নুসরাত হত্যার বিচার দাবিতে দেশব্যাপী রোডমার্চের ঘোষণা
- বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক
- ১৯ এপ্রিল ২০১৯, ২০:৩৭, আপডেট: ১৯ এপ্রিল ২০১৯, ২০:৪৫
ফেনীর সোনাগাজীর মাদরাসা ছাত্রী নুসরাত জাহান রাফি হত্যাকা-ে জড়িত ওসি মোয়াজ্জেম হোসেনসহ সকল অপরাধীকে গ্রেফতার করে বিচারের দাবি জানিয়েছে বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষ।
পাশাপাশি এ ঘটনায় পুলিশের ভূমিকার বিচার বিভাগীয় তদন্তসহ হত্যাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানানো হয়। নুসরাত হত্যাকাণ্ডের বিচারের দাবিতে খুব শীঘ্রই দেশব্যাপী রোডমার্চ কর্মসূচী পালনের ঘোষণা দেন তারা। শুক্রবার বিকেলে রাজধানীর শাহবাগের জাতীয় জাদুঘরের সামনে আয়োজিত এক নাগরিক অবস্থান থেকে এসব দাবি জানানো হয়।
‘যৌন নিপীড়ন বিরোধী শিক্ষার্থীজোট’ ও ‘সমাজের জাগ্রত নাগরিক গোষ্ঠী’ ব্যানারে কর্মসূচীর আয়োজন করা হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন যৌন নিপীড়ন বিরোধী শিক্ষার্থীজোটের আহ্বায়ক শিবলী হাসান। উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক মেসবাহ কামাল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সোনিয়া নিশাত আমিন, প্রগতিশীল আন্দোলনকর্মী আকরামুল হক, নারী ব্যবসায়ী আইরিন রাব্বানী, সাংস্কৃতিক আন্দোলন কর্মী সানজিদা কাজী প্রমুখ।
‘সচেতন নাগরিক গোষ্ঠী’, ‘নিজেরা করি’, ‘বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীসহ বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষ অনুষ্ঠানে সংহতি প্রকাশ করেন। অধ্যাপক মেসবাহ কামাল বলেন, ফেনীর ঘটনায় আমরা দেখতে পাই, আমার মনে হচ্ছে জাহাঙ্গীরনগরের যেমন আওয়ামী লীগের নেতারা শত ধর্ষণ উপভোগ করছে ঠিক তেমনি স্থানীয় নেতারাও এই সকল কাজে প্রশ্রয় দেয়া শুরু করেছে। মুক্তিযুদ্ধের শক্তির কাছ থেকে আমরা এই ভূমিকা প্রত্যাশা করি না। এই অবস্থা যদি চলতে থাকে তাহলে মুক্তিযুদ্ধের স্লোগান দিয়ে জনরোষকে দাবিয়ে রাখতে পারবেন না।
জনগণ তার নিজের পথ খুঁজে নেবে। ঢাবির এই অধ্যঅফক আরো বলেন, ধর্মের নামে নারীকে নিগৃহীত করা তো পুরনো ব্যাপার। আজকে তার সাথে যখন রাজনৈতিক ক্ষমতার যোগ হয় তখন তা অদম্য হয়ে উঠছে। আর আমাদের আইন পুরোপুরি ধর্ষকদের পক্ষে কাজ করছি। আইন প্রণয়নের দায়িত্বে এবং আইন বাস্তবায়নের দায়িত্বে যারা আছে তাদের অবস্থা দেখে মনে হয় তাদের বাড়িতে কোন নারী নাই তাদের কোন মা-বোন নাই।
তারা কোন মায়ের গর্ভে জন্ম গ্রহণ করেনি, তাদের কোনো স্ত্রী নাই। তারা ভুলে যান তার মা বোন স্ত্রী ও একই রকম পরিস্থিতির শিকার হতে পারে। অধ্যাপক সোনিয়া আমিন বলেন, প্রশাসনের ভেতরে থাকা ধর্ষক খুনিদের আশ্রয়দাতাদের খুঁজে আইনের আওতায় আনতে হবে।
বিচারহীনতার রাষ্ট্র থেকে উত্তরণের জন্য আইনের শাসন সুনিশ্চিত করতে হবে। এটাই সরকারের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। আকরামুল হক বলেন, এক দুজন সদস্যের কারণে পুরো পুলিশ প্রশাসনের বদনাম কখনো কাম্য নয়। তড়িৎ গতিতে নুসরাত হত্যাকান্ডে জড়িত ব্যক্তিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির মাধ্যমে আইনের শাসন নিশ্চিত করা হোক। শিবলী হাসান বলেন, ফেনী জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) জাহাঙ্গীর আলম ওসি মোয়াজ্জেমকে রক্ষায় পুলিশ সদর দফতরে এক চিঠি দিয়েছেন।
যেখানে নুসরাতের পরিবারকে দোষারোপ করা হয়েছে। এসপি ওসিকে বাঁচানোর জন্য যে চিঠি দিয়েছেন, তা অত্যন্ত ন্যাক্কারজনক। সার্বিক বিষয়ে পর্যবেক্ষণে এটা স্পষ্ট যে, এ হত্যাকা-টি অনেক সুপরিকল্পিত এবং অনেক অপরাধীকে বাঁচানোর চেষ্টা এখনো চলছে।
এখন পর্যন্ত উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি রুহুল আমিন, ওসি মোয়াজ্জেমসহ অনেক অপরাধীকে গ্রেফতার করা হয়নি। তাই যৌন নিপীড়নবিরোধী শিক্ষার্থীজোট এ কর্মসূচির ডাক দিয়েছে। পরবর্তী কর্মসূচীর ঘোষণা দিয়ে তিনি বলেন, আমরা শীঘ্রই ঢাকা-সেনাগাজী রোড মার্চ কর্মসূচি পালন করবো। পর্যায়ক্রমে দেশব্যাপী ধর্ষণবিরোধী এই রোড মার্চ ও র্যালী চলবে বলেও জানান তিনি।