২৭ নভেম্বর ২০২৪, ১২ অগ্রহায়ন ১৪৩১, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

জনপ্রিয় হচ্ছে বিচিহীন লেবু চাষ

জনপ্রিয় হচ্ছে বিচিহীন লেবু চাষ - ছবি : নয়া দিগন্ত

কৃষকদের প্রযুক্তিগত কলা কৌশল আর উদ্বুদ্ধকরণের মধ্যে দিয়ে মাদারীপুরে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে বিচিহীন লেবু চাষ। বাণিজ্যিকভাবে বিচিহীন লেবু চাষ করে লাভবান হচ্ছেন কৃষকরা। ভালো ফলন ও বাজারে লেবুর চাহিদা থাকায় লেবু চাষে ঝুকছে কৃষকরা। প্রতি বছরই লেবু চাষে আবাদী জমির পরিমান বাড়ছে। বাজারে এখানকার সীডলেস লেবু প্রতি’শ বিক্রি হচ্ছে আড়াই থেকে তিনশত টাকা দরে। বাজারে লেবুর ভালো দাম পাওয়ায় হাসি ফুটেছে কৃষকদের মুখে। লেবু বাগানীরা এখন লেবু বাজারজাতকরণে ব্যস্ত সময় পার করছেন।

জানা যায়, মাদারীপুরের রাজৈর উপজেলার বদরপাশা ইউনিয়নের শংকরদীপাড় পাট্টাবুকা গ্রামের রমিম মোল্লা ৫ একর জমিতে প্রথম সীডলেস লেবুর আবাদ শুরু করেন। এরপর তিনি আরো ৩ একর জমিতে শুরু করেন লেবুর আবাদ। ৮ একর জমিতে লেবুর চাষ করতে তার খরচ হয়েছে ২২ লাখ টাকা। তার বাগানের লেবু গাছের বয়স দেড় বছর। এরই মধ্যে গাছে ফলন ধরেছে। তিনি এ পর্যন্ত ১২ লাখ টাকা বিক্রি করেছেন। একটি লেবু গাছে ১৫ বছর পর্যন্ত ফল দিয়ে থাকে। লেবুর বাগানে এখন আর তেমন খরচ হয় না। তিনি আগামীতে তার জমির লেবু বাগান থেকে অর্ধ কোটি টাকার লেবু বিক্রি করতে পারবেন বলে তিনি আশাবাদী। রমিম মোল্লা তার নিজস্ব বাগান ছাড়াও একই এলাকায় তাহাজুত খলিফা ও শাহীন মোল্লাকে নিয়ে আরো ৮ একর জমিতে শেয়ারে সীডলেস লেবুর বাগান করে তারা এখন স্বাবলম্বী।

এছাড়াও রমিম মোল্লা একই উপজেলার কবিরাজপুর এলাকায়ও সীডলেস লেবুসহ অন্যান্য ফলের বাগান করার জন্য আরো ১৫ একর জমিতে লেবু বাগান করার জন্য কাজ শুরু করেছেন। তাদের লেবু বাগানে নিয়মিত ৭/৮ শ্রমিক করছেন। তারা যে বেতন পাচ্ছেন তা দিয়ে তাদের সংসার চলছে ভালোভাবেই। তাদের লেবুর বাগান দেখার জন্য বিভিন্ন জেলা থেকে কৃষকরা আসছেন এবং লেবুর চারা ও কলম নিয়ে বাগান করে তারাও হচ্ছেন স্বাবলম্বী। মাদারীপুরের সীডলেস লেবু চাষীদের মধ্যে সুদমুক্ত ঋণের ব্যবস্থা করা হলে জেলার চারটি উপজেলায় লেবুর চাষ দ্রুত বৃদ্ধি পাবে এমনটাই প্রত্যাশা মাদারীপুরের কৃষকদের।

শংকরদীপাড় গ্রামের সফল সীডলেস লেবু চাষী তাহাজুজ খলিফা জানান, তিন জন মিলে শেয়ারে ৮ একর জমিতে লেবু চাষ করে লাভবান হওয়ায় তিনি নিজস্ব আরো সাড়ে তিন একর জমিতে লেবু চাষ করেছেন। আগামী এক মাসের মধ্যে তার জমির লেবু বিক্রি করতে পারবেন এবং তিনি লাভবান হবেন বলে আশাবাদী।

একই গ্রামের শাহীন মোল্লা জানান, লেখা পড়ার পাশাপাশি তিনি শেয়ারে লেবু চাষ করে স্বাবলম্বী হয়েছেন। তিনি আগামীতে আবাদী জমির পরিমান বাড়াবেন বলে জানান।

রাজৈর উপজেলার মজুমদারকান্দি গ্রামের জাকারিয়া শেখ জানান, তিনি উপজেলার শংকরদীপাড় গ্রামের তিন যুবকের লেবুসহ বিভিন্ন শাক সবজির বাগান করে লাভবান হওয়ায় তিনি ৬৩ শতাংশের ২বিঘা জমিতে শশা চাষ করে লাভবান হয়েছেন। তিনি শশা ছাড়াও ২ একর জমিতে সীডলেস লেবুর আবাদ করেছেন। তিনি আবাদী জমির পরিমাণ বাড়ানের কথা বলছেন।

গোপালগঞ্জ জেলার মুসকুদপুর এলাকার আব্দুর রহিম মোল্লা জানান, তিনি রাজৈরের তিন যুবকের সিডলেস লেবুর চাষাবাদে স্বাবলম্বী হওয়ার কথা শুনে লেবুর চারা ও কলম সংগ্রহের জন্য আসছেন। এছাড়াও লেবুর আবাদের কলাকৌশল ও কারিগরি প্রশিক্ষণ নেয়ার জন্য কৃষি বিভাগের শরণাপন্ন হয়েছেন।

মাদারীপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক জি.এম.এ গফুর জানিয়েছেন, জেলার কিছু সংখ্যক প্রগতিশীল কৃষক ইতিমধ্যে সীডলেস লেবুর আবাদ শুরু করেছেন। তারা বানিজ্যিক ভিত্তিতে এই লেবু আবাদ করে লাভবান হচ্ছেন। আশা করা যায় এই লেবুর আবাদ আরো রাজৈরসহ অন্যান্য উপজেলাতে ছড়িয়ে পড়বে। এ ব্যাপারে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে কারিগরি কলা কৌশল এবং বীজ বা কলম প্রাপ্তির বিষয়ে পরামর্শ প্রদান করা হচ্ছে। জেলায় ৬৪ হেক্টর জমিতে লেবুর চাষ করা হয়েছে। এর মধ্যে রাজৈরেই হয়েছে ১৯ হেক্টর জমিতে।


আরো সংবাদ



premium cement