পাপিয়ার অধীনে কাজ করত ১৭ শ’ সুন্দরী নারী
- নিজস্ব প্রতিবেদক
- ০১ মার্চ ২০২০, ০৮:১৫, আপডেট: ০১ মার্চ ২০২০, ০৯:৫০
যুব মহিলা লীগের বহিষ্কৃত নেত্রী শামীমা নূর পাপিয়ার ওমেনাইজিং বিজনেসের সাথে জড়িত ছিল এক হাজার ৭০০ সুন্দরী নারী। এসব নারীকে বিভিন্ন কৌশলে কাজে লাগিয়ে তিনি পৌঁছে গিয়েছিলেন ক্ষমতার শীর্ষস্থানীয়দের কাছে। দেশের ৬৪ জেলায়ই ছিল তার নেটওয়ার্ক। রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদে পাপিয়া এমন চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন তদন্ত সংশ্লিষ্টরা। পাপিয়া গ্রেফতারের পর থেকেই প্রকাশ্যে আসতে চলেছে একের পর এক চাঞ্চল্যকর তথ্য। ফলে পাপিয়াকাণ্ডে ফাঁসতে যাচ্ছেন অনেকেই। এ কারণে আতঙ্কে ভুগছেন পাপিয়ার ঘনিষ্ঠজনরা। কারণ তাদের খুঁজছেন গোয়েন্দারা। তারা কোথায় যাতায়াত করেন, কাদের সাথে সময় কাটান এসব বিষয়ের ওপর নজর রাখছে গোয়েন্দারা। পরবর্তী সময়ে তাদের প্রত্যেকের আমলনামা পাঠানো হবে শীর্ষ মহলে। পাপিয়া ভেবেছিলেন ওপরে ওঠার সহজ সিঁড়িই হবে দেহব্যবসা। আর সেই পথচলাকে নিরাপদ করতে প্রথমে ক্ষমতাধরদের মধ্যম সারির একটি গ্রুপের ওপর ভর করে পথ চলা শুরু করেন পাপিয়া। তাদের হাত ধরেই পৌঁছে যান ক্ষমতার শীর্ষপর্র্যায়ে।
তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, রিমান্ডে স্পর্শকাতর ও চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছেন পাপিয়া। বাংলাদেশ স্কট সার্ভিস লিমিটেড নামে একটি অনলাইন গ্রুপের যাত্রা শুরু হয় পাপিয়ার হাত ধরে। ওই স্কট সার্ভিস থেকেই অভিজাতদের কাছে নারী সরবরাহ করা হতো। জানা গেছে, ঢাকার গুলশানের ওয়েস্টিন হোটেলের লেভেল-২২ এ এক হাজার ৪১১ বর্গফুট জায়গাজুড়ে বিলাসবহুল প্রেসিডেনসিয়াল স্যুট। সেখানে অতিথিদের নিয়ে সুন্দরী তরুণীদের সাথে বৈঠক করতেন পাপিয়া। এরপর পছন্দসই তরুণীকে নিয়ে গোপন কক্ষে প্রবেশ করতেন ভিআইপিরা। ওয়েস্টিনের ২২ তলায় চার বেডরুমের ওই স্যুটের প্রতিরাতের ভাড়া সাধারণভাবে দুই হাজার ডলারের মতো। পাপিয়ার রাজ্যে বিচরণ ছিল প্রশাসন থেকে শুরু করে বিভিন্ন সংস্থার অনেক শীর্ষ ব্যক্তিরই। ওয়েস্টিন হোটেলের কর্মকর্তারাও জানতেন তার অপকর্ম সম্পর্কে। ধনাঢ্য ব্যবসায়ীরাও পাপিয়ার ডাকে সাড়া দিয়ে যেতেন হোটেল ওয়েস্টিনে। এ ছাড়াও গুলশানের তিনটি অ্যাপার্টমেন্ট, ধানমন্ডি, মোহাম্মদপুর ও শ্যামলী এলাকায় আরো তিনটি অ্যাপার্টমেন্ট ভাড়া নিয়েই নারী ব্যবসা চালান পাপিয়া। যারা ওয়েস্টিনে যেতে সমর্থ রাখে না তাদের যাতায়াত ছিল ওই সব অ্যাপার্টমেন্টে। দেশের কোনো পর্যটন এলাকায় ঘুরতে গিয়ে মনোরঞ্জনের জন্য নারী সংগ্রহ করতে চাইলে বাংলাদেশ স্কট সার্ভিসের নম্বরে ফোন দিলেই সেখানে তরুণীদের পাঠিয়ে দেয়া হতো। এ ছাড়াও মন্ত্রী এমপি আমলাসহ সরকারি কর্মকর্তাদের কাছ থেকে কাজ বাগিয়ে নিতেও ব্যবহার করা হতো সুন্দরী তরুণীদের। পাপিয়ার এই অনলাইন সার্ভিস দেখার পর বেশ কয়েকটি দেহ ব্যবসার অনলাইন সার্ভিস শুরু হয়। যার সবই জানতেন যুব মহিলা লীগের দুই শীর্ষ নেত্রী, এক নারী এমপি ও শীর্ষ কয়েকজন নেতা। তাদের মাধ্যমেই মন্ত্রী এমপিদের বাগে এনেছেন পাপিয়া। সামাল দিয়েছেন ব্যবসার আইনি ঝামেলা।
