পাসপোর্টের ছবি তুলতে গিয়ে রোহিঙ্গা তরুণী আটক
- হুমায়ুন কবির জুশান উখিয়া ( কক্সবাজার )
- ০৯ জুলাই ২০১৯, ১৪:৪৪, আপডেট: ০৯ জুলাই ২০১৯, ১৫:০৩
মিয়ানমার থেকে চরম নির্যাতনের শিকার হয়ে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গারা পরিচয় গোপন করে জাল জাতীয় পরিচয়পত্রের মাধ্যমে বাংলাদেশি পাসপোর্ট নিয়ে বিদেশ গমন করার অভিযোগ দীর্ঘদিনের। তাদের নানা অনৈতিক কাজের কারণে প্রবাসে বাংলাদেশের সুনাম ক্ষুন্ন হচ্ছে।ভাগ্য বদলের আশায় দালাল চক্রের সহায়তায় মধ্যপাচ্যসহ বিভিন্ন দেশে চলে যাচ্ছে হাজার হাজার শরণার্থী।
এ জন্য অতি গোপনে পুরুষদের পাশাপাশি মহিলারাও বাংলাদেশি পাসপোর্ট সংগ্রহের চেষ্টা চালাচ্ছে। গত এক বছরে উখিয়া কুতুপালং, বালুখালী ও টেকনাফের লেদা ক্যাম্পের বাসিন্দাদের অনেকেই বাংলাদেশি পাসপোর্ট সংগ্রহ করতে গিয়ে বিভিন্ন আঞ্চলিক অফিস থেকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে আটক হয়েছে। রোহিঙ্গাদের পাসপোর্ট তৈরি করে দেয়ার পেছনে দেশের বিভিন্ন পাসপোর্ট অফিসের অসাধু চক্র ও পুলিশের কতিপয় সদস্যের যোগসাজেস রয়েছে।দালাল চক্র ভুয়া জাতীয় পরিচয়পত্র বা জন্মসনদ সংগ্রহ করে বাংলাদেশি পরিচয়ে রোহিঙ্গাদের পাসপোর্ট পাওয়ার ব্যবস্থা করে দিচ্ছে।
এভাবে অসংখ্য রোহিঙ্গা দালালদের মধ্যস্থতায় বিদেশ পাড়ি জমিয়েছে বলে একাধিক গোয়েন্দা সংস্থার গোপন প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। গত জানুয়ারি মাসে সৌদি আরব থেকে বাংলাদেশি পাসপোর্টধারী ১৩ রোহিঙ্গাকে দেশে ফেরত পাঠানোর পর বিষয়টি নতুন করে নজর কেড়েছে সবার। এ অবস্থায় বিষয়টি নিয়ে অনুসন্ধানে নেমেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
সূত্র জানায়, পাসপোর্ট করার জন্য জাতীয় পরিচয়পত্র, স্থানীয় জনপ্রতিনিধির সনদ প্রয়োজন। পাসপোর্টের আবেদন করার পর পুলিশ সংশ্লিষ্ট আবেদনকারীর ঠিকানা ও তথ্য যাচাই-বাছাই করে। রোহিঙ্গারা কীভাবে এসব গুরুত্বপূর্ণ দলিল সংগ্রহ করছে,পুলিশি যাচাই-বাছাইয়ের পরও পাসপোর্ট পাচ্ছে এবং এর সঙ্গে কারা জড়িত, এবার সেই রহস্য উন্মোচনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে দুদক। জানা যায়, গত ৭ জানুয়ারি সৌদি সরকার সেই দেশ থেকে ১৩ জন বাংলাদেশি পাসপোর্টধারী রোহিঙ্গাকে ঢাকায় পাঠিয়ে দেয়। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা চেকপোষ্ট বসিয়ে রোহিঙ্গারা যাতে ক্যাম্পের বাইরে বের হতে না পারে সেজন্য তারা সাধ্যমত চেষ্টা করেন। কিন্তু এরপরও দালালও অসাধু চক্রের সহায়তায় তারা নানা কায়দায় ক্যাম্পের বাইরে বের হয়ে ছড়িয়ে পড়ার চেষ্টা করে।
পুলিশ প্রায় তাদের ধরে ক্যাম্পে ফেরত পাঠাচ্ছে। উখিয়া পালংখালী ইউনিয়নের অন্তর্ভুক্ত কুতুপালং ও বালুখালী রোহিঙ্গা ক্যাম্প। এই ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এম গফুর উদ্দিন চৌধুরী জানান, রোহিঙ্গারা এখন উন্মুক্ত। তারা প্রকাশ্যে চলাফেরা করেন। চলাচলে কোনো বাধা নেই।
এ ব্যাপারে উপজেলা ও পুলিশ প্রশাসনকে বারবার বলা হলেও কোনো উদ্যোগ নেই। রোহিঙ্গাদের এখন কক্সবাজার জেলাজুড়ে অবাধ বিচরণ। যা উদ্বেগজনক। এদিকে উখিয়ার কুতুপালং বালুখালী রোহিঙ্গা ক্যাম্পের একাধিক মাঝি (দলনেতা) জানান, ক্যাম্পে রোহিঙ্গাদের কোনো কাজ নেই। এ দেশে আসা রোহিঙ্গাদের মধ্যে অনেক সম্পদশালীও রয়েছেন। তারা কাজ করতে চান। এই সুযোগে মালেশিয়া, সৌদি আরব, কাতার, কুয়েত এবং শ্রীলঙ্কায় ভালো চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে দালাল চক্র হাতিয়ে নিচ্ছে লাখ লাখ টাকা।