সীমান্তে বৌদ্ধ উদ্বাস্তুদের মানবেতর জীবন, নতুন শিশুর জন্ম
- বান্দরবান সংবাদদাতা
- ১০ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ১৯:৫৫
বান্দরবানের রুমা সীমান্তের দুর্গম পাহাড়ে তীব্র শীত, খাদ্য ও বাসস্থান সংকটের মধ্যে মিয়ানমারের বৌদ্ধ উদ্বাস্তুরা মানবেতর জীবনযাপন করছে। স্থানীয়রা তাদের খাদ্য দিয়ে সহায়তা করছে বলে জানা গেছে। তবে এই কষ্টের মধ্যেই নতুন শিশুর জন্ম হয়েছে সেখানে।
সীমান্তের চাইক্ষাংপাড়ায় অস্থায়ী শিবিরে রাখাইন মায়ের কোল জুড়ে নতুন শিশু এলেও পায়নি কোনো চিকিৎসা। এমনকি নেই ঔষধও। অন্যদিকে ঐ শিবিরে এ রকম আরো ২ নারী রয়েছেন যারা খুব শিগগির সন্তান জন্ম দিবেন বলে জানা গেছে।
বর্তমানে চাইক্ষাংপাড়ায় মিয়ানমারের চীন রাজ্যের ১৬০ জন উদ্বাস্তু অবস্থান করছে। যদিও বিজিবি বলছে, নতুন করে আসা এসব বৌদ্ধ উদ্বাস্তুরা মিয়ানমার সীমান্তের ৭২নং পিলারের কাছে নোম্যান্স ল্যান্ডে অবস্থান করছে। গত সপ্তাহের মঙ্গলবার এসব বৌদ্ধ উদ্বাস্তু সীমান্তের নোম্যান্স ল্যান্ড থেকে বান্দরবানের রুমা উপজেলার রেমাক্রী প্রানসা ইউনিয়নের দুর্গম চাইক্ষাংপাড়ায় আশ্রয় নেয়। মিয়ানমারের চীন রাজ্যের পেলেতোয়া জেলার কান্তালান, খ্যমোয়াসহ বিভিন্ন জায়গা থেকে এসব উদ্বাস্তু বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করে।
উল্লেখ্য, মিয়ানমারের গত ডিসেম্বর থেকে স্বাধীনতাকামী আরাকান আর্মির সাথে সেনাবাহিনীর ব্যাপক সংঘর্ষ চলছে। প্রাণ বাঁচাতে বৌদ্ধ উদ্বাস্তুরা দুইদিন পায়ে হেটে দুর্গম পথ পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশ সীমান্তে আসে। তারা এখন মানবেতর জীবনযাপন করছে।
নতুন করে আশ্রয় নেয়া এসব বৌদ্ধ উদ্বাস্তরা দেশটির ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী খুমি, খ্য, বম ও রাখাইন সম্প্রদায়ের সদস্য। স্থানীয় বাংলাদেশীরা তাদের খাদ্য দিয়ে সহায়তা করছে বলে জানা গেছে। সীমান্তে যাতে নতুন করে আর কোনো উদ্বাস্তু অনুপ্রবেশ করতে না পারে সে জন্য টহল বাড়িয়ে নিরাপত্তা জোরদার করেছে বিজিবি।
এদিকে জাতিসঙ্ঘের উদ্বাস্তুবিষয়ক কমিশন ইউএনএইচসিআর ও রেডক্রসের সদস্যরা দুর্গম চাইক্ষ্যাংপাড়ায় যাওয়ার সিন্ধান্ত নিলেও পরে দুর্গম পথ ও নিরাপত্তার কারণে তারা সেখানে যেতে পারেননি। আশ্রয় নেয়া উদ্বাস্তুদের অনেকেই জানিয়েছেন মিয়ানমারে আরাকান অর্মির সাথে সেনাবাহিনীর যুদ্ধ শেষ হলে তারা নিজ জায়গায় ফিরে যাবেন।
এদিকে রোববার বান্দরবান জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত মাসিক আইনশৃঙ্খলা উন্নয়ন সমন্বয় সভায় পার্বত্য মন্ত্রনালয়ের প্রতিমন্ত্রী বীর বাহাদুর উমৈসিং এমপি বলেছেন, পার্বত্য চট্রগ্রামে রোহিঙ্গা বা বৌদ্ধ উদ্বাস্তু কেউই থাকতে পারবে না। কাউকেই এখানে জায়গা দেয়া হবে না। এটি সরকারের সিন্ধান্ত। মন্ত্রী বলেন, প্রথম দিকে বান্দরবান সীমান্ত দিয়ে যেসব রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ করেছে তাদের মানবিক কারণে সহায়তা দেয়া হয়েছে। কিন্তু পরে তাদের সরিয়ে উখিয়ার উদ্বাস্তু শিবিরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। এখন রুমা সীমান্ত দিয়ে যে সব শরনার্থী আসছে তাদেরও জায়গা দেয়া হবে না। মন্ত্রী নিরাপত্তা বাহিনী ও প্রশাসনকে এ বিষয়ে কঠোর হওয়ার নির্দেশ দেন।
বৈঠকে জেলা প্রশাসক দাউদুল ইসলাম জানান, বর্তমানে বৌদ্ধ উদ্বাস্তুরা নোম্যান্স ল্যান্ডে অবস্থান করছে। তাদের মিয়ানমারে ফিরে যেতে বিজিবির পক্ষ হতে বলা হয়েছে।
বৈঠকে উপস্থিত বলিপাড়া ৩৮ বিজিবির ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেঃ কর্নেল সানভির আহম্মেদ জানান, সীমান্ত দিয়ে যাতে কোনো উদ্বাস্তু অনুপ্রবেশ করতে না পারে সে জন্য নজরদারী বাড়ানো হয়েছে।