জানা গেছে, প্রভাবশালী ব্যক্তিদের মনোরঞ্জনের জন্য পাপিয়ার কাছে সুন্দরী নারী চাইতেন ক্যাসিনো অভিযানের সময় গ্রেফতার হওয়া বেশ কয়েকজন নেতা। তাদের চাহিদা অনুযায়ী সুন্দরীদের পাঠিয়ে দেয়া হতো সরকারি-বেসরকারি প্রভাবশালী ব্যক্তিদের কাছে। আর ওই সুন্দরীদের মাধ্যমে টেন্ডারবাজরা হাসিল করে নিতেন বড় বড় টেন্ডার। পাপিয়া ওই সুন্দরীদের টোপ হিসেবে ব্যবহার করতেন। তাদের ব্যবহৃত ভ্যানিটি ব্যাগ কিংবা অন্যান্য সামগ্রীতে পাপিয়া কৌশলে লাগিয়ে দিতেন অত্যাধুনিক ডিভাইস। সে সব ডিভাইসে ধারণকৃত মনোরঞ্জনের দৃশ্যগুলো পরবর্তী সময়ে কাজে লাগাতেন পাপিয়া। এ ছাড়া হাই সোসাইটির খদ্দেরদের চাহিদা অনুযায়ী পাপিয়া তার সংগ্রহে রাখতেন রুশ ও থাই সুন্দরীদেরও। চাহিদা ও রেট মিলে গেলে পাপিয়া তাদের নিয়ে আসতেন বাংলাদেশে।
এদিকে পাপিয়া ও তার সহযোগীদের দফায় দফায় জিজ্ঞাসাবাদে অপরাধ জগতের বেশ কিছু চমকপ্রদ তথ্যে বেরিয়ে আসছে মদদদাতাদের নাম। এদের মধ্যে যুব মহিলা লীগের তিন নারী নেত্রীর বিষয়ে এরই মধ্যে নিশ্চিত হয়েছেন তদন্ত কর্মকর্তারা। যারা তাকে রাজনীতিতে প্রবেশ ও বড় পদ পাইয়ে দিতে সহযোগিতা করেছেন। যাদের মাধ্যমে অনেক প্রভাবশালী রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের সাথে সখ্য গড়ে উঠেছিল পাপিয়ার।
গত ২২ ফেব্রুয়ারি রোববার গোপনে দেশত্যাগের সময় নরসিংদী জেলা যুব মহিলা লীগের সেক্রেটারি শামিমা নূর পাপিয়াকে বিমানবন্দর এলাকা থেকে তিন সহযোগীসহ গ্রেফতার করে র্যাব। গ্রেফতার অন্য তিনজন হলেন পাপিয়ার স্বামী ও তার অবৈধ আয়ের হিসাবরক্ষক মফিজুর রহমান ওরফে সুমন চৌধুরী ওরফে মতি সুমন, পাপিয়ার ব্যক্তিগত সহকারী শেখ তায়্যিবা ও সাব্বির খন্দকার। এই নেত্রীর প্রকাশ্য আয়ের উৎস গাড়ি বিক্রি ও সার্ভিসিংয়ের ব্যবসা। তবে এর আড়ালে জাল মুদ্রা সরবরাহ, বিদেশে অর্থপাচার এবং অবৈধ অস্ত্র রাখাসহ নানা অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। পাপিয়া গ্রেফতার হওয়ার পরই বেরিয়ে আসতে শুরু করে তার অন্ধকার জগতের চাঞ্চল্যকর কাহিনী।
এরপর গত ২৩ ফেব্রুয়ারি হোটেল ওয়েস্টিনের প্রেসিডেন্সিয়াল স্যুট এবং ফার্মগেটের ২৮ নম্বর ইন্দিরা রোডের রওশনস ডমিনো রিলিভো নামের বিলাসবহুল ভবনে তাদের দু’টি ফ্ল্যাটে অভিযান চালিয়ে বিপুল পরিমাণ টাকা, আগ্নেয়াস্ত্র, বিদেশী মদসহ অনেক অবৈধ সরঞ্জামাদি উদ্ধার করা হয়। পর দিন ২৪ ফেব্রুয়ারি জাল টাকা উদ্ধার, অস্ত্র ও মাদকের পৃথক তিন মামলায় পাপিয়ার ১৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। তার স্বামী মফিজুর রহমানেরও ১৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করা করা হয়। এ ছাড়া মামলার অপর দুই আসামি পাপিয়ার সহযোগী সাব্বির খন্দকার ও শেখ তায়্যিবাকেও রিমান্ডে নেয়া হয়। মামলাটি তদন্ত করছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা