২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ৯ পৌষ ১৪৩১, ২১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

ধর্ম নিয়ে যা বললেন রাশেদ খান মেনন

রাশেদ খান মেনন - ছবি : সংগ্রহ

বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন বলেছেন, দেশে একটি বিশেষ মহল ধর্ম নিয়ে বড় বড় কথা বললেও তারা ধর্মের অনুসরণ করে না। এমনকি নারীদের সম্মান করে না। ফলে সমাজের মধ্যে সৃষ্টি হয় বিভাজন। এর বিপরীতে আমাদের সবাইকে সম্মিলিতভাবে দেশকে এগিয়ে নিতে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।
মালিবাগ মোড়ের বাইতুল আমান মসজিদে জুম্মার নামাজের আগে বক্তব্য দিতে গিয়ে মেনন এ কথা বলেন। 

মেনন আরো বলেন, আমাদের প্রিয় নবী হজরত মোহাম্মদ সা: তাঁর বিদায় হজের ভাষণে ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি করতে নিষেধ করেছেন। তিনি সেই ভাষণে নারীর প্রতি বৈষম্য না করতে, তাদের সম্মান এবং সুরক্ষার জন্য নির্দেশ দিয়ে গেছেন। মেনন বলেন, ধর্ম শান্তির জন্য। সেই শান্তির ধর্মকে বাংলাদেশ অনুসরণ করে উগ্রতাকে নয়। রাশেদ খান মেনন দু’বছর আগে এই মসজিদের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন।

ইতোমধ্যে মসজিদটি দ্বিতল হয়ে গেছে। তিন তলায় উন্নীত করা হবে। তিনি একই সাথে এই মসজিদসহ সব মসজিদে যথাযথ উন্নয়নের জন্য সরকার যে তহবিল বরাদ্দ করেছে তাকে সঠিকভাবে ব্যবহার করার আহ্বান জানান। মসজিদের খতিব তার এই ভূমিকার জন্য শুকরিয়া আদায় করেন। একই সময় আরো বক্তৃতা করেন- বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যুব ক্রীড়া সম্পাদক ও সাবেক কমিশনার শেখ সেকান্দর আলী।

মেননের সংসদ সদস্য পদ বাতিল না করলে কঠোর আন্দোলন

রাজধানীতে বিক্ষোভ করেছে হেফাজতে ইসলাম। জাতীয় সংসদে ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেননের কওমি মাদরাসা ও আল্লামা শফীর বিরুদ্ধে কটূক্তি এবং কাদিয়ানিদের পক্ষে বক্তব্য দেয়ার প্রতিবাদে গতকাল শুক্রবার জুমার নামাজের পর জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের উত্তর গেট থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের হয়। মিছিলটি পল্টন মোড় ঘুরে দৈনিক বাংলা মোড়ে গিয়ে শেষ হয়।

মিছিলে বিপুলসংখ্যক মুসল্লি অংশ নেন। তারা ‘রাশেদ খান মেননের ফাঁসি চাই, দিতে হবে; বিচার কর, করতে হবে’ ইত্যাদি স্লোগান দেন। এর আগে বায়তুল মোকাররম চত্বরে অনুষ্ঠিত সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় হেফাজতে ইসলামের মহাসচিব আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী বলেন, কাদিয়ানিরা কাফের। যারা তাদের সমর্থন করে তারাও কাফের। রাশেদ খান মেননের সংসদ সদস্য পদ অবিলম্বে বাতিল করার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, অন্যথায় আমরা কঠোর কর্মসূচি দিতে বাধ্য হবো। এ সময় তিনি রাশেদ খান মেনন, হাসানুল হক ইনু, শাহরিয়ার কবিরসহ যারাই কাদিয়ানিদের সমর্থন করবে তাদের নামাজে জানাজা না পড়ানো এবং মুসলমানদের কবরস্থানে দাফন না করার জন্য আলেমদের প্রতি আহ্বান জানান। 

