২৩ নভেম্বর ২০২৪, ৮ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

নাগরপুরে বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতি : ব্যাপক ক্ষয়-ক্ষতি

-

টাঙ্গাইলের নাগরপুরে বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতি ঘটেছে। যমুনা-ধলেশ্বরী নদীর পানি বৃদ্ধির ফলে নদীর পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে চরাঞ্চলের নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হয়ে উপজেলা সদরের বিভিন্ন এলাকায় পানি ঢুকে পড়েছে।

উপজেলা ত্রাণ ও দুর্যোগ অফিসের তথ্যমতে, যমুনা-ধলেশ্বরী নদীর পানি বৃদ্ধিতে সৃষ্ট বন্যায় নাগরপুর উপজেলার ১২টি ইউনিয়নের বেশির ভাগ গ্রাম বন্যায় প্লাবিত হয়েছে। এতে অন্তত ৫০ হাজার লোক পানিবন্দি হয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছে। ইতোমধ্যে বন্যার পানিতে ডুবে উপজেলার কলমাইদ গ্রামের আমিনুরের ছেলে কলমাইদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ১ম শ্রেণীর শিশু শিক্ষার্থী রাকিবুল ইসলামের মৃত্যু হয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, উপজেলার পাইকশা মাঝাইল, নিশ্চিন্তপুর গ্রামের শত শত পরিবার যমুনা নদীর ভাঙ্গনে গৃহহীন হয়ে তাদের ঘর অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। ভাঙ্গনকবলিত এলাকার মানুষ পানি ও খাদ্যের অভাবে মানবেতর জীবনযাপন করছে।

অপরদিকে এ নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে মোকনা ইউনিয়নের কাজীবাড়ি ও কেদারপুরে ব্যাপক ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। ফসলী জমি ও ঘরবাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হচ্ছে।

পাইকশা পশ্চিম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ইমানুল ইসলাম জানান, নদী ভাঙ্গনে হুমকীর মধ্যে রয়েছে বিদ্যালয়টি। ভাঙ্গন অব্যাহত থাকলে অতিশিগগিরই বিদ্যালয়টি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাবে। তাই যত দ্রুত সম্ভব বিদ্যালয়টি রক্ষায় ঊর্র্ধ্বতন কর্মকতার দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।

মোকনা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আতোয়ার রহমান কোকা জানান, নদীর পানি অব্যাহত ভাবে বাড়তে থাকলে মানুষের ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণও বাড়বে। তাছাড়া হুমকীর মধ্যে রয়েছে কাজিবাড়ি মধ্যপাড়া কবরস্থান। আমরা ইতিমধ্যে দুর্গতদের পাশে দাঁড়িয়েছি।

উপজেলা মৎস্য অফিস সূত্রে জানা যায়, বন্যায় উপজেলার বিভিন্ন পুকুর, জলাশয় এবং খামারের মাছ ভেসে এবং পাড় ভেঙে প্রায় কোটি টাকার মৎস্য সম্পদের ক্ষয়-ক্ষতি হয়েছে। বন্যার কারণে উপজেলার ৬৯টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পানি ওঠায় শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি কমে গেছে এবং অনেক বিদ্যালয়ে পাঠদান বন্ধ রয়েছে।

এদিকে, সলিমাবাদ-ধুবড়িয়া সড়কের তেবাড়িয়া কালীবাড়ি সামনের বেইলী ব্রিজ বন্যার পানির স্্েরাতে ভেঙ্গে সড়ক যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেছে। এছাড়া নাগরপুর-চৌহালী, নাগরপুর-ধল্লা, নাগরপুর-ভাটরা সড়কসহ নাগরপুর উপজেলার সাথে বিভিন্ন ইউনিয়নের সংযোগ সড়কে বন্যার পানি উঠে সরাসরি যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেছে।

ঝুঁকিতে রয়েছে টাঙ্গাইল-আরিচা আঞ্চলিক মহাসড়ক ও নাগরপুর-মির্জাপুর ভায়া মোকনা সড়ক। এসকল সড়কে বন্যার পানি উঠে যে কোন সময় বন্ধ হয়ে যেতে পারে ঢাকার সাথে সরাসরি যোগাযোগ ব্যবস্থা। বন্যার পানিতে অনেকের বীজতলা, ভুট্টা, সবজি ও পাটের আবাদ তলিয়ে গিয়ে ব্যাপক ক্ষতি সাধিত হয়েছে।

এদিকে, বন্যাদুর্গত চরাঞ্চল এলাকায় বিশুদ্ধ খাবার পানি, পশু খাদ্যের সংকট দেখা দিয়েছে। বন্যার পানি উঠায় অনেকেই ঘর বাড়ি ছেড়ে উঁচু স্থানে আশ্রয় নিয়েছে।

বন্যার সার্বিক পরিস্থিতি সম্পর্কে জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দ ফয়েজুল ইসলাম বলেন, প্লাবিত এলাকায় আমি সরেজমিনে গিয়ে বন্যার্ত মানুষের সাথে কথা বলেছি। তাদের বিভিন্ন আশ্রয় কেন্দ্রে উঠার পরামর্শ দিয়েছি। এছাড়া তাদের মাঝে শুকনো খাবার, চাল, ডাল বিতরণ করেছি। তিনি ধৈর্য্য সহকারে পরিস্থিতি মোকাবেলার আহবান জানিয়েছেন।


আরো সংবাদ



premium cement