১৬ নভেম্বর ২০২৪, ১ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ১৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

ভারতীয়রা বাংলাদেশের পতাকা ছিনিয়ে নেয়ায় শুরু হয় হাতাহাতি

- সংগৃহীত

খেলায় হার-জিত আছে। এক দল হারবে, আরেক দল জিতবে এটাই স্বাভাবিক। আর ক্রিকেটকে বলা হয় ভদ্রলোকের খেলা। এখানে ট্রফি হাতছাড়া হলেও মেজাজ গরম করতে দেখা যায় না খেলোয়াড়দের, হতাশা যতই গ্রাস করুক। বরং খেলার পর দুই দলের করমর্দন খুব স্বাভাবিক ঘটনা।

তবে অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপের ফাইনাল হারের পর ভদ্রলোকের খেলায় ভদ্রতাটা বজায় রাখতে পারলো না ভারত। ম্যাচ শেষে চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশের খেলোয়াড়দের উদযাপন সহ্য করতে না পেরে মেজাজ হারিয়ে ভারতীয় একজন খেলোয়াড় বাংলাদেশের এক খেলোয়াড়ের কাছ থেকে কেড়ে নেন লাল-সবুজের পতাকা।

এরপরই হাতাহাতির ঘটনা ঘটে উভয় দলের খেলোয়াড়দের মধ্যে। তবে এসময় ক্যামেরা সেখান থেকে সরিয়ে নেয়া হয়। কিন্তু এই হাতাহাতির ঘটনার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়ে গেছে। এই ঘটনায় সাধারণ ভারতীয়রাসহ দেশটির সাবেক তারকারা বাংলাদেশের খেলোয়াড়দের সমালোচনা করছেন এবং নিজ দেশের খেলোয়াড়দের কোনো দোষই দেখছেন না।

এটা সত্য, ফাইনাল ম্যাচ হওয়ায় রোববার শুরু থেকেই মাঠে তুঙ্গে ছিল উত্তেজনার পারদ। তবে মাঠের ঘটনা তো খেলা চলার সময়ই মানায়, খেলা শেষে হয়ে যাওয়ার পর এর রেশ টেনে নিয়ে গেলে সেটাকে আর পেশাদারিত্ব বলা যায় না। ম্যাচের পর ভারতীয় খেলোয়াড়রা বোধ হয় সেটা ভুলে গিয়েছিলেন।

ফাইনাল ম্যাচ হওয়ায় রোববার সকাল থেকেই মাঠের এবং মাঠের বাইরে চলছিল বেশ উত্তেজনাপূর্ণ সময়। যা লক্ষ্য করা যায় বাংলাদেশের বোলিং ইনিংসের শুরু থেকেই। টাইগার পেসারদের তোপে ছিন্নভিন্ন ভারতীয় ব্যাটিং লাইনআপ। আর সেই সঙ্গে চলছে কণ্ঠ যুদ্ধও। মাঠে টাইগার পেসারদের চোখ রাঙানি আর ভারতীয় ব্যাটসম্যানদের অসহায় আত্মসমর্পণ যেন মেনে নিতে পারেনি ভারতীয় বোলাররা। আর তার ফলাফলেরও দেখা মিলল টাইগার ব্যাটসম্যানদের উইকেটে নামার পরেই। যা শেষ পর্যন্ত গড়ায় হাতাহাতির পর্যায়ে। তবে ম্যাচ শেষে তার জন্য বাংলাদেশের অধিনায়ক ক্ষমা চাইলেও ভারতের অধিনায়ক দোষ চাপিয়েছেন বাংলাদেশের ওপরেই।

ম্যাচের প্রথম থেকেই শুরু হওয়া উত্তেজনা চলে ম্যাচ জুড়ে, যার শেষটা গড়ায় বাংলাদেশের শিরোপা উদযাপনের সময়ে। নানা নাটকীয়তা শেষে তিন উইকেটের জয় পায় বাংলাদেশের। আর পরাজয় মেনেই মাঠ ছাড়তে হয় সর্বোচ্চ চারবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ভারতকে। রাকিবুলের রান নেবার সাথে সাথে ডাগ আউটে থাকা তাদের সতীর্থরা জয় উৎসবের জন্য মাঠে ছুটে আসেন। বাধ ভাঙা উল্লাস করতে করতে প্রদক্ষিণ করতে থাকে মাঠের চারদিক।

বিজয়ী দল জয় উদযাপন করছে এই দৃশ্য টেলিভিশনের পর্দায় দেখছিলেন ক্রিকেটপ্রেমীরা। কিন্তু হঠাৎ তাদের এই উল্লাস দেখানোর পরিবর্তে ক্যামেরা ঘুরিয়ে নেয়া হলো অন্য দিকে। বিষয়টা বেশ খটকা দেয় সাধারণের মনে। কেননা ক্যামেরা ঘুরিয়ে নেবার আগের কিছু দৃশ্য ছিল বেশ গুরুতর।

টিভির ক্যামেরায় দেখা যায় ম্যাচে হেরে ভারতীয় ক্রিকেটাররা বেশ ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে। এ সময় বাংলাদেশি খেলোয়াড়দের লক্ষ্য করে তারা খুব বাজে অঙ্গভঙ্গি করছিলেন। এমনকি সে সময় বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা কেড়ে নিতেও দেখা যায় ভারতীয় এক ক্রিকেটারকে। একইভাবে বাংলাদেশের খেলোয়াড়রাও বাদানুবাদে জড়িয়ে পড়েন। শেষে ম্যাচ অফিসিয়ালদের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়। জানা গেছে, ভারতীয় ক্রিকেটারদের কাছ থেকেই এই আচরণের সূত্রপাত।

খেলার মাঠে এমন অনাকাঙ্খিত ঘটনা চোখ এড়ায়নি সেখানে ঘটনাস্থলে উপস্থিত সাংবাদিকদেরও। আর তাই তো ম্যাচ শেষে সাংবাদিক সম্মেলনে দুই দেশের দুই অধিনায়কের কাছেই এই বিষয়ে প্রশ্ন, - ‘মাঠের মধ্যে কেন এমন ঘটনা ঘটেছে?’

আর সেখানেই দুই দলের দুই অধিনায়কের মধ্যে ব্যবধানের দেখা মেলে। টাইগার অধিনায়ক এবং ফাইনালের ম্যান অব দ্য ম্যাচ আকবর আলী এমন ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করলেও পরাজিত ভারতীয় অধিনায়ক প্রিয়াম গ্র্যাগ পুরো দায়টা চাপিয়ে দেয় বাংলাদেশের ওপর। তার কথায়, ভারতীয়রা কিছু জানে না, বোঝেও না! কিন্তু টিভি ক্যামেরায় সরাসরি দেখা যায় যে- ভারতের ক্রিকেটাররাই বাংলাদেশের পতাকা কেড়ে নেয়।

প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়ন হয়েছে বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ দল, তাদের উদযাপন তো বাধভাঙা হবেই। কিন্তু ভারতীয় খেলোয়াড়রা সেটা মেনে নিতে পারেননি। মেজাজ হারিয়ে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা কেড়ে নেন এক খেলোয়াড়। ম্যাচের পরপরই ভারতীয়রা বাংলাদেশের খেলোয়াড়দের সাথে ভদ্রতাসূচক করমর্দনও করেননি। পরে অবশ্য পরিস্থিতি ঠান্ডা হলে আনুষ্ঠানিকতা মেনে করমর্দন করেন তারা।


আরো সংবাদ



premium cement