৩০ বছর ধরে শিকল-বন্দি রামকৃষ্ণ শাহা
- আব্দুস সালাম, মুন্সীগঞ্জ
- ১৭ এপ্রিল ২০১৯, ১৪:০০, আপডেট: ১৭ এপ্রিল ২০১৯, ১৮:২৪
মুন্সীগঞ্জের মিরকাদিম পৌর এলাকার রামগোপালপুর দুধপট্টি এলাকায় রামকৃষ্ণ শাহা ওরফে রমা (৫৫) নামের এক ব্যক্তিকে ৩০ বছর ধরে ছোট্ট ঘরে শিকলবন্দী হয়ে জীবন যাপন করতে হচ্ছে। অভিযোগ উঠছে সম্পত্তি আত্মসাৎ করার অপরাধে রামার সাথে এমন অমানবিক আচরণ পরিবারের। শিকল বন্দি রামকৃষ্ণ শাহা মুক্ত হতে চায়। প্রশাসনের হস্তক্ষেপ জরুরি বলে মনে করছেন স্থানীয়রা।
স্থানীয় সূত্র জানায়, মিরকাদিমের দুধপট্টি এলাকার স্বর্গীয় গৌরাঙ্গ শাহার পুত্র রামকৃষ্ণ শাহা ওরফে রমাকে (৫৫) তার আপন ছোট ভাই গনাই শাহা ৩০ বছর আগে ঘরের মধ্যে শিকল বন্দি করে রাখে। পাঁচ বছর আগে গনাই শাহা মারা যায়। তবুও শিকল মুক্ত হতে পারেনি রমা শাহা। স্বামীর মৃত্যুর পর গনাই শাহয়ের স্ত্রী মনি রানী শাহা ও তার সন্তানরা এখন রমাকে একটা ছোট্ট অন্ধার কুঁকড়ি ঘরে শিকল বন্দী করে রেখেছেন। খাবার মিলে দিনে দু'বার, স্থানীয়রাও মাঝে মাঝে তাকে খাবার কিনে দেয়। এভাবে ৩০ বছর পার করেছেন রমা শাহা তার বন্দিদশা জীবন।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ছোট্ট টিনের ঘরে ৮/৮ ফিট রুমে ছোট্ট একটি কাঠের চকি। রুমটির এক কোণায় বড় একটি গর্ত সেখানে রমা প্রকৃতিক ডাকের সাড়া দেন। টয়লেটের কাজ রমাকে খোলা জানালা দিয়ে সারতে হয়। মাঝে মধ্যে ভাতিজারা শিকল খুলে দেয় টয়লেটে যাওয়ার জন্য। টয়লেট সেরে আসার পর আবারো শিকল বন্দি হয় রমাশাহা। ঘরটিতে নেই কোনো বিদ্যুৎ, চারদিকে দুর্গন্ধ, ড্রামের মধ্যে ময়লা আর আবর্জনা যুক্ত পানি রাখা। পানি পিপাসা লাগলে রমা সেই ড্রামের পানিই পান করেন। পরিবারের লোকজন তাকে পাগল দাবি করে শিকল বন্দি করে রাখলেও কোনো দিন তাকে চিকিৎসা করানোর ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।
বন্দি রুমে কথা হয় রামকৃষ্ণ শাহার সাথে। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আমি বরিশাল থেকে চাল, ডাল এনে মিরকাদিম বন্দরে বিক্রি করতাম। ব্যবসাও ভালো চলছিল। নিয়মিত তিনি জাতীয় পার্টির রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলাম। তিনি আরো বলেন, আমার বাবা মা মারা যাওয়ার আগে এই বিশাল সম্পত্তি আমাকে দিয়ে যান। আমি যৌবনকাল থেকে শিকল বন্দি, বিয়ে করিনি, সংসার নেই আমার। আমার সম্পদ নিবে নিয়ে যাক এভাবে আমাকে আটকে রেখেছে কেন? আমাকে ছেড়ে দিক, আমি কাজ করে নিজের পেট চালাবো তবুও স্বাধীনভাবে বাঁচতে চাই।
স্থানীয় মানবাধিকার কর্মী জাহাঙ্গীর আলম জানান, তাকে ৩০ বছর ধরে শিকলে বন্দি রাখা হয়েছে। লোকটা শিক্ষিত, তার সম্পত্তি আত্মসাৎ করার জন্য তাকে পাগল বানিয়ে রেখেছে ছোট ভাইয়ের স্ত্রী ও তার সন্তানরা। অতিদ্রুত তাকে যুক্ত করে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে দেয়া উচিত ।
রামকৃষ্ণ শাহা ওরফে রমা শাহাকে শিকল বন্দী রাখার বিষয়টি স্বীকার করে গনাই শাহার স্ত্রী মনিরানী শাহা বলেন, ৩০ বছর ধরে তাকে শিকলে বন্দি রেখেছি। ওনি আমার ভাসুর হন। ৩০ বছর আগে বরিশালে ব্যবসা করতে গিয়েছিলেন তখন তাকে কারা যেন ব্যাপক মারধর করে। সেই থেকে তিনি মানসিকভাবে পাগল হয়ে যান। তারপর থেকে তাকে এভাবে শিকলে আটকে রাখা হয়েছে।
তাকে কোনো চিকিৎসা করানো হয়েছিলো কিনা? এমন প্রশ্নের জবাবে গনাই শাহার স্ত্রী মনিরানী শাহা বলেন, তাকে আজ পর্যন্ত কোনো চিকিৎসা দেয়া হয়নি। এখন তিনি সুস্থ আছেন বলে মনে হয়। তবে তাকে ছেড়ে দিলে এলাকার লোকদের মারধর করেন। তাই বাধ্য হয়ে তাকে শিকল বন্দি করে রেখেছি।
স্থানীয় পৌর কাউন্সিলর আমির হোসেন চৌধুরী বলেন, এটা একটা অমানবিক ঘটনা। একজন সুস্থ মানুষকেও যদি এভাবে শিকল বন্দি রাখা হয় তাহলে সে পাগল হয়ে যাবে। তাকে দ্রুত চিকিৎসাসেবা দিয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে দেয়া জরুরি।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো: ফারুক আহাম্মেদ বলেন, মানবিক দৃষ্টিতে বিষয়টি অমানবিক। বিষয়টি সম্পর্কে অবগত হয়েছি। আমরা তদন্ত করে দেখব। তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা