ভুল চিকিৎসায় প্রসূতি মা ও নবজাতকের মৃত্যুর অভিযোগ
- এম এ করিম, সরাইল (ব্রাহ্মণবাড়িয়া)
- ০৬ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ১৮:৪৭
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইলে ভূয়া ও হাতুড়ে এক গাইনি চিকিৎসকের ভুল চিকিৎসায় প্রসূতি মা ও নবজাতকের মৃত্যুর অভিযোগ পাওয়া গেছে। বৃহস্পতিবার (৫ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় সরাইল উপজেলা ৫০ শয্যা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সংলগ্ন উচালিয়াপাড়া এলাকায় ভূয়া কথিত গাইনি চিকিৎসক মোছা: সালেহা বেগমের ভাড়া বাসায় ভুল চিকিৎসাধীন অবস্থায় মোছা: স্বপ্না আক্তার (২০) নামে ওই প্রসূতি মা ও তার সন্তানের মৃত্যু হয়েছে বলে নিহতের স্বজনরা নিশ্চিত করেছন।
নিহত প্রসূতি মা স্বপ্না আক্তার উপজেলার কালীকচ্ছ ইউনিয়নের নন্দীপাড়া গ্রামের কুতুব আলীর মেয়ে। তিনি সরাইল সরকারি কলেজের ছাত্রী ছিলেন। এক বছর আগে একই ইউনিয়নের ধর্মতীর্থ গ্রামের মো: নান্নু মিয়ার প্রবাসী ছেলে সফিকুল ইসলামের সাথে স্বপ্নার বিয়ে হয়।
এদিকে হাতুড়ে চিকিৎসকের ভুল চিকিৎসায় মা ও সন্তানের মৃত্যুর ঘটনাটি ধামাচাপা দিতে একটি প্রভাবশালী মহল সক্রিয় হয়ে উঠেছে বলে অভিযোগ রয়েছে। খবর পেয়ে স্থানীয় কয়েকজন সাংবাদিক বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৯টায় নিহত স্বপ্নার পিতার বাড়িতে গেলে স্বজনরা জানান, কিছুক্ষণ আগেই মা ও নবজাতক সন্তানের লাশ নিয়ে লোকজন ইউনিয়নের চাঁনপুর গ্রামের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়েছেন। সেই গ্রামেই কবরস্থানে মা ও নবজাতকের লাশ দাফন করা হবে।
নিহত স্বপ্নার ফুফু মোছা: সুজেরা বেগম সাংবাদিকদের জানান, বৃহস্পতিবার সকালে প্রসব বেদনা উঠলে সিজার করাতে স্বপ্নাকে আমরা প্রাইভেট হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হই। স্বপ্নার শাশুড়ির পীড়াপীড়িতে স্বপ্নাকে গাইনি চিকিৎসক সালেহা বেগমের বাসায় নেয়া হয়। সেখানে প্রথমে শরীরে স্যালাইন পুশ করে স্বপ্নাকে ফেলে রাখা হয়। দুপুরের দিকে বাচ্চার মাথা খানিকটা দেখা দিলে স্বপ্নার চিৎকারে ঘরের দেয়াল ভেঙে পড়ার উপক্রম হয়। আমরা ওইসময়ে স্বপ্নাকে সেই অবস্থায় প্রাইভেট হাসপাতালে এনে সিজার করতে অনেক অনুরোধ জানাই। তখন গাইনি চিকিৎসক সালেহা বেগম ও তার এক সহকারী আমাদের ওপর চড়াও হন। বিকেলে স্বপ্নার মৃত বাচ্চা প্রসব হয়।
তিনি আরো বলেন, তখন চিকিৎসক সালেহা বেগম সেই স্থানে হাত ঢুকিয়ে কি যেন কাটতেই স্বপ্নার অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ শুরু হয়। তখন স্বপ্না উচ্চস্বরে কাঁদতে কাঁদতে আমাকে বলে, ফুফু আমার বাবাকে দেখাও, আমার ছোট ভাই-বোনকে দেখাও আমি আর বাঁচবো না। এই কথাগুলো বলতে বলতে জিহ্বা বের করে দাঁত দিয়ে কামড়ে ধরে স্বপ্না অজ্ঞান হয়ে পড়ে। এই অবস্থায় হাসপাতালে নেয়ার পর কর্তব্যরত চিকিৎসক স্বপ্না ও তার নবজাতক সন্তানকে মৃত ঘোষণা করেন।
এদিকে বৃহস্পতিবার রাতেই উচালিয়াপাড়া গ্রাম এলাকায় অভিযুক্ত সালেহা বেগমের ভাড়া বাসায় এসে কাউকে পাওয়া যায়নি। প্রতিবেশী লোকজন জানান, সন্ধ্যায় এই বাসায় এক প্রসূতি মা ও নবজাতক শিশু মারা যাবার পর অভিযুক্ত সালেহা বেগমসহ অন্যরা বাড়ি ছেড়ে পালিয়েছে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, অভিযুক্ত সালেহা বেগমের স্বামী আবদুল কাইয়ূম সরাইল সরকারি হাসপাতালে প্যাথলজিক্যাল বিভাগে চাকরি করতেন। সেই সুবাদে সালেহা বেগম এ সরকারি হাসপাতালে গাইনি ওয়ার্ডে চুক্তিভিত্তিক ‘আয়া’ হিসেবে কাজ করতো। একসময় নিজেকে পরিপক্ক গাইনি বিশেষজ্ঞ ও পরে উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলের গ্রামের সহজ-সরল মানুষের কাছে নিজেকে গাইনি চিকিৎসক পরিচয় দিয়ে ভাড়া বাসায় প্রসূতি মায়েদের নানা চিকিৎসা দেয়া শুরু করেন সালেহা বেগম। তিনি দীর্ঘদিন যাবত এই অনৈতিক কাজ চালিয়ে আসছেন বলে জানা গেছে।
এদিকে নিহতের বাড়ি থেকে সাংবাদিকরা রাত পৌনে ১০টার দিকে মুঠোফোনে প্রসূতি মা ও তার সন্তানের ভুল চিকিৎসায় করুণ মৃত্যুর ঘটনাটি সরাইল থানার ওসি সাহাদাত হোসেন টিটোকে জানানো হলে তিনি নিহতের বাড়িতে পুলিশ পাঠাবেন বলে জানান।
পরে বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী অফিসার এ এস এম মোসাকে জানানো হলে তিনি বলেন, এই অন্যায় মেনে নেয়া যায় না। বিষয়টি আমি দেখছি।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা