২৮ নভেম্বর ২০২৪, ১৩ অগ্রহায়ন ১৪৩১, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

মিয়ানমারকে আন্তর্জাতিক আদালতে জবাবদিহিতায় বাধ্য করল গাম্বিয়া

-

রাখাইনে সংখ্যালঘু মুসলিম রোহিঙ্গাদের জাতিগতভাবে নিধনের লক্ষে চালানো গণহত্যার জন্য মিয়ানমারকে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে (আইসিজে) জবাবদিহি করতে বাধ্য করেছে আফ্রিকার দেশ গাম্বিয়া। মিয়ানমারের বিরুদ্ধে জাতিসঙ্ঘের গণহত্যার সনদ লঙ্ঘনের অভিযোগে ইসলামি সহযোগিতা সংস্থার (ওআইসি) সমর্থনে মামলা করা দেশটি একইসাথে রোহিঙ্গাদের ওপর বিচারবহির্ভূত হত্যা, ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগ, জীবিকা ধ্বংস ও নিপীড়ন বন্ধে আন্তর্জাতিক এ আদালতের কাছে অন্তবর্তীকালীন পদক্ষেপ চেয়েছে।

গত ১০ ডিসেম্বর নেদারল্যান্ডসের দ্য হেগে আইসিজেতে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলার শুনানীর প্রথম দিনে গাম্বিয়া আদালতের এ আদশে চায়। ‘বিশ্ব আদালত’ নামে পরিচিত জাতিসঙ্ঘের সর্বোচ্চ এই আদালত ১৫ জন বিচারকের সমন্বয়ে গঠিত, যারা নিরাপত্তা পরিষদ বা সাধারণ পরিষদ দ্বারা নির্বাচিত। গাম্বিয়া বলেছে, এ ধরনের পদক্ষেপ নেয়ার পূর্ণ এখতিয়ার আইসিজের রয়েছে।

এর আগে রোহিঙ্গা ইস্যুতে মিয়ানমার আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের (আইসিসি) এখতিয়ার অস্বীকার করছে। মানবাধিকার বিষয়ক জাতিসঙ্ঘের স্পেশাল রেপোর্টিয়ার এবং জাতিসঙ্ঘের তথ্যানুসন্ধান দলকে মিয়ানমারে ঢোকার অনুমতি দেয়া হয়নি। বাংলাদেশের সাথে প্রত্যাবাসন চুক্তি করেও একজন রোহিঙ্গাকেও ফেরত নেয়নি প্রতিবেশী দেশটি। কিন্তু আইসিজে সনদে স্বাক্ষরকারী হিসাবে আন্তর্জাতিক এই আদালতকে অস্বীকার করতে পারেনি দেশটি।

এই প্রথমবারের মতো রোহিঙ্গা ইস্যুতে আত্মপক্ষ সমর্থনের জন্য মিয়ানমার কোনো আদালতে দাড়াল। ক্ষমতাসীন এনডিএ দলের নেতা নোবেল জয়ী অং সান সু চি স্বয়ং এ মামলার শুনানীতে মিয়ানমার প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন। রোহিঙ্গা ইস্যুতে বিশ্ববাসীকে নিজেদের অবস্থান জানানোর ক্ষেত্রে এটিকে একটি সুযোগ হিসাবে বিবেচনা করছে মিয়ানমার।

মিয়ানমারের বিরুদ্ধে মামলা পরিচালনায় গাম্বিয়াকে সহযোগিতা দিচ্ছে বাংলাদেশ, কানাডা ও নেদারল্যান্ডস। বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিব শহীদুল হকের নেতৃত্বে উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি দল শুনানীতে উপস্থিত ছিল। অন্যদিকে কানাডার প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন মিয়ানমার বিষয়ক দেশটির বিশেষ দূত বব রে।