হেফাজতের ঢাকা মহানগরী সভাপতি আল্লামা নূর হোসাইন কাসেমীর সভাপতিত্বে সমাবেশে অন্যান্যের মধ্যে বক্তৃতা করেনÑ বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের আমির শাহ আতাউল্লাহ, মধুপুরের পীর আব্দুল হামিদ, ইসলামী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান মাওলানা আব্দুল লতিফ নেজামী, জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের সহসভাপতি জুনায়েদ আল হাবীব ও আব্দুর রব ইউসুফী, তাহাফফুজে খতমে নবুওয়াত আন্দোলনের মহাসচিব মাওলানা নুরুল ইসলাম জিহাদী, যুগ্মমহাসচিব মাওলানা মহিউদ্দিন রব্বানী, হেফাজতের ঢাকা মহানগর সাধারণ সম্পাদক মুফতি আবুল হাসানাত আমিনী, খেলাফত মজলিসের মহাসচিব অধ্যাপক আহমদ আব্দুল কাদের, খেলাফত আন্দোলনের নায়েবে আমির মাওলানা মুজিবুর রহমান হামিদী, জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের যুগ্মসম্পাদক মাওলানা মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দী, আহমদ আলী কাসেমী, এনামুল হক মুসা, মাওলানা শোয়াইব আহমদ প্রমুখ। সমাবেশ পরিচালনা করেন হেফাজত ঢাকা মহানগরী নেতা মুফতি ফজলুল করিম কাসেমী। 

জুনায়েদ বাবুনগরী বলেন, হেফাজত নিয়ে খেলা খেলবেন না, যদি হেফাজতে ইসলামকে নিয়ে খেলা করেন, তবে আমরাও কঠিন খেলা খেলব। তিনি আরো বলেন, যারা কওমি মাদরাসার বিরুদ্ধে ও কওমি মাদরাসাকে বিষবৃক্ষ বলে, তাদের এদেশের জনগণ সমুচিত শিক্ষা দেবে। রাশেদ খান মেননের মতো আরো যত নাস্তিক আহমদিয়াদের পক্ষ অবলম্বন করেছে, শাহরিয়ার কবিরসহ, কাউকে ছাড়া হবে না। বাংলাদেশে সংখ্যালঘু হিসেবে হিন্দুরা থাকতে পারবে, বৌদ্ধরা থাকতে পারবে; কিন্তু নাস্তিক মুরতাদদের থাকতে দেবো না। 

হেফাজত মহাসচিব আরো বলেন, যদি রাশেদ খান মেননের সংসদ সদস্য পদ বাতিল না করা হয়, তবে আলেমরা কঠিন কর্মসূচি দিতে বাধ্য হবে। অবিলম্বে আহমদিয়া সম্প্রদায়কে অমুসলিম ঘোষণা করতে হবে। তারা এ দেশে থাকুক সংখ্যালঘু হিসেবে, কাফের হিসেবে, আমাদের কোনো আপত্তি নেই। কিন্তু আহমদিয়ারা কাফের হয়ে মুসলমানের পরিচয় দিচ্ছে, ইসলামিক পরিভাষা ব্যবহার করছে। তারা ইসলামিক পরিভাষা ব্যবহার করতে পারে না। তাদের মসজিদকে, মসজিদ বলা যাবে না।

নূর হোসাইন কাসেমী বলেন, যারা কাদিয়ানিদের পক্ষ নেবে তারাও কাফের। এ জন্য সংসদে দেয়া মেননের বক্তব্য এক্সপাঞ্জ করতে হবে। তাকে আইনের আওতায় এনে বিচার করতে হবে। না হলে পরবর্তীতে আরো কঠোর কর্মসূচি দেয়া হবে বলে তিনি হুঁশিয়ার করেন। 
শাহ আতাউল্লাহ বলেন, রাশেদ খান মেনন জাতীয় সংসদকে অপবিত্র করেছেন। তাকে সংসদ থেকে বের করে দিতে তিনি প্রধানমন্ত্রীর প্রতি আহ্বান জানান। এ ছাড়া, কাদিয়ানিদের সরকারিভাবে অবিলম্বে অমুসলিম ঘোষণার আহ্বান জানান তিনি। 
আব্দুল লতিফ নেজামী বলেন, রাশেদ খান মেনন মন্ত্রী হতে না পারায় আবোল তাবোল বকছেন। এ জন্য তাকে তসলিমা নাসরিনের মতো ভাগ্য বরণ করতে হতে পারে। 

জুনায়েদ আল হাবীব বলেন, মেননকে আগামী ২৪ ঘণ্টর মধ্যে গ্রেফতার করতে হবে, অন্যথায় তৌহিদি জনতা তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে।


আরো সংবাদ



premium cement