড়া দুই হাজার টাকা কমিয়ে এক লাখ ৩৮ হাজার টাকা করতে সম্মত হয়। হজযাত্রীদের বিমান ভাড়া এবং হাজীদের ওপর সৌদি সরকারের ইন্স্যুরেন্স বাবদ দুই হাজার এবং ভিসা ফি বাবদ প্রায় সাত হাজার টাকা বৃদ্ধি ছাড়া হজ প্যাকেজের সব ব্যয়ই অপরিবর্তিত থাকছে বলে জানা গেছে।

এ দিকে চলমান প্রাক-নিবন্ধনের ক্রম তালিকা অনুযায়ী ইতোমধ্যেই বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় এ বছরে যে এক লাখ ২০ হাজার জনের কোটা রয়েছে তা অতিক্রম করেছে। তবে সরকারি ব্যবস্থাপনায় এ বছরের জন্য নির্ধারিত কোটা এখনো খালি রয়েছে। গতকাল পর্যন্ত বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় প্রাক-নিবন্ধিত হজযাত্রীর সংখ্যা দাঁড়ায় দুই লাখ ১২ হাজার চারজন। অন্য দিকে সরকারি ব্যবস্থাপনার প্রাক-নিবন্ধিত হয়েছেন ছয় হাজার ৫৯ জন।


আরো সংবাদ



premium cement