শুনানীর প্রথম দিন গাম্বিয়া বক্তব্য উত্থাপন করেছে। পরদিন বক্তব্য রাখে মিয়ানমার। শেষ দিন গাম্বিয়া ও মিয়ানমার উভয়েই পাল্টাপাল্টি যুক্তিতর্ক উত্থাপনের সুযোগ পায়। শুনানী শেষে আইসিজে ছয় থেকে আট সপ্তাহের মধ্যে অন্তবর্তীকালীন পদক্ষেপের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত দেবে।

গত ১১ নভেম্বর গাম্বিয়া গণহত্যার সনদ ভঙ্গের অভিযোগে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে আইসিজেতে মামলা দায়ের করে। গাম্বিয়ার অভিযোগ, মিয়ানমারের রোহিঙ্গাদের ওপর গণহত্যা চালানো হয়েছে, যার প্রক্রিয়া আজো অব্যাহত রয়েছে।

শুনানীতে গাম্বিয়ার প্রতিনিধি দলের প্রধান দেশটির বিচারমন্ত্রী ও আটর্নি জেনারেল আবুবাকার তামবাদু বলেন, আজ আমি আপনাদের সামনে দাড়িয়েছি বিশ্ব বিবেককে জাগ্রত করতে। বিশ্বের ইতিহাসে সব গণহত্যাই একটি নির্দিষ্ট উদ্দেশ্যে সংগঠিত হয়েছে। আকশ্মিকভাবে তা হয়নি। এটা সন্দেহ, অবিশ্বাস ও মিথ্যা প্রচারের মধ্য দিয়ে শুরু হয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের ওপর আর একটি গণহত্যা সংঘঠিত হয়েছে। তিনি বলেন, যে কোনো গণহত্যায় দুটি দিক থাকে। প্রথমত, অমানবিক কর্মকান্ড। দ্বিতীয়ত, বিশ্বের নিরবতা। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতিটি দিনের নিরবতা রোহিঙ্গা পরিস্থিতিকে আরো নাজুক করে তুলেছে। শেষ পর্যন্ত গণহত্যার শিকার হয়ে তাদের চরম মূল্য দিতে হয়েছে।

বিশ্ব কোন রোহিঙ্গা গণহত্যার নিরব সাক্ষী হয়ে রইবে প্রশ্ন রেখে তামবাদু বলেন, আমরা জাতিসঙ্ঘের সর্বোচ্চ আদালতে এসেছি। এই আদালত দশকের পর দশক ধরে মানবতার মূল্যবোধকে সমুন্নত রেখেছে। নিপীড়িত ও দুর্বলদের পক্ষে আইসিজে দাড়াবে - এটা আমার প্রত্যাশা। তিনি বলেন, মিয়ানমারকে গণহত্যা বন্ধ করতে হবে। রোহিঙ্গাদের শান্তিতে বসবাস করার সুযোগ দিতে হবে। রোহিঙ্গা শিশুদের শিক্ষা ও ভবিষ্যতের নিশ্চয়তা দিতে হবে।

রাখাইনের ঘটনাবলী সম্পর্কে গাম্বিয়া অসম্পূর্ণ ও বাস্তবতাবর্জিত অভিযোগ উত্থাপন করেছে বলে মন্তব্য করে মিয়ানমারের রাষ্ট্রীয় পরামর্শক ও ক্ষমতাসীন দলের নেতা অং সান সু চি শুনানীতে বলেছেন, অভিযোগগুলো আদালতকে মাঠ পর্যায়ে যথাযথভাবে খতিয়ে দেখতে হবে। রাখাইনের পরিস্থিতি জটিল। সেখানে আরাকান আর্মির সাথে নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্ঘাত চলছে।

রাখাইনে সঙ্ঘাত উষ্কে দেয় বা শান্তি-শৃঙ্খলা বিঘিœত হয় এমন কোনো পদক্ষেপ নেয়া থেকে আন্তর্জাতিক বিচারিক আদালতকে (আইসিজে) বিরত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন সু চি।


আরো সংবাদ



premium cement