২২ নভেম্বর ২০২৪, ৭ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ১৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

২৬ বছরেও সচল হয়নি মুন্সীগঞ্জ পৌর শিশুপার্ক

- ছবি : নয়া দিগন্ত

পদ্মা, মেঘনা, ধলেশ্বরী ও ইছামতি নদী বিধৌত প্রাচীন সভ্যতার জনপদ মুন্সীগঞ্জ। এ জেলাকে ঘিরে সরকারি-বেসরকারিভাবে শুরু হয়েছে নানা উন্নয়ন কর্মকাণ্ড। কিন্তু জেলা শহরে শিশুদের খেলাধুলা ও মানসিক বিকাশের জন্য নেই কোন বিনোদনের ব্যবস্থা। শিশুপার্কের জন্য নিজস্ব জমি ও সাইনবোর্ড থাকলেও নেই বিনোদনের ব্যবস্থা।

দুর্নীতি আর অবহেলার কারণে জেলার শিশুদের স্বপ্নের এই পার্কটি দীর্ঘ ২৬ বছরেও সচল করা সম্ভব হয়নি। মেয়র আসে, মেয়র যায়- কিন্তু পৌর নাগরিকদের স্বপ্ন আর বাস্তবে রূপ নেয়নি অদ্যপর্যন্ত। এর ফলে বিনোদন থেকে বঞ্চিত জেলার শিশুরা।

‘শেখ রাসেল পৌর শিশুপার্ক' নামে দেড় একর (১৫০ শতাংশ) জমির ওপর এই পার্কটি নতুন করে সচল করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন বলে জানিয়েছেন মুন্সীগঞ্জ পৌরসভার বর্তমান মেয়র হাজী মোহাম্মদ ফয়সাল বিপ্লব।

১৯৯০ সালে মুন্সীগঞ্জ পৌরসভাটি প্রথম শ্রেণির পৌরসভায় উন্নীত হয়। এরপর ১৯৯২ সালে শহরের প্রাণকেন্দ্রে শিশুদের বিনোদনের জন্য জেলা প্রশাসকের কার্যালয় সংলগ্ন সড়কের পশ্চিমপার্শ্বে মুন্সীগঞ্জ পৌরসভার উদ্যোগে শিশুপার্ক নির্মাণ কাজ শুরু হয়। এর জন্য বরাদ্দ হয় ৮৮ লাখ টাকা। শিশুপার্ক নির্মাণের সময়সীমা ছিলো ৬ মাস।

সে সময় ভায়া মিডিয়া নামে এই প্রকল্পের ঠিকাদার বিভিন্ন অজুহাতে ৩২ লাখ ৭৫ হাজার টাকা উঠিয়ে নেয়। পরবর্তীতে চুক্তি অনুযায়ী কাজ সম্পন্ন না করেই ভায়া মিডিয়া কাজ বন্ধ করে দেয়। এরপরের বছর ১৯৯৩ সালে ৪ জানুয়ারি তৎকালীন এলজিআরডি উপমন্ত্রী আব্দুল হাই পার্কটির উদ্বোধন করেন।

এরপর কয়েক বছরের মধ্যেই রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে শিশুদের খেলার সামগ্রী নষ্ট হয়ে যায়। পার্কটিতে শিশুদের খেলার সামগ্রী যা ছিলো তা এখন আর নেই। এরপর ২০০৬ সালে তৎকালীন পৌর মেয়র অ্যাডভোকেট মুজিবুর রহমান পার্কটি সচল করার জন্য ওয়ান্ডারল্যান্ডের সঙ্গে চুক্তি করেন। নির্মাণ কার্যক্রমেরও উদ্বোধন করা হয়। কিন্তু কোন অগ্রগতি হয়নি।

পার্কটি বাস্তবে রূপ দেয়ার জন্য মুন্সীগঞ্জ পৌরসভা ইতোমধ্যে ২০ কোটি টাকার একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে। ডিজাইনসহ যাবতীয় কাজ সম্পন্ন করা হয়েছে। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরে শিশুপার্ক নির্মাণে জন্য এ টাকা বরাদ্দ চাওয়া হচ্ছে। বরাদ্দ পেলেই মুন্সীগঞ্জ পৌর নাগরিকদের এই স্বপ্ন বাস্তবে রূপ নেবে।

মুন্সীগঞ্জ পৌরসভার বিভিন্ন শ্রেণি পেশার নাগরিকরা জানিয়েছেন, পার্কের জায়গা আছে, কিন্তু পার্কটি হচ্ছে না- এটা দুঃখজনক। অচিরেই তারা একটি শিশুপার্ক দেখতে চান।

মুন্সীগঞ্জ পৌরসভার নারী কাউন্সিলর নার্গিস আক্তার বলেন, 'শিশুদের বিনোদনের জন্য একটি শিশুপার্ক খুবই প্রয়োজন। বিগত সময়ে অনেক উন্নয়ন কার্যক্রম হয়েছে। বর্তমান মেয়র উন্নয়ন কার্যক্রমে এগিয়ে আছেন। কিন্তু ধারাবাহিক অনুসারে তার বাস্তবায়ন সঠিকভাবে হয়নি। আশা রাখি বর্তমান মেয়রের আমলেই শিশুপার্কটি বাস্তবে রূপ নেবে।'

বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক হামিদা খাতুন বলেন, 'মেয়র অনেক বার বলেছেন, হয়ে যাবে। কিন্তু শিশুপার্কটি হচ্ছেনা। এটা আমাদের মুন্সীগঞ্জ জেলার জন্য অত্যন্ত দুঃখজনক ঘটনা। জায়গা নির্ধারণ কথা আছে।' এ বিষয়ে স্থানীয় সংসদ সদস্য, জেলা ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এবং পৌরসভা মেয়রকে এগিয়ে এসে পার্কটি বাস্তবে রূপ দেওয়ার দাবি জানান তিনি।

সদর উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান নাজমুল হাসান সোহেল বলেন, 'বিভিন্ন সময়ে পৌরসভার মেয়রগণ নজর না রাখাতে শিশুপার্কটি নির্মাণ করা যায়নি। শিশুদের খেলাধুলা ও মানসিক বিকাশের জন্য শিশুপার্কটি চালু করতে কর্তৃপক্ষকে এগিয়ে আসা উচিত।'

মুন্সীগঞ্জ পৌরসভা মেয়র হাজী মোহাম্মদ ফয়সাল বিপ্লব বলেন, 'জনগণের প্রত্যাশা পূরণের জন্য বর্তমানে মুন্সীগঞ্জের পৌর শিশুপার্কটির নির্মাণ বাকি রয়েছে। শিশুপার্ক নির্মাণের জন্য ডিজাইনসহ সিভিলের সব কাজ শেষ হয়েছে। বরাদ্দ পেলেই শিশুপার্কটি নির্মাণ করা সম্ভব হবে।'


আরো সংবাদ



premium cement