২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ন ১৪৩১, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

আর্সেনিক আতঙ্কে রাজবাড়ীর ২৮ গ্রামের মানুষ

- ফাইল ছবি

আর্সেনিক আতঙ্কে দিন কাটছে রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দি উপজেলার ২৮ গ্রামের মানুষের। উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের অন্তত ২৮টি গ্রামের টিউবওয়েলের পানিতে আর্সেনিক শনাক্ত হওয়ার কথা জানিয়েছে উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর।

বালিয়াকান্দি উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের তথ্যমতে, উপজেলার ৭ ইউনিয়নে অধিদপ্তরের দেয়া টিউবওয়েলের সংখ্যা ৩ হাজারের বেশি। এছাড়া ব্যক্তিগত উদ্যোগে স্থাপিত টিউবওয়েল রয়েছে প্রায় ২৫ হাজার।

সম্প্রতি উপজেলার বহরপুর ইউনিয়নের বাবুলতলা গ্রামের ওসমান মোল্লার পরিবারের সবার হাতে-পায়ে ও শরীরের বিভিন্ন অংশে ঘা দেখা দিয়েছে। সারা শরীরে ব্যথা আর প্রচণ্ড চুলকানিও অনুভব করছেন তারা। একই গ্রামের রোকেয়া বেগম জানিয়েছেন, টিউবওয়েলের পানিতে আর্সেনিক শনাক্ত হওয়ার পর থেকে তিনি পাশের বাড়ি থেকে খাবার পানি আনেন; যদিও থালা-বাসন ধোয়ার কাজে বাড়ির টিউবওয়েলের পানি ব্যবহার করেন তিনি। এতেও তার হাতের আঙুলের ফাঁকে ক্ষত সৃষ্টি হয়েছে।

বালিয়াকান্দি উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. এএসএম আব্দুল্লাহ আল মুরাদ জানান, ২০১৪ সাল থেকে এ পর্যন্ত মোট ১৫ জন আর্সেনিক আক্রান্ত রোগী চিকিৎসা নিয়েছেন। এর মধ্যে ২০১৮ সালের নভেম্বর মাসে ৪ জন রোগী শনাক্ত করে চিকিৎসা প্রদান করা হয়েছে। তিনি বলেন, এখন মানুষ সচেতন যার কারণে দিন দিন আর্সেনিকে আক্রান্তের সংখ্যা কমতে শুরু করেছে। আমার দপ্তর থেকে আর্সেনিক আক্রান্ত রোগী সার্চিং প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে।

যারা টিউবওয়েলের পানি পরীক্ষা করেননি তাদেরকে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল দপ্তর থেকে টিউবওয়েলের পানি পরীক্ষার অনুরোধ করেন তিনি। তাছাড়া আর্সেনিকে আক্রান্ত রোগীকে হাসপাতালে এসে চিকিৎসা গ্রহণের পরামর্শ দেন ডা. এএসএম আব্দুল্লাহ আল মুরাদ।

উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী অধিদপ্তরের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মোঃ মাসুদ রেজা জানান, সর্বশেষ ২০০৩ সালে সাতটি ইউনিয়নে খুব সীমিত আকারে আর্সেনিক জরিপ করা হয়। ওই বছরই প্রকল্পটি বন্ধ হয়ে যায়। এরপর থেকে উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলীর কার্যালয়ে কেউ পানি নিয়ে এলে আর্সেনিক পরীক্ষা হয়।

তিনি জানান, জরিপে দেখা গেছে- ইসলামপুর ইউনিয়নের ঠাকুর নওপাড়া, শামুকখোলা, শেকাড়া, নওপাড়া, তেনাই শিবপুর, বহরপুর ইউনিয়নের বাবুলতলা, রায়পুর, ইলিশকোল, কুবদি, চরগুয়াদাহ, মধুপুর, নবাবপুর ইউনিয়নের কুড়িপাড়া পদমদী, সোনাপুর, কুরশী, সদাশিপুর, দিলালপুর, বড় হিজলী, মেসুয়াঘাটা, পদমদী, সোনাইকুড়ি, হোগলাডাঙ্গী, বালিয়াকান্দি ইউনিয়নের পাইককান্দি, শালমারা, নারুয়া ইউনিয়নের নারুয়া, এলাঙ্গীডাঙ্গী, জঙ্গল ইউনিয়নের শশাপুর, নতুন ঘুরঘুরিয়া, বন্যাতৈলসহ ২৮টি গ্রামের কিছু টিউবওয়েলের পানিতে আর্সেনিক রয়েছে। সর্বাধিক মাত্রায় আর্সেনিক পাওয়া ১০টি টিউবওয়েল বন্ধ করা হয়েছে বলে জানান প্রকৌশলী মো. মাসুদ রেজা।

তবে বালিয়াকান্দি উপজেলার আরো শতাধিক গ্রামের টিউবওয়েলগুলোর ব্যাপারে জনস্বাস্থ্য দফতরের কাছে কাছে কোনো তথ্য নেই। তাছাড়া জরিপ করা ২৮টি গ্রামের সবগুলো টিউবওয়েলের একটি ছোট নমুনা মাত্র পরীক্ষা করা হয়েছে। ফলে এখনো বিপুলসংখ্যক মানুষ আর্সেনিক ঝুঁকির মধ্যে আছেন বলেও মনে করেন প্রকৌশলী মো. মাসুদ রেজা।
তিনি বলেন, ২০০৩ সালের পরে আর কোনো ঢালাও জরিপ করা হয়নি। তবে সম্প্রতি এখানে আর্সেনিক এর প্রমাণ পাওয়ার পর আক্রান্ত ওই ২৮টি গ্রামের টিউবয়েল পরীক্ষা করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. মাসুম রেজা জানান, উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল দফতর থেকে তালিকা নেওয়া হয়েছে। তালিকা অনুযায়ী গ্রামগুলোতে আর্সেনিকযুক্ত টিউবওয়েলগুলো বন্ধসহ বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে।

রাজবাড়ীর জেলা প্রশাসক মো. শওকত আলী বলেন, বালিয়াকান্দিতে কয়েকজন আর্সেনিকে আক্রান্ত হয়েছেন বলে আমি জানতে পেরেছি। বিষয়টি নিয়ে আমি উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলীর সাথে কথা বলেছি। তাদের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নির্দেশ দিয়েছি।

রাজবাড়ীর সিভিল সার্জন মো. রহিম বক্স বলেন, বালিয়াকান্দিতে কয়েকজন আর্সেনিক আক্রান্ত হয়েছেন। এ বিষয়ে আমি জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলীর সাথে কথা বলেছি। আসলে নিরাপদ পানির ব্যবস্থা করণের দায়িত্ব তো তাদের। বালিয়াকান্দি স্বাস্থ্য কর্মকর্তার সাথেও আর্সেনিক আক্রান্তদের বিষয়টিও জানিয়েছি। তারা মাঠপর্যায়ে ব্যবস্থা নিবেন। আর যারা আক্রান্ত হয়েছেন তাদেরকে আর্সেনিকমুক্ত পানি ব্যবহার করাসহ প্রচুর পরিমাণে শাকসবজি খাওয়ার পরামর্শ দেন তিনি। প্রয়োজনে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়ার কথাও বলেন এই কর্মকর্তা।


আরো সংবাদ



premium